ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

জঙ্গলে নয়, বৃদ্ধার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকে দেড় হাজার বাদুড়

প্রকাশিত: ১৭:০০, ৭ আগস্ট ২০২৫

জঙ্গলে নয়, বৃদ্ধার ভাড়া করা ফ্ল্যাটে থাকে দেড় হাজার বাদুড়

ছবি: সংগৃহীত

বাদুরদের আমরা সাধারণত কোথায় দেখি? গাছের ফাঁকে, অন্ধকার গুহায়, ঝোপঝাড়ে কিংবা নির্জন জঙ্গলে। তাই তো? কিন্তু ভাবুন তো, যদি বলা হয়—একটা ফ্ল্যাটে বাস করে দেড় হাজারের বেশি বাদুর! শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও পোল্যান্ডের এক নারী ঠিক এমনটাই করছেন। চীনের সোঝে শহরের মাঝখানে তার ছোট্ট এক ফ্ল্যাটে থাকেন এই বৃদ্ধা, যিনি একাই লালন করছেন দেড় হাজারেরও বেশি বাদুর। আর এখানেই তিনি পরিচিতি পেয়েছেন 'বাদুরের মা' নামে।

ঘরের দরজা খুললেই ভেসে আসে এক অদ্ভুত গন্ধ—পোকার গুঁড়ো, ভেজা তোয়ালের সোঁদা ঘ্রাণ, আর বাদুরের ডানা ঝাপটার শব্দ। ফ্ল্যাটের ভেতর আলো কম, কিন্তু প্রতিটি কোণ উষ্ণতায় ভরা। প্রথম দর্শনে কেউ ভাবতে পারেন, এটি বুঝি কোনো পুরনো লাইব্রেরি কিংবা সংগ্রহশালা। কিন্তু না, এটি এই নারীর স্বপ্নের ঘর, যেখানে তার ‘সন্তান’ বাদুরেরা খুঁজে পেয়েছে আশ্রয় আর ভালোবাসা।

তাঁর যাত্রা শুরু হয়েছিল অনেকটা কাকতালীয়ভাবেই। কোনো একদিন, আহত আর ভীত একটি বাদুরকে নিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন তিনি। তারপর সেই একটিই একসময় রূপ নেয় বিশাল এক দলে। আহত, অসুস্থ কিংবা পরিত্যক্ত বাদুরগুলো একে একে ঠাঁই পেতে থাকে তার ফ্ল্যাটে। একসময় সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় দেড় হাজার।

তিনি প্রতিটি বাদুরকে সন্তানের মত করে ভালোবাসেন। নিয়মিত খাওয়ান সুজি মেশানো দুধ কিংবা পোকামাকড়ের গুঁড়ো খাবার। শীতে যখন ঠান্ডায় কাঁপে বাদুরেরা, তখন ওদের বুকের উপর রাখেন উষ্ণ তোয়ালে। অসুস্থ হলে নিজেই করেন চিকিৎসা, দেন ওষুধ। আর রাতে, দিনের আলো মিলিয়ে গেলে, তিনি ঘরের লাইট বন্ধ করে দেন। তখন শুরু হয় বাদুরদের জগত—ডানা ঝাপটানোর এক স্নিগ্ধ শব্দে মুখরিত হয়ে ওঠে ঘর। আর সেই মুহূর্তে তার চোখে ভেসে ওঠে কেবল ভালোবাসার আলো।

কারো কাছে হয়তো এমন জীবনধারা ভয়ঙ্কর, কারো কাছে বিরক্তিকর। কিন্তু তার কাছে প্রতিটি বাদুরই হৃদয়ের আশ্রয়। তার যত্ন আর ভালোবাসায় আজ দেড় হাজার বাদুর খুঁজে পেয়েছে নিরাপদ আশ্রয়। দায়িত্বের চেয়ে অনেক বেশি, এটি তার নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নিদর্শন। তাই তো তিনি শুধু এক নারী নন—তিনি ‘বাদুরের মা’।

শেখ ফরিদ

×