ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০৭ আগস্ট ২০২৫, ২৩ শ্রাবণ ১৪৩২

রৌমারীতে সেতু না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ!

রাজু মোস্তাফিজ, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৭:২৮, ৭ আগস্ট ২০২৫

রৌমারীতে সেতু না থাকায় সীমাহীন দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ!

ছবি: সংগৃহীত

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় একটি সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। প্রায় সময় দুর্ঘটনার কবলে জীবনহানিসহ সম্পদের ক্ষতির মুখে পড়ছে তিনটি ইউনিয়নের মানুষ। উপজেলা প্রশাসন বলছে সেতুর জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছরে কাজ শুরু হবে।

কুড়িগ্রামের নদী বিচ্ছিন্ন উপজেলা রৌমারীর একদিকে রাস্তার বেহাল দশা অপরদিকে একটি সেতুর অভাবে উপজেলার তিনটি ইউনিয়নের প্রায় ৩০টি গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগে প্রতিনিয়ত চলাচল করছে। সাহেবের আলগা, চরশৌলমারী এবং দাঁতভাঙ্গা ইউনিয়নগুলোর শান্তিরচর, খড়ানির চর, কাজাইকাটা, গাছ বাড়ি, চর কাজাইকাটা, আনন্দ বাজার, ফুলকার চর, সোনাপুর, গেন্দার আলগা, নামাজের চর, খেয়ারচর, ডিগ্রীরচর, বাংলা বাজার, চর ইটালুকান্দা, লাউবাড়ি, উত্তর নামাজের চর, জাহাজের আলগা, দই খাওয়ার চর, হবিগঞ্জ, ফুলকার চরের বাসিন্দাসহ অর্ধলক্ষাধিক মানুষের চলাচলে চরম দুভোর্গের সৃষ্টি হয়েছে। এসব অঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে কৃষকেরা, বেড়েছে বাল্যবিবাহসহ নানা অপরাধ।

স্থানীয় বাসিন্দা সোহেল রানা, মর্জিনা বেগম, মজিবর, সমশের আলীসহ অনেকে জানান, উপজেলার হলহলিয়া নদীর উপর একটি সেতু না থাকায় দুর্ভোগে বছরের পর বছর ধরে চর শৌলমারী, সাহেবের আলগা এবং দাতঁভাঙ্গা ইউনিয়নের মানুষ চলাচল করে আসছে। গ্রামবাসীরা জানান, ‘প্রত্যন্ত এলাকার অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা হওয়ায় সীমাহীন কষ্টে আছি আমরা। অনেক আন্দোলন করেও লাভ হয়নি। অথচ জনপ্রতিনিধিদের শুধু ভোটের সময় দেখা মিললেও পরে আর তাদের দেখা মিলে না।’

এলাকাবাসীর উদ্যোগে চারশত ফুট দৈর্ঘ্যের একটি বাশের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন হাজারো মানুষের চলাচল করছে এই সাঁকো দিয়ে। বর্ষা মৌসুমে কর্দামাক্ত পথে সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয় দরিদ্রপীড়িত এই জনপদের মানুষকে। উপজেলার সাথে যোগাযোগের একমাত্র পথে প্রতিদিনই দুর্ঘটনার শিকার ও ক্ষতির মুখে পড়ছেন পথচারীরা। বেশি কষ্টে পড়তে হয় গর্ভবতী নারীসহ অসুস্থ রোগী, শিশু এবং বয়স্কদের।

সেতু এবং রাস্তার অভাবে তিনটি ইউনিয়নের মানুষদের সারাবছর দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে এই কষ্ঠ আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়। বিভিন্ন সময় নির্বাচনের আগে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের নেতারা একাধিকবার নদীর উপর সেতু নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। ফলে স্বাধীনতার ৫৪ বছরেও দুর্ভোগ ঘোচেনি ৩০ গ্রামের অর্ধলক্ষাধিক মানুষের।

সেতু এবং রাস্তার সমস্যা সমাধান হলে জেলা শহরের সাথে রৌমারী উপজেলার মানুষ মাত্র আড়াই থেকে তিন ঘন্টায় যাতায়াত করতে পারবে। এতে করে সকল পেশাজীবী মানুষের সময়-অর্থ সাশ্রয় হবে। পাশাপাশি গ্রামগুলোর মানুষের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সংস্কৃতিসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের জন্য সেতু এবং রাস্তা নির্মাণ অত্যন্ত জরুরি বলে মনে করেন স্থানীয়রা।

রৌমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জল কুমার হালদার বলেন, কাজাইকাটা এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ৩ হাজার ৬৩০ মিটার চেইনেজ সেতুর জন্য জেলায় একটি প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে চলতি অর্থবছরে সেতুর কাজ শুরু হবে বলে জানান তিনি।

রাকিব

×