
ছবি: প্রতীকী
হঠাৎ শ্বাসকষ্ট একটি ভয়ংকর অভিজ্ঞতা হতে পারে। শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া মানে শরীরে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছাতে পারছে না, যা দ্রুত বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি করতে পারে। অনেক সময় অ্যাজমা, অ্যালার্জি, ধুলাবালি, ধোঁয়া, অতিরিক্ত শারীরিক পরিশ্রম, হৃদেরোগ, ফুসফুসের সমস্যা কিংবা হঠাৎ আতঙ্ক বা প্যানিক অ্যাটাকের কারণে শ্বাসকষ্ট শুরু হতে পারে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে শান্ত থাকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আতঙ্কিত হলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতি আরও বেড়ে যায় এবং শ্বাসকষ্ট বেড়ে যেতে পারে। তাই প্রথমেই গভীরভাবে মনকে শান্ত করার চেষ্টা করতে হবে এবং ধীরে ধীরে শ্বাস নেওয়া ও ছাড়ার দিকে মনোযোগ দিতে হবে।
প্রথম জরুরি করণীয় হচ্ছে রোগী বা আক্রান্ত ব্যক্তিকে বসানো। শ্বাসকষ্ট হলে শুয়ে থাকা অনেক সময় পরিস্থিতি খারাপ করে দেয়, কারণ ফুসফুসে পর্যাপ্ত বাতাস ঢুকতে বাধা পায়। তাই চেয়ারে বা বিছানায় সোজা হয়ে বসতে হবে এবং পিঠ সাপোর্ট দিয়ে রাখতে হবে। সামনে সামান্য ঝুঁকে বসা অবস্থায় শ্বাস নেওয়া তুলনামূলক সহজ হয়। এভাবে বসলে ফুসফুস প্রসারিত হওয়ার জন্য বাড়তি জায়গা পায় এবং শ্বাস নিতে কিছুটা স্বস্তি আসে।
দ্বিতীয় করণীয় হলো আশপাশে পরিষ্কার বাতাস নিশ্চিত করা। যদি ঘরের ভেতরে থাকেন, তবে জানালা-দরজা খুলে দিতে হবে যেন তাজা বাতাস ঢুকতে পারে। যদি ধোঁয়া, ধুলা, গ্যাস বা কোনো রাসায়নিক গন্ধের কারণে শ্বাসকষ্ট হয়, তবে দ্রুত সেই পরিবেশ থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সরিয়ে নিতে হবে। বাইরে খোলা জায়গায় নিয়ে গেলে অনেক সময় শ্বাস নেওয়া সহজ হয়ে যায়।
তৃতীয় করণীয় হচ্ছে ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রিত শ্বাস নেওয়ার কৌশল প্রয়োগ করা। অনেকেই হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত শ্বাস নিতে শুরু করেন, যা অক্সিজেনের বদলে কার্বন ডাই-অক্সাইড জমিয়ে ফেলে এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ করে। এ সময় মুখ দিয়ে ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়া এবং নাক দিয়ে গভীর শ্বাস নেওয়ার অভ্যাস খুব উপকারী। উদাহরণস্বরূপ, নাক দিয়ে ধীরে ২ সেকেন্ড শ্বাস নিয়ে মুখ দিয়ে ৪ সেকেন্ডে ছাড়ার চেষ্টা করা যেতে পারে। এতে শ্বাস-প্রশ্বাসের ছন্দ স্বাভাবিক হতে শুরু করে এবং ফুসফুসে বাতাস প্রবাহ সহজ হয়।
চতুর্থ করণীয় হলো যদি অ্যাজমা বা পরিচিত শ্বাসকষ্টের সমস্যা থাকে, তবে নির্ধারিত ইনহেলার বা ওষুধ দ্রুত ব্যবহার করা। অনেক অ্যাজমা রোগীর কাছে রেসকিউ ইনহেলার থাকে যা হঠাৎ শ্বাসকষ্টের সময় দ্রুত কাজ করে। তবে ওষুধ ব্যবহারের পরও যদি পরিস্থিতি উন্নত না হয়, তাহলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
পঞ্চম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ করণীয় হলো দ্রুত চিকিৎসা সহায়তা নেওয়া। শ্বাসকষ্ট কখনও কখনও হার্ট অ্যাটাক, নিউমোনিয়া, অ্যালার্জিক শক বা ফুসফুসে রক্ত জমাট বাঁধার মতো গুরুতর সমস্যার লক্ষণ হতে পারে। যদি শ্বাসকষ্টের সাথে বুক ব্যথা, ঠোঁট বা আঙুল নীল হয়ে যাওয়া, ঘাম, মাথা ঘোরা বা অজ্ঞান হওয়ার উপসর্গ থাকে, তবে দেরি না করে নিকটস্থ হাসপাতাল বা জরুরি বিভাগে যেতে হবে। এ সময় অ্যাম্বুলেন্স ডাকা বা কাছের কাউকে সাহায্যের জন্য বলা উচিত।
সবচেয়ে বড় কথা, শ্বাসকষ্ট হলে তা কখনোই অবহেলা করা যাবে না। অনেক সময় সামান্য মনে হলেও এর পেছনে গুরুতর কারণ থাকতে পারে। তাই যাদের নিয়মিত শ্বাসকষ্ট হয়, তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন, ওষুধ সেবন এবং সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। ধুলাবালি, ধোঁয়া, তীব্র গন্ধ বা ঠান্ডা বাতাস থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকা জরুরি। নিয়মিত ব্যায়াম, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং ফুসফুসের স্বাস্থ্য রক্ষায় সচেতনতা হঠাৎ শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি অনেকটাই কমাতে সাহায্য করে।
যত দ্রুত পরিস্থিতি বোঝা যায় এবং করণীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়, তত বেশি বিপদ এড়ানো সম্ভব। তাই নিজের এবং আশপাশের মানুষের জন্য এই বিষয়গুলো মনে রাখা জরুরি। হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হলে দ্রুত, শান্ত ও সঠিক পদক্ষেপই জীবন রক্ষা করতে পারে।
এম.কে.