
আফগান পুনর্বাসন প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য
আফগান পুনর্বাসন প্রকল্পের বিস্তারিত তথ্য জনসমক্ষে আসায় সামাজিক অস্থিরতার আশঙ্কায় উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে ব্রিটেন সরকার। বুধবার ওই প্রকল্প জনসমক্ষে এলে শেতাঙ্গ কমিউনিটিতে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে গত গ্রীষ্মে তিন শিশুকে হত্যার ঘটনাকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অভিবাসন বিরোধী সহিংস বিক্ষোভের সম্ভাব্য পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে মন্ত্রীরা জরুরি পদক্ষেপ নিচ্ছেন। খবর ইয়াহু নিউজের।
আশঙ্কার মূলে রয়েছে পূর্ববর্তী কনজারভেটিভ সরকারের অধীনে ব্যাপক তথ্য ফাঁসের ঘটনা। এর ফলে আফগান রি-লোকেশনস অ্যান্ড অ্যাসিস্ট্যান্স পলিসির (এআরএপি) অধীনে যুক্তরাজ্য বাহিনীকে সহায়তা করা হাজার হাজার আফগানের ব্যক্তিগত তথ্য ফাঁস হয়ে যায়। এই প্রকল্পটি আফগানিস্তানে ২০ বছরের সংঘাতের সময় ব্রিটিশ সামরিক অভিযানকে সমর্থনকারী ব্যক্তিদের যুক্তরাজ্যে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তৈরি করা হয়েছিল। প্রায় ৮০ হাজার থেকে এক লাখ ব্যক্তি তাদের পরিবারের সদস্যসহ এই তথ্য ফাঁসের শিকার হয়েছেন।
২০২৪ সালের জুনে বিচারকরা সতর্ক করেছিলেন যে, এই সংবেদনশীল তথ্য তালেবানের হাতে পড়লে হয়রানি, নির্যাতন বা মৃত্যুর মতো গুরুতর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। চলতি বছরের ১৫ জুলাই পর্যন্ত প্রায় সাড়ে চার হাজার মানুষ ওই প্রকল্পের মাধ্যমে হয় যুক্তরাজ্যে স্থানান্তরিত হয়েছেন অথবা আফগানিস্তান রেসপন্স রুটের (এআরআর) মাধ্যমে ট্রানজিটে রয়েছেন। এই প্রকল্পটি বিশেষত ডেটা ফাঁসের প্রতিক্রিয়ায় ২০২৪ সালের এপ্রিলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
এআরএপি স্কিমে ১ জুলাই থেকে নতুন আবেদন গ্রহণ বন্ধ রয়েছে, যদিও এর আগে প্রাপ্ত আবেদনগুলো এখনো প্রক্রিয়া করা হবে। আফগান সিটিজেনস রি-সেটেলমেন্ট স্কিমের (এসিআরসি) মেয়াদও শেষ হয়েছে, যা ২০২১ সাল থেকে ১২ হাজার ৮০০ জনেরও বেশি মানুষকে পুনর্বাসন দিয়েছে, যদিও এর মূল লক্ষ্য ছিল ২০ হাজার জন।
তাদের যুক্তরাজ্যে নিয়ে আসার জন্য ইতোমধ্যেই প্রায় ৪০ কোটি পাউন্ড খরচ হয়েছে এবং প্রকল্পটি শেষ হতে প্রায় ৮৫ কোটি পাউন্ড খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। যদিও প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় প্রাথমিকভাবে ডেটা ফাঁসের শিকার ছয় হাজার ৯০০ ব্যক্তির জন্য ৮০ কোটি পাউন্ডের আভাস দিয়েছিল। আদালতের নথি থেকে জানা যায় যে, সমস্ত আফগান পুনর্বাসনের মোট ব্যয় ৭০০ কোটি পাউন্ডে পৌঁছাতে পারে, যার বেশিরভাগই সংসদীয় নজরদারি এড়িয়ে গেছে।
উপরন্তু, সুপার-ইনজাংশন এবং ডেটা ফাঁসের সঙ্গে সম্পর্কিত আইনি ফি এবং ক্ষতিপূরণে আরও কয়েক কোটি পাউন্ড খরচ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। ডেটা ফাঁসের ঘটনায় কাউকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা হয়নি বা বরখাস্ত করা হয়নি বলে জানতে পেরেছে বাংলা ট্রিবিউন। জাস্টিস চেম্বারলেনের রায়ের মাধ্যমে মঙ্গলবার একটি নজিরবিহীন সুপার-ইনজাংশন, যা পূর্বে সংবাদ মাধ্যমগুলোকে এই বিষয়ে রিপোর্ট করা থেকে বিরত রেখেছিল, অবশেষে তুলে নেওয়া হয়েছে। তিনি এর আগে সতর্ক করেছিলেন যে, এই গোপনীয়তা কার্যকরভাবে ব্রিটিশ গণতন্ত্রকে ‘ঠান্ডা ঘরে’ রেখে দিয়েছে।
৪ জুলাই প্রচারিত এবং দ্য টেলিগ্রাফের যাচাইকৃত একটি হোয়াইটহল ব্রিফিং নোটে, সরকারি বিভাগগুলোকে সম্ভাব্য সহিংস জনবিক্ষোভের বিষয়ে স্পষ্টভাবে সতর্ক করা হয়েছিল, যেখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে জনসাধারণের বিশৃঙ্খলার যে কোনো ঝুঁকি প্রশমিত করতে এবং সরকারের অন্যান্য সহকর্মীদের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়েছিল। সামাজিক অসন্তোষের কারণগুলোর মধ্যে অর্থনৈতিক নৈরাশ্য এবং জীবনযাত্রার ব্যয় সংকটও রয়েছে, যেখানে ধীর অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান শিল্প শক্তি খরচ এবং সাধারণ আর্থিক চাপ নিয়ে হতাশা বিরাজ করছে।
যদিও কোনো একক গোষ্ঠী ব্যাপক দাঙ্গা সংঘটিত করে না, তবে গত গ্রীষ্মের অভিবাসন বিরোধী বিক্ষোভ উগ্র ডানপন্থি সংগঠনগুলোর প্রভাবকে তুলে ধরে। এই গোষ্ঠীগুলো হোয়াটসঅ্যাপ, টেলিগ্রাম এবং ফেসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহার করে সমাবেশ আয়োজন করে এবং তথ্য ছড়িয়ে দেয়, প্রায়শই বিদ্যমান অভিযোগ এবং ভুল তথ্যের সুযোগ নেয়।
ম্যানচেস্টার, লিডস এবং নিউক্যাসেলের আশপাশে এবং বোস্টনের মতো শহরগুলোতে সামাজিক সংহতির নিম্ন স্তরের অঞ্চলগুলোকে বিশৃঙ্খলার জন্য সম্ভাব্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই অঞ্চলগুলোতে দীর্ঘমেয়াদি বাসিন্দা এবং নতুন আগত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রায়শই তীব্র উত্তেজনা দেখা যায়।
প্যানেল হু