ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১০ আগস্ট ২০২৫, ২৬ শ্রাবণ ১৪৩২

প্রতিদিন এক গ্লাস পানি কম খাওয়ার ভয়ঙ্কর ফল

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১০ আগস্ট ২০২৫

প্রতিদিন এক গ্লাস পানি কম খাওয়ার ভয়ঙ্কর ফল

ছ‌বি: প্রতীকী

আমরা সবাই জানি পানি আমাদের জীবনের জন্য কতটা প্রয়োজনীয়। কিন্তু অনেক সময় ব্যস্ততা, অবহেলা বা অভ্যাসের কারণে আমরা শরীরের প্রয়োজনীয় পানি ঠিকমতো পান করি না। হয়তো মনে হয়, এক গ্লাস কম খেলেই বা কি হবে! কিন্তু সত্যি কথা হলো, প্রতিদিন এক গ্লাস পানি কম খেলেও দীর্ঘমেয়াদে শরীরে এমন কিছু পরিবর্তন হতে শুরু করে যা চোখে দেখা যায় না, কিন্তু ভেতরে ভেতরে ক্ষতি করে যায়। পানি শুধু পিপাসা মেটানোর জন্য নয়, বরং শরীরের প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করার জন্য অপরিহার্য।

শরীরের প্রায় ৬০-৭০ শতাংশ অংশ পানি দিয়ে গঠিত। এই পানি আমাদের রক্ত, কোষ, টিস্যু, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, এমনকি হাড়ের ভেতরেও থাকে। পানি আমাদের দেহে অক্সিজেন ও পুষ্টি পৌঁছে দিতে সাহায্য করে, শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, হজম প্রক্রিয়া সচল রাখে এবং মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা ঠিক রাখে। এখন যদি আপনি প্রতিদিন এক গ্লাস পানি কম খান, তখন শরীরে ধীরে ধীরে পানিশূন্যতা তৈরি হতে শুরু করবে। প্রথমদিকে হয়তো তেমন কোনো বড় লক্ষণ বোঝা যাবে না, কিন্তু সময়ের সাথে এর প্রভাব মারাত্মক হয়ে উঠতে পারে।

সবচেয়ে আগে এর প্রভাব পড়বে আপনার রক্ত সঞ্চালনে। রক্তে পর্যাপ্ত পানি না থাকলে তা ঘন হয়ে যায়, ফলে হৃদপিণ্ডকে রক্ত পাম্প করতে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। দীর্ঘদিন ধরে এমন হলে হৃদযন্ত্র দুর্বল হয়ে যেতে পারে। একইসাথে রক্তে অক্সিজেন বহনের ক্ষমতা কমে গিয়ে আপনি সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়বেন। এই ক্লান্তি আপনার কাজের গতি কমিয়ে দেবে এবং মানসিকভাবে অস্থির করে তুলবে।

এরপর আসি কিডনির কথায়। কিডনি শরীরের বর্জ্য পদার্থ ফিল্টার করে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের করে দেয়। পর্যাপ্ত পানি না পেলে কিডনি ঠিকমতো কাজ করতে পারে না। ফলে শরীরে টক্সিন জমে যায় এবং কিডনি স্টোন হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। অনেক সময় প্রস্রাবের রঙ গাঢ় হয়ে যায়, যা স্পষ্ট সংকেত যে আপনার শরীরে পানি কম আছে। দীর্ঘমেয়াদে কিডনির স্থায়ী ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনাও থেকে যায়।

পানি কম খাওয়ার আরেকটি প্রভাব দেখা যায় ত্বকে। পানি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে এবং প্রাকৃতিক উজ্জ্বলতা ধরে রাখে। যখন আপনি নিয়মিত এক গ্লাস পানি কম খাবেন, তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে যাবে, লাবণ্য হারাবে এবং দ্রুত বয়সের ছাপ পড়বে। শুধু তাই নয়, ঠোঁট ফেটে যাওয়া, চুল ভেঙে যাওয়া বা চুল পড়ার হার বেড়ে যাওয়াও এর ফল হতে পারে।

এছাড়া হজম প্রক্রিয়াও ব্যাহত হয়। পানি খাবার ভাঙতে এবং পুষ্টি শোষণে সাহায্য করে। পানি কম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা বাড়ে। পেট ফাঁপা, গ্যাস এবং অ্যাসিডিটির সমস্যাও বেড়ে যেতে পারে। অনেক সময় মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনেরও মূল কারণ হয় পানিশূন্যতা। কারণ মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত পানি না পৌঁছালে স্নায়ুতন্ত্রে চাপ পড়ে এবং মাথায় ব্যথা শুরু হয়।

প্রতিদিন এক গ্লাস পানি কম খাওয়ার দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব শুধু শারীরিক নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও পড়ে। পানি মস্তিষ্কের কোষগুলিকে সক্রিয় রাখে। যখন পানি কম পান করা হয়, তখন মনোযোগে ঘাটতি, বিরক্তি, এমনকি হালকা বিষণ্নতার অনুভূতি হতে পারে। আপনি হয়তো বুঝতেও পারবেন না যে আপনার খারাপ মুড বা কর্মক্ষমতা হ্রাসের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে পানির অভাব।

আরও একটি বড় সমস্যা হলো শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যাঘাত। গরমের সময় শরীর ঘামের মাধ্যমে ঠান্ডা হয়, আর সেই ঘামের প্রধান উপাদান হলো পানি। পানি কম থাকলে শরীর ঠিকমতো ঠান্ডা হতে পারে না, ফলে হিট স্ট্রোক বা অতিরিক্ত গরম লাগার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

প্রতিদিন এক গ্লাস পানি কম খাওয়া কোনো তুচ্ছ ব্যাপার নয়। আজকে হয়তো আপনি পার্থক্য অনুভব করছেন না, কিন্তু কয়েক মাস বা বছরের মধ্যে এটি আপনার শরীরকে নীরবে ক্ষতিগ্রস্ত করবে। তাই পিপাসা লাগুক বা না লাগুক, নিয়ম করে পর্যাপ্ত পানি পান করার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। শরীর যখন সামান্য পানিশূন্য হয়ে পড়ে, তখনই এটি তার কর্মক্ষমতা হারাতে শুরু করে। মনে রাখবেন, পানি শুধু জীবন নয়, সুস্থ জীবনের অন্যতম মূল চাবিকাঠি। তাই প্রতিদিনের পানির পরিমাণে কোনো কমতি রাখবেন না, কারণ সেই এক গ্লাস কম পানিই একসময় বড় বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

এম.কে.

×