
বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় কোমল পানীয় বাজারে বড়সড় পরিবর্তন আনছে সৌদি আরব। বিশ্বে প্রথমবারের মতো খেজুর-ভিত্তিক কোমল পানীয় ‘মিলাফ কোলা’ ইতিমধ্যেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে তরুণ প্রজন্মের মধ্যে।
সাধারণত একটি ৩৩০ মিলিলিটারের কোকাকোলায় ৩৯ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত চিনি থাকে, যা দৈনিক নিরাপদ চিনি গ্রহণের সীমা ছাড়িয়ে যায়। কিন্তু মিলাফ কোলা তৈরি হয়েছে সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খেজুর ব্যবহার করে, যা ফ্রুকটোজ ও গ্লুকোজ সমৃদ্ধ। এই প্রাকৃতিক চিনি শরীর সহজে গ্রহণ করতে পারে এবং এটি হজম, ত্বক ও মস্তিষ্কের জন্য উপকারী।
বিশেষ করে আজওয়া খেজুর ব্যবহারের কারণে মিলাফ কোলায় রয়েছে পটাশিয়াম, আয়রন, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফাইবারের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান, যা সাধারণ কোমল পানীয়তে অনুপস্থিত।
উল্লেখযোগ্য যে, বিশ্বের খেজুর উৎপাদনের প্রায় ২০ শতাংশেরও বেশি আসে সৌদি আরব থেকে। ২০২৩ সালেই দেশটি প্রায় ১৩ লাখ টন খেজুর উৎপাদন করেছে, যার বড় একটি অংশ ইউরোপ, এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়েছে। এবার সেই খেজুর ব্যবহার করেই সৌদি আরব এক অনন্য উদ্ভাবনের পথ দেখালো।
যদিও মধ্যপ্রাচ্যে খেজুর দিয়ে শরবত বা সিরাপ তৈরি বহু পুরনো ঐতিহ্য, তবে সম্পূর্ণ বাণিজ্যিকভাবে খেজুর থেকে কোমল পানীয় তৈরির ঘটনা এই প্রথম।
মিলাফ কোলা নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আল মদিনা হেরিটেজ কোম্পানির সিইও বান্দার আল কাহতানি জানান, “এই পানীয় শুধু স্বাস্থ্যকরই নয়, বরং এটি সৌদি খেজুর চাষীদের জন্যও একটি নতুন বাজার তৈরি করবে।”
এই পণ্যটির উদ্বোধন করেন সৌদি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রহমান আল ফাদলী। এটি ছিল ‘ভিশন ২০৩০’-এর আওতায় নেওয়া অর্থনৈতিক বৈচিত্র্য এবং পরিবেশবান্ধব খাদ্য উৎপাদনের একটি বাস্তব উদাহরণ।
তেলনির্ভরতা কমিয়ে সৌদি সরকার এখন কৃষি ও খাদ্যনির্ভর অর্থনীতিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। খেজুর সৌদি আরবের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী ফল এবং রপ্তানি পণ্য এবার তা কোমল পানীয় হিসেবেও বিশ্ববাজারে জায়গা করে নিচ্ছে।
অন্যদিকে, স্বাস্থ্যকর পানীয়ের বাজারে জায়গা করে নিচ্ছে আফগানিস্তানের ডালিমের জুসও। বিশেষ করে কান্দাহার ও হেলমান্দ প্রদেশের গাঢ় রঙ ও তীব্র স্বাদের ডালিমের জুস স্বাস্থ্যগুণে ভরপুর।
একসময় যেসব মুসলিমপ্রধান দেশ কেবল ঐতিহ্য বা কৃষির ওপর নির্ভর করত, আজ তারা প্রযুক্তি, স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কৃষিনির্ভর উদ্ভাবনে বিশ্বমঞ্চে নিজের অবস্থান দৃঢ় করছে। এখনকার বাস্তবতা বলছে, মুসলিমবিশ্ব উন্নয়নের নতুন যুগে প্রবেশ করছে ঐতিহ্যকে স্বাস্থ্যকর উদ্ভাবনে রূপান্তরের সাহসিকতা নিয়েই।
Jahan