
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বযুদ্ধ শেষ, মানুষ পৌঁছে গেছে চাঁদে—কিন্তু এসবের কিছুই জানতো না রাশিয়ার সাইবেরিয়ার বরফঢাকা বনভূমিতে লুকিয়ে থাকা এক পরিবার। ধর্মীয় নিপীড়ন থেকে বাঁচতে তারা টানা ৪০ বছর গভীর বনের নির্জনতায় কাটিয়েছে।
১৯৭৮ সালে সোভিয়েত ভূতাত্ত্বিকরা সাইবেরিয়ার হাজার মাইল বিস্তৃত ‘তাইগা’ বনের গভীরে পাঁচ সদস্যের এই পরিবারকে আবিষ্কার করেন। ১৯৩৬ সালে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায় ওল্ড বিলিভার্স-এর সদস্য লিকপ পরিবার সোভিয়েত সরকারের ধর্মীয় দমননীতি থেকে পালিয়ে সেখানে আশ্রয় নিয়েছিল। নিকটতম জনবসতি থেকে ১৫০ মাইল দূরের এই এলাকায় আগে কখনো মানুষ বসবাস করছে—এমন তথ্য কর্তৃপক্ষের কাছেও ছিল না।
তাদের সভ্যতা থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনে জন্ম নেয় আরও দুই সন্তান। বিশ্বযুদ্ধ, মানুষের বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি—কিছুই তারা জানতো না। শহর সম্পর্কে তাদের ধারণা ছিল—এটি এমন এক জায়গা, যেখানে মানুষ উঁচু ভবনে গাদাগাদি করে থাকে। তাদের একমাত্র পড়ার উপকরণ ছিল প্রার্থনার বই ও পুরোনো পারিবারিক বাইবেল।
জীবিকা নির্বাহে তারা নির্ভর করতো রাইয়ের গুঁড়া, আলুর পিঠা ও সনবী বীজের ওপর। জুতার বদলে ব্যবহার করতো বার্চ গাছের ছাল দিয়ে তৈরি গ্যালস, পোশাক বারবার সেলাই করে পরতো এবং পরে বীজ থেকে জন্মানো সুতায় নতুন কাপড় বানাতো। রান্নার জন্য তারা শুরুতে দুটি ধাতব কেটলি ব্যবহার করলেও বহু বছর পর তা নষ্ট হয়ে গেলে বার্চের ছাল দিয়ে নতুন কেটলি বানাতো, যা আগুনে ব্যবহার করা যেত না।
লিকপ পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য আগাফিয়া জন্মগ্রহণ করেন ১৯৪৪ সালে এবং বর্তমানে তার বয়স ৮০ বছর। তিনি এখনো টাইগা বনে বসবাস করেন। ২০১৬ সালে চিকিৎসার জন্য শহরে আসলেও আধুনিক জীবনে স্থায়ীভাবে ফেরার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন।
এই পরিবার মানব ইতিহাসে এক অনন্য উদাহরণ হয়ে আছে—যেখানে দৃঢ় বিশ্বাস ও বেঁচে থাকার সংগ্রাম সভ্যতার সব প্রলোভনকে অগ্রাহ্য করেছে।
ছামিয়া