ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

মাথাব্যথা উপশমে ঘরোয়া ও কার্যকরী উপায়

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১০ আগস্ট ২০২৫

মাথাব্যথা উপশমে ঘরোয়া ও কার্যকরী উপায়

ছ‌বি: প্রতীকী

মাথাব্যথা একটি সাধারণ সমস্যা, যা প্রায় প্রত্যেক মানুষ জীবনের কোনো না কোনো সময়ে অনুভব করে থাকে। এটি নানা কারণে হতে পারে—মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব, অতিরিক্ত কাজের চাপ, শরীরে পানির ঘাটতি, চোখের অতিরিক্ত ব্যবহার, কিংবা হরমোনের পরিবর্তন। অনেক সময় ঠান্ডা, সর্দি, গরম আবহাওয়া বা শব্দদূষণের কারণেও মাথাব্যথা দেখা দেয়। ওষুধ খাওয়া দ্রুত উপশমে সাহায্য করলেও, সবসময় ওষুধের উপর নির্ভর করা ভালো নয়। তাই প্রাচীনকাল থেকেই মানুষ মাথাব্যথা উপশমে বিভিন্ন ঘরোয়া উপায় ব্যবহার করে আসছে, যা কার্যকরী ও নিরাপদ।

মাথাব্যথা হলে প্রথমেই শান্ত পরিবেশে বিশ্রাম নেওয়া জরুরি। অনেক সময় অতিরিক্ত শব্দ বা উজ্জ্বল আলো মাথাব্যথাকে আরও বাড়িয়ে তোলে। তাই ঘরের পর্দা টেনে, আলো কমিয়ে ও শব্দ এড়িয়ে শুয়ে থাকা ভালো। চোখ বন্ধ করে কিছুক্ষণ গভীর শ্বাস নেওয়া এবং ধীরে ধীরে ছাড়ার মাধ্যমে শরীর ও মনকে শিথিল করা যায়। এই পদ্ধতিটি স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে, যা মাথাব্যথার অন্যতম কারণ।

শরীরে পানির ঘাটতি মাথাব্যথার একটি বড় কারণ হতে পারে। তাই মাথাব্যথা শুরু হলে পর্যাপ্ত পানি পান করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। গরমের সময় বা অতিরিক্ত পরিশ্রমের পরে শরীর থেকে ঘাম দিয়ে অনেক পানি বের হয়ে যায়, ফলে ডিহাইড্রেশন হয়। এতে মাথাব্যথা দেখা দিতে পারে। তাই প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করা অভ্যাসে পরিণত করা উচিত। এছাড়া নারকেলের পানি, লেবু পানি বা ফলের রসও কার্যকরী হতে পারে।

অনেক সময় কপালে বা মাথার পিছনে ঠান্ডা সেঁক মাথাব্যথা উপশমে সাহায্য করে। একটি পরিষ্কার কাপড় ঠান্ডা পানিতে ভিজিয়ে কপালে চেপে ধরলে স্নায়ু শান্ত হয় এবং ব্যথা কিছুটা কমে যায়। কেউ কেউ বরফের প্যাক ব্যবহার করেও স্বস্তি পান। অন্যদিকে, কিছু ক্ষেত্রে গরম সেঁকও উপকারী হতে পারে, বিশেষ করে যদি ব্যথাটি পেশি টান থেকে হয়ে থাকে। গরম পানির ব্যাগ বা উষ্ণ কাপড় দিয়ে ঘাড় ও কাঁধে সেঁক দিলে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে এবং পেশির টান কমে যায়।

হালকা মালিশ বা ম্যাসাজও মাথাব্যথা কমাতে দারুণভাবে কাজ করে। আঙুলের ডগা দিয়ে কপাল, কানের পাশ, ঘাড় ও কাঁধে হালকা চাপ দিয়ে বৃত্তাকারে ঘষলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায় এবং স্নায়ুর চাপ কমে। তেলের মধ্যে পুদিনা বা ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল মিশিয়ে মালিশ করলে আরও ভালো ফল পাওয়া যায়, কারণ এই সুগন্ধি তেল স্নায়ুকে শিথিল করে।

মাথাব্যথা উপশমে আদা একটি প্রাকৃতিক ওষুধের মতো কাজ করে। আদার মধ্যে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে, যা মাথাব্যথা কমাতে সাহায্য করে। এক চামচ আদার রস গরম পানিতে মিশিয়ে চা হিসেবে খেলে উপকার মেলে। আবার পুদিনা পাতার রসও অনেক সময় তাৎক্ষণিক আরাম দেয়।

যাদের চোখের ক্লান্তি বা অতিরিক্ত স্ক্রিন ব্যবহারজনিত কারণে মাথাব্যথা হয়, তারা নিয়মিত বিরতিতে চোখকে বিশ্রাম দেওয়া উচিত। কম্পিউটার বা মোবাইল ব্যবহারের সময় প্রতি ২০ মিনিটে অন্তত ২০ সেকেন্ডের জন্য দূরে তাকানো, চোখ বন্ধ রাখা বা হালকা ঠান্ডা পানি দিয়ে চোখ ধোয়া উপকারী হতে পারে।

পর্যাপ্ত ঘুমও মাথাব্যথা দূর করতে সাহায্য করে। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে শুয়ে পড়া এবং অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা গভীর ঘুম নিশ্চিত করা উচিত। ঘুমের অভাব শরীরে কর্টিসল হরমোনের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়, যা মাথাব্যথার ঝুঁকি বাড়ায়।

খাদ্যাভ্যাসেও সচেতন থাকা প্রয়োজন। অতিরিক্ত ঝাল, ভাজা-পোড়া খাবার বা প্রক্রিয়াজাত খাবার অনেক সময় মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। তাই পুষ্টিকর ও সুষম খাদ্যগ্রহণের মাধ্যমে শরীরকে সুস্থ রাখা উচিত। বিশেষ করে সবুজ শাকসবজি, ফলমূল, বাদাম ও পর্যাপ্ত পানি গ্রহণ মাথাব্যথা প্রতিরোধে সহায়ক।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। নিয়মিত যোগব্যায়াম, ধ্যান বা হালকা ব্যায়াম শরীর ও মনকে চাঙ্গা রাখে। এতে রক্ত সঞ্চালন ভালো হয়, হরমোনের ভারসাম্য বজায় থাকে এবং মাথাব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।

মাথাব্যথা কোনো রোগ নয় বরং এটি শরীরের দেওয়া একটি সংকেত যে কিছু সমস্যা হচ্ছে। তাই ঘরোয়া ও কার্যকরী উপায় অবলম্বন করে প্রথমে উপশমের চেষ্টা করা যেতে পারে। তবে মাথাব্যথা যদি দীর্ঘস্থায়ী হয়, খুব তীব্র হয় বা অন্য উপসর্গ যেমন ঝাপসা দেখা, মাথা ঘোরা বা বমি সঙ্গে থাকে, তবে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি। প্রাকৃতিক উপায়ে যত্ন নিলে এবং নিয়মিত সুস্থ জীবনযাপন বজায় রাখলে মাথাব্যথার ঝুঁকি অনেকাংশে কমে আসবে।

এম.কে.

×