ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২২ জুলাই ২০২৫, ৬ শ্রাবণ ১৪৩২

ময়লা আবর্জনায় ভরপুর খালের  জলাবদ্ধতা নিরসনে স্থানীয়রা উদ্যোগ নিয়েছে

মঠবাড়িয়ায় খালের ময়লা-আবর্জনা অপসারণে স্বেচ্ছাসেবকরা

নিজস্ব সংবাদদাতা, মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২১ জুলাই ২০২৫

মঠবাড়িয়ায় খালের ময়লা-আবর্জনা অপসারণে স্বেচ্ছাসেবকরা

মঠবাড়িয়া, পিরোজপুর ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করছেন এলাকাবাসী

আমন মৌসুমে জলাবদ্ধ পানি অপসারণ ও পরিবেশ দূষণে খালের ময়লা আবর্জনা ও বর্জ্য অপসারণে দিনমজুরসহ অর্ধশত কৃষকরা সেচ্ছায় খাল পরিষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন। মঠবাড়িয় সদর ইউনিয়নের একজন জনপ্রতিনিধি ও এলাকার নয়/দশ জন সমাজ সেবকের উদ্যোগে গত তিনদিন ধরে মঠবাড়িয়া-ধানীসাফা প্রবহমান খালের ৯ কিলোমিটারের ৪ কিলোমিটার জুড়ে বেসরকারি ক্লিনিক হাসপাতালের বর্জ্য, খালের কচুরিপানা ও পৌর শহরের ব্যবসায়ী ও পৌরবাসীর ফেলা ময়লা আবর্জনা পরিষ্কার করে দারুণ প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
স্থানীয়রা এ খালে মরা হাঁস মুরগি, গবাদী পশুর ফার্মের মল মূত্র, বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতারের বর্জ্য এবং ময়লা আবর্জনা ফেলে স্থায়ী জলাবদ্ধতায় রূপ নিয়েছে। এ খালটি কৃষক ও স্থানীয়দের মরণফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিনিয়ত খালের পানি হতে দুর্গন্ধ ছড়ানোয় দুটি সরকারি প্রাথমিক, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও দু’টি দাখিল মাদ্রাসার সহ¯্রাধিক শিক্ষার্থী স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে। অন্যদিকে দীর্ঘদিন ধরে পৌর শহরে অপরিকল্পিত ¯øুইজগেট দিয়ে পানি দ্রæত অপসারণ না হওয়ার কারণে খালের জোয়ার ভাটা বন্ধ থাকায় উত্তর মঠবাড়িয়া, আঙ্গুলকাটা, চিত্রাপাতাকাটা, আন্ধারমানিক ফুলজুড়ি, আলগী পাতাকাটা গ্রামেসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রতি বর্ষা মৌসুমে অবিরাম বর্ষার অতিরিক্ত ৩/৪ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। চলতি আমন মৌসুমে এতে প্রায় এক হাজার একর জমির আমন বীজ  তলা নষ্ট হয়ে গেছে। এতে প্রায় ৬ গ্রামের প্রায় পাঁচ হাজার একর জমির আমন আবাদ না হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।  
সোমবার দুপুরে সরেজমিনে গেলে দেখা যায় প্রায় ৫০ জন পরিচ্ছন্নতা কর্মী (শ্রমিক) খালের পানিতে কচুরিপানার সঙ্গে অনটাইম প্লেট, গøাস বস্তাভর্তি হাসপাতালের পুশ করা স্যালইনসহ ক্লিনিকে ব্যবহার্য, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পৌরবাসীর ময়লা আবর্জনা নেট জাল দিয়ে তীরে এনে পরিস্কার করছে। পরিচ্ছন্ন কর্মী জাহাঙ্গীর হোসেন (৪০) বলেন-খাল ঘেঁষে একটি গবাদি পশুর গোবরসহ মল মূত্র খালে ফেলাসহ রাতের আঁধারে মরা হাস মুরগি ও বাসা বাড়ির যাবতীয় মলমূত্র নির্বিগ্নে রাতে অন্ধকারে খালে ফেলায় সর্বত্র দুগন্ধ ছড়াচ্ছে এবং তিনদিন ধরে এ পানিতে কাজ করায় পানি বাহিত চর্ম রোগ আক্রান্ত হয়েছি।

কৃষক সামছুল হক অভিযোগ করে বলেন, খালে আলগী বাজার পর্যন্ত ৫ কিমি জুড়ে ২ শতাধিক সরকারের নিষিদ্ধ ট্রেন জাল ও বাধা জালের কারণেও পানি দ্রæত অপসারণ না হয়ে স্থায়ী জলাবদ্ধতার রূপ নিয়েছে। আঙ্গুলকাটা গ্রামের কাশেম খানের ছেলে মোশারফ খান (৬৫) বলেন, পৌর শহরের নির্ধারিত ডাস্টবিনে না ফেলে  ব্যবসায়ীরা পলিথিন, ফলের কার্টন, ফোম ও প্লাস্টিকের অনটাইম সামগ্রীসহ শহরের বাসা-বাড়ির গৃহস্থলীর ময়লা আবর্জনা প্রকাশ্যে খালে ফেলায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই স্থায়ী জলা বদ্ধতার রূপ নেয়। গত ১৫ দিন আগে ৬ শতাংশ জমিতে এক মন আমন বজ বপন করলেও বীজ তলার ৩/৪ ফুট পানিতে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। যাতে তিনি আমন রোপন করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে শঙ্কিত রয়েছেন বলে মঠবাড়িয়া গ্রামের আ, লতিফ জমাদ্ধারের ছেলে কৃষক আলতাফ জমাদ্দার (৬০)।

অঙ্গুলকাটা গ্রামের কবির জমাদ্দার, শাহআলম জানান, শহরের ৮/১০টি বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতাল রয়েছে। যেখানে রাতে সিজারিয়ান অপারেশন শেষে পুশ করা ইনজেকশন, স্যালইনসহ অন্যান্য সামগ্রী বস্তা ভরে খালে ফেলে দেয়ার কারনে পানি চলাচল ব্যহত হচ্ছে।
মঠবাড়িয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়র্ডের ইউপি সদস্য মোজাম্মেল হক খান জানান, বর্ষা মৌসুমে আমন বীজতলা রক্ষা ও আমন চাষ বৃদ্দির জন্য খালের পানি দ্রæত অপসারন ও পরিবেশ রক্ষায় ৩০ জন শ্্রমিক প্রতিজন গড়ে ১ হাজার টাকা করে ও ২০জন স্বেচ্ছায় তিন দিন কাজ করে। এতে প্রায় এক লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। এ টাকা তিনিসহ স্থানীয় কতিপয় ধর্নাঢ্য ব্যক্তিরা সংগ্রহ করেছেন। তিনি আরও বলেন-বিষযটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করা হয়েছে।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর প্রশাসক আবদুল কাইউম বলেন, উদ্যোগটি প্রশংসনীয়। খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ ব্যপারে যতটুকু সহযোগিতা করা যায় তা করা হবে। তিনি আরও বলেন, খালে যাতে ময়লা আবর্জনা না ফেলে এজন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

প্যানেল মজি

×