
ছবিঃ সংগৃহীত
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে এফবিআই গ্রেপ্তার করছে—এমন একটি ভিডিও প্রকাশ করে আবারও বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম Truth Social-এ ভিডিওটি পোস্ট করে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোড়ন সৃষ্টি করেন তিনি।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, সাবেক প্রেসিডেন্ট ওবামা ওভাল অফিসে একটি প্রচারণামূলক বক্তব্য দিচ্ছেন—“প্রেসিডেন্টও আইনের ঊর্ধ্বে নয়”। এরপর একে একে ন্যান্সি পলোসি, এলিজাবেথ ওয়ারেন, জো বাইডেনসহ আরও অনেক মার্কিন রাজনীতিবিদের মুখেও একই বক্তব্য তুলে ধরা হয়। ঠিক এর পরই ক্লাউন মুখোশ পরা একটি 'পেপ দ্য ফ্রগ' মিম চরিত্র ভিডিওটিতে আবির্ভূত হয়ে এই বক্তব্যগুলোর ব্যঙ্গ করে হাস্যকর আওয়াজ তোলে।
পরবর্তী দৃশ্যে দেখা যায়, ওভাল অফিসে ওবামা ও ট্রাম্প পাশাপাশি বসা অবস্থায় রয়েছেন এবং কিছুক্ষণ পর এফবিআই এজেন্টরা এসে ওবামাকে হাতকড়া পরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্প তখন পেছনে বসে মুচকি হাসছেন। ভিডিওটির শেষ অংশে দেখা যায়, কমলা কয়েদির পোশাকে বন্দি অবস্থায় ওবামা একটি কারাগারে দাঁড়িয়ে আছেন।
কিন্তু অবাক করার বিষয় হলো—এই পুরো ভিডিওটিই এআই (Artificial Intelligence) প্রযুক্তি ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে। যদিও ট্রাম্প ভিডিওটি শেয়ার করলেও কোথাও এটি এআই-নির্মিত বা কাল্পনিক বলে কোনো সতর্কবার্তা উল্লেখ করেননি। ফলে অনেকেই এটিকে বিভ্রান্তিকর ও বিপজ্জনক রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা বলেই মনে করছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ভিডিও শেয়ার করার সময়টিও কৌশলী। ট্রাম্প বর্তমানে ওবামার বিরুদ্ধে নির্বাচনী জালিয়াতির অভিযোগ তুলেছেন। তাঁর দাবি, ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে ওবামা প্রশাসন গোয়েন্দা তথ্য বিকৃত করে রাশিয়ার সঙ্গে ট্রাম্পের ভুয়া যোগসাজশের গল্প তৈরি করেছিল।
ট্রাম্পের এই দাবিকে সমর্থন করেছেন জাতীয় গোয়েন্দা বিভাগের পরিচালক তুলসী গ্যাবার্ড। তিনি বলেন, “শিগগিরই আমেরিকান জনগণ জানতে পারবে, কীভাবে ওবামা প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জন্য গোয়েন্দা তথ্যকে ব্যবহার করেছিলেন।”
ভিডিওটি ঘিরে Truth Social-এ প্রতিক্রিয়ার ঝড় বইছে। কেউ ওবামার এআই-নির্মিত 'মাগশট' ছবি পোস্ট করে লিখেছে, “এখন সময়!”, কেউ বলছে, “এটাই সবচেয়ে এপিক ট্রোল ভিডিও!”, আবার কেউ বলছে, “এ সবই Epstein Files থেকে নজর সরানোর চেষ্টা মাত্র।” অনেকে এটিকে গণতন্ত্রের জন্য হুমকি হিসেবেও বর্ণনা করেছেন।
এদিকে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন বর্তমান প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এ ধরনের মনগড়া ও বিভ্রান্তিকর ভিডিও শেয়ার করা অত্যন্ত দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং নজিরবিহীন। তাঁদের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেতে পারে।
প্রসঙ্গত, এআই-নির্ভর ফেক ভিডিও বা ‘ডিপফেইক’ কনটেন্ট দিনদিনই সামাজিক মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার করছে। কিন্তু রাষ্ট্রপ্রধানদের দ্বারা এমন ভিডিও ছড়ানো হলে সেটি কেবল বিভ্রান্তিই নয়, বরং রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবেও ব্যবহৃত হতে পারে—এমনই মত বিশ্লেষকদের।
ইমরান