
খান ইউনিসের ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে টিয়ার গ্যাস ছোড়ার পর হুড়োহুড়ির মধ্যে পদদলিত হয়ে মারা যাওয়া এক ব্যক্তির লাশ নিয়ে যাওয়া হচ্ছে
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের একটি ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রে ভিড়ের মধ্যে পদদলিত হয়ে ২১ ফিলিস্তিনির মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও দখলদার ইসরাইল পরিচালিত গাজা মানবিক ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) একটি ত্রাণকেন্দ্রে এমন ঘটনা ঘটেছে। খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা ২১টি মরদেহ পেয়েছে। যারা কাঁদানে গ্যাসে দমবন্ধ ও চাপা পড়ে নিহত হয়েছেন।
এদিকে ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরাইলি হামলায় আরও ৬১ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে অন্তত দুজন ত্রাণপ্রার্থীও রয়েছেন। এর মধ্যেই ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য কাজ করা জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সতর্ক করে বলেছে, অবরুদ্ধ গাজায় শিশুদের মধ্যে অপুষ্টির হার বেড়েই চলেছে। খবর আলজাজিরার।
গাজার মিডিয়া অফিস জানিয়েছে, ত্রাণকেন্দ্রের সরু পথের গেট বন্ধ করে সেখানে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে জিএইচএসের নিরাপত্তা রক্ষীরা। এরপর আটকে পড়া এসব মানুষের মধ্যে কাঁদানে গ্যাস ও সরাসরি গুলি ছোড়ে তারা। সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা গেছে, নাসের হাসপাতালে একটি মালবাহী গাড়িতে করে ছয় বালকের মরদেহ আনা হয়েছে। তারা ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের বেড়ার সঙ্গে ছিল। অন্য মানুষের চাপায় পড়ে এই বালকেরা ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায়। ভিডিওতে এক ব্যক্তিকে বলতে শোনা যায়, তারা হলো শিশু। ত্রাণের জন্য মারা গেল, তাদের দোষ কী।
ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের প্রবেশদ্বারে কি হয়েছে। বিদেশিরা ত্রাণ বিতরণকেন্দ্রের এখানে সেখানে বেড়া তৈরি করেছে। এই বালকেরা সামনে গিয়েছিল। এরপর মানুষ এসে তাদের চাপা দেয়। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গত মে মাসের শেষ দিকে জিএইচএফের কার্যক্রম শুরুর পর থেকে গাজায় ত্রাণ পেতে গিয়ে অন্তত ৮৭৫ জন মারা গেছেন। এর আগে ফিলিস্তিনি সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, তাদের দলগুলো ভোর থেকে অন্তত ১৮ জন শহীদ ও ডজনখানেক আহতকে উদ্ধার করেছে, যাদের অধিকাংশই গাজার উত্তরাঞ্চলে ইসরাইলি বিমান হামলায় হতাহত হয়েছেন।
অন্যদিকে ইসরাইলের সামরিক বাহিনী গাজার উত্তরাঞ্চলের ১৬টি এলাকার ফিলিস্তিনিদের জোরপূর্বক স্থানান্তরের নির্দেশ জারি করেছে। এর মধ্যে জাবালিয়াও রয়েছে, যেখানে বাসিন্দারা আতঙ্কিত হয়ে পালাতে শুরু করেছেন। আলজাজিরার মোয়াত আল কাহলুত বলেন, মানুষ তাদের গাড়ি ও গাধা ব্যবহার করে এলাকা ছাড়ছে এবং সবাই অজানা গন্তব্যের দিকে যাচ্ছে। তারা জানে না কোথায় যাবে।
তিনি আরও জানান, পরিবহনের জন্যও তাদের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। কারণ এখান থেকে অন্য এলাকায় যাওয়ার মতো কোনো জ্বালানি নেই। তাই পরিস্থিতি অত্যন্ত বিশৃঙ্খল। এখানে বসবাসকারী সবাই আতঙ্কের মধ্যে আছেন। সিভিল ডিফেন্স সংস্থা অনুযায়ী, গাজা শহরের বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের তাবুতে ইসরাইলের হামলায় ছয়জন নিহত হয়েছেন।
এদিকে বুধবার আলাদাভাবে ইউএনআরডব্লিউএর গাজার স্বাস্থ্য দলগুলো সতর্ক করে বলেছে, গত চার মাসেরও বেশি সময় ধরে ইসরাইলি অবরোধ তীব্র হওয়ার পর থেকে অপুষ্টির হার বাড়ছে। ইউএনআরডব্লিউএর প্রধান জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি জানিয়েছেন, ২০২৪ সাল থেকে পরীক্ষা করা প্রতি ১০ জন শিশুর মধ্যে একজন অপুষ্টিতে ভুগছে। সংস্থাটি এক বিবৃতিতে গাজায় অপুষ্টিকে ইঞ্জিনিয়ারড এবং মানবসৃষ্ট বলে আখ্যায়িত করেছে।
প্যানেল হু