
ছবি: সংগৃহীত
গাজায় ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ইসরায়েলি সেনাদের বর্বরতার চিত্র এবার প্রকাশ্যে আনলেন মার্কিন সেনাবাহিনীর এক সাবেক ঠিকাদার। যুদ্ধবিধ্বস্ত ফিলিস্তিনে মানবিক সহায়তা প্রদানের নামে পরিচালিত ওই ত্রাণ কার্যক্রমের আড়ালে চলছিল নির্মম সহিংসতা—যা এতোদিন ছিল ক্যামেরার আড়ালে।
মার্কিন নিরাপত্তা সংস্থা ইউজি সলিউশনের হয়ে গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের নিরাপত্তা রক্ষায় কর্মরত ছিলেন আমেরিকান ঠিকাদার অন্থনি আগুইলার। সম্প্রতি বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি ভয়াবহ অভিযোগ তুলে ধরেন। জানান, খেলার ছলে ত্রাণপ্রার্থীদের ওপর গুলি চালাতো ইসরায়েলি সেনারা—এই কাজে জড়িত ছিল তার সাবেক সহকর্মীরাও।
অন্থনির ভাষায়, ‘ভিডিওতে আপনি অনবরত গুলি চলার শব্দ শুনবেন। ওটা ছিল আইডিএফ-এর (ইসরায়েলি সেনাবাহিনী) মেশিনগানের আওয়াজ। ২০০ মিটারেরও কম দূরত্ব থেকে তারা নিরস্ত্র ভিড়ের মধ্যে গুলি চালায়।’ এই দৃশ্য ক্যামেরায় ধারণ করার কথাও জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, ‘একজন সহকর্মী মাত্র ১০-১৫ ফুট দূর থেকে একজন ফিলিস্তিনির ওপর গুলি চালায়। গুলি লক্ষ্যভেদ করলে উল্লাস শুরু করে সে। পাশেই আরেকজন বলে ওঠে, ‘শাবাশ, তুমি পেরেছ!’
ত্রাণ কেন্দ্রগুলোতে ফিলিস্তিনিদের ঢুকতে বাধ্য করা হতো কাঁটাতারে ঘেরা সরু গলিপথ দিয়ে, যেখানে ছিল না পর্যাপ্ত স্থান বা নিরাপত্তা। উদ্দেশ্য ছিল—তাদের বিশৃঙ্খলার মধ্যে ঠেলে দেওয়া। পদদলিত হয়ে বহু মানুষ নিহত হয়েছে বলেও দাবি করেন অন্থনি।
তিনি আরও জানান, এই বিশৃঙ্খলার সুযোগেই ইসরায়েলি সেনা ও মার্কিন নিরাপত্তা কর্মীরা চালাতো টিয়ার গ্যাস, রবার বুলেট, স্টান গ্রেনেড ও পেপার স্প্রে। একদিকে চলে গুলিবর্ষণ, অন্যদিকে রাসায়নিক হামলা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে ইউজি সলিউশন। সংস্থাটির আইনজীবী জানিয়েছেন, ‘মিস্টার আগুইলারকে চাকরি থেকে বহিষ্কার করার পরই তিনি মিথ্যা অভিযোগ করছেন, যাতে চাকরি ফিরে পেতে পারেন।’
এর আগে ইসরায়েলি বাহিনীর বিরুদ্ধে গাজায় ত্রাণকেন্দ্রে নির্বিচারে গুলি চালানোর ভিডিও একাধিকবার সামনে এলেও সেনাবাহিনী তা অস্বীকার করে এসেছে। তবে এবার মার্কিন নাগরিক ও নিরাপত্তা ঠিকাদারের সরাসরি সাক্ষ্য সেই বর্বরতার চিত্র তুলে ধরল।
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী, গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে ত্রাণ নিতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি, যাদের অধিকাংশই নিহত হয়েছেন ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=V_8IQIuAwug
রাকিব