ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২১ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

আকাশের কিংবদন্তি: ইতিহাসের ৫টি সবচেয়ে সফল যুদ্ধবিমান

প্রকাশিত: ১৫:০৪, ২১ জুলাই ২০২৫

আকাশের কিংবদন্তি: ইতিহাসের ৫টি সবচেয়ে সফল যুদ্ধবিমান

ছবি:সংগৃহীত

বছরের পর বছর ধরে আকাশে রাজত্ব করেছে এমন কিছু যুদ্ধবিমান আছে, যেগুলোর নাম শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে গর্জে ওঠা ইঞ্জিন, চকিতে শত্রুকে ঘায়েল করা, আর একটি জাতির আকাশরক্ষা। গতি, আগ্রাসী নকশা কিংবা শুধু অস্ত্র দিয়ে নয়—যে বিমানগুলো বছরের পর বছর ধরে যুদ্ধ করেছে, বিভিন্ন দেশে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে এবং প্রতিটি প্রজন্মে থেকেছে প্রাসঙ্গিক—সেগুলোই আসলে সত্যিকারের সফল যুদ্ধবিমান।

চলুন, জেনে নিই এমন পাঁচটি ফাইটার জেটের গল্প, যারা শুধু প্রযুক্তি নয়—বলা যায় ইতিহাসের অংশ হয়ে গেছে।

F-16 ফাইটিং ফ্যালকন: আকাশযুদ্ধের কর্মঠ সৈনিক
প্রথম উড়েছিল ১৯৭৪ সালে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত, বিশ্বের ২৫টিরও বেশি দেশের আকাশে নির্ভরতার নাম হয়ে দাঁড়িয়েছে F-16। ছোট, চটপটে, আর সহজে রক্ষণাবেক্ষণযোগ্য হওয়ায় বহু দেশের জন্য এটি হয়েছে সেরা পছন্দ।

যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে দক্ষিণ কোরিয়া, ইসরায়েল কিংবা গ্রিস—F-16 প্রতিটি জায়গায় নিজেদের সক্ষমতা প্রমাণ করেছে। এমনকি আজকের আধুনিক F-16V সংস্করণেও রয়েছে আপডেটেড রাডার ও অ্যাভিয়নিক্স।

তবে যুদ্ধ মানেই শুধু প্রযুক্তি নয়—২০২৫ সালে ভারত-পাকিস্তান সীমান্তে সংঘর্ষে পাকিস্তানের F-16 ব্যবহার করেও কৌশলগত সুবিধা পায়নি, কারণ যুদ্ধ জয় নির্ভর করে দক্ষ পাইলট, প্রশিক্ষণ ও পরিকল্পনার উপর।

 MiG-29 ফুলক্রাম: সোভিয়েত ঘরানার টিকে থাকা চ্যাম্পিয়ন
১৯৮০-এর দশকে যখন ঠান্ডা যুদ্ধ তুঙ্গে, তখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আকাশে তুলে আনে MiG-29। এই বিমান যেন এক যুদ্ধক্ষেত্রের ট্যাংক—দুই ইঞ্জিন, শক্তপোক্ত শরীর আর দুর্দান্ত ডগফাইটিং ক্ষমতা।

ভারত, আলজেরিয়া, সার্বিয়া সহ ৩০টির বেশি দেশে এখনও এই ফাইটার ব্যবহার হচ্ছে। নতুন সংস্করণ MiG-29SMT প্রমাণ করেছে—একটা ভালো ডিজাইন যুগ পেরিয়েও কেমনভাবে কাজে আসে।

F-15 ঈগল: আকাশে অপরাজিত এক শিকারি
F-15 শুধুই যুদ্ধবিমান নয়, এটি এক জীবন্ত কিংবদন্তি। ১৯৭০-এর দশকে যখন এটি প্রথম উড়লো, তখন একটাই লক্ষ্য—আকাশে শত্রুর আধিপত্য ঠেকানো।

এর যুদ্ধরেকর্ড রীতিমতো চমকে দেওয়ার মতো—১০০টির বেশি জয়, একটি পরাজয়ও নেই! পরবর্তী সংস্করণ F-15E Strike Eagle যোগ করল মাটিতে আঘাত হানার ক্ষমতা। আর আজকের F-15EX তো আধুনিক প্রযুক্তির এক বিস্ময়।

যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল, জাপান, সৌদি আরব—সব দেশই এখনো ঈগলের ওপর ভরসা করে।

F/A-18 হর্নেট: সমুদ্রতলের আকাশযোদ্ধা
যখন যুদ্ধ হয় সমুদ্রে, তখন লাগে এমন একটি বিমান, যা ছোট ডেক থেকে উড়তে পারে, লবণাক্ত হাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে দীর্ঘসময় টিকে থাকতে পারে। ঠিক সেই জায়গা থেকেই জন্ম হয় F/A-18 হর্নেটের।

১৯৮০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীতে যুক্ত হওয়া এই বিমান এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়া, কানাডার মতো দেশেও ব্যবহৃত হচ্ছে।

আর সুপার হর্নেট সংস্করণে যোগ হয়েছে বাড়তি রেঞ্জ, বড় অস্ত্রবহন ক্ষমতা, আরও উন্নত সেন্সর। এটা এক কথায় "বিশ্বস্ত সৈনিক"।

Su-27 ফ্ল্যাঙ্কার: রাশিয়ার আকাশের কবি
Su-27 যেন এক শক্তি আর শৈল্পিকতার মেলবন্ধন। ১৯৮০-এর দশকে এটি যখন সোভিয়েত বাহিনীতে যুক্ত হয়, তখন থেকেই পশ্চিমাদের চমকে দিয়েছিল এর ক্ষমতা।

‘কোবরা মুভ’ নামের বিখ্যাত অ্যারোবেটিক কৌশল, বিশাল রেঞ্জ ও ভয়ংকর অস্ত্র—সব মিলিয়ে এক বিশাল মাপের ফাইটার। এই ফ্ল্যাঙ্কার পরিবারে রয়েছে Su-30, Su-33, Su-35 এর মতো সব আধুনিক সংস্করণ।

ভারত, চীন, ভিয়েতনামের মতো দেশের আকাশে আজও এটি সক্রিয়।

একটি যুগের গল্প
এই পাঁচটি যুদ্ধবিমান আমাদের শুধু প্রযুক্তির উন্নতির গল্প বলে না, বলে সাহস, কৌশল আর দীর্ঘমেয়াদি বিশ্বস্ততার গল্প। আজ যখন ড্রোন আর স্টেলথ প্রযুক্তি ছড়িয়ে পড়েছে, তখনও এরা নিজেদের আধুনিকায়ন করে নতুন রূপে যুদ্ধক্ষেত্রে রয়ে গেছে।

F-16, MiG-29, F-15, F/A-18 আর Su-27—এরা শুধু মেশিন নয়, এগুলো প্রতিটি জাতির আত্মবিশ্বাসের প্রতীক। এই আকাশযোদ্ধারা প্রমাণ করেছে—সময় বদলালেও সত্যিকারের সাহসী প্রযুক্তি কখনও ছিটকে পড়ে না।
 

 

মারিয়া

×