
ছবি: সংগৃহীত
আজ ভারতজুড়ে পালিত হচ্ছে সর্বাত্মক হরতাল। কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলোর ডাকে আয়োজিত এই ধর্মঘটে অংশ নিচ্ছেন প্রায় ২৫ কোটিরও বেশি শ্রমিক, কৃষক ও গ্রামীণ শ্রমজীবীরা। সংগঠিত ও অসংগঠিত— উভয় ক্ষেত্রের কর্মীরা এই আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন। বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনের পাশাপাশি কৃষি ও গ্রামীণ কর্মসংস্থানভিত্তিক সংগঠনগুলোর সক্রিয় সমর্থন থাকায় হরতাল আরও বিস্তৃত রূপ পেয়েছে।
এই ধর্মঘট মূলত নরেন্দ্র মোদী সরকারের শ্রম ও অর্থনৈতিক নীতির বিরোধিতা করে আয়োজিত। ট্রেড ইউনিয়নগুলোর অভিযোগ, সরকারের নীতিগুলো বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থ রক্ষা করলেও শ্রমিক, কৃষক এবং দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ক্ষতি করছে। নতুন শ্রমবিধিমালাকে কেন্দ্র করেই সবচেয়ে বেশি ক্ষোভ জমেছে। আন্দোলনকারীদের মতে, এই শ্রমবিধি শ্রমিকদের অধিকার হরণ করবে, কাজের সময় বাড়াবে, এবং ইউনিয়ন গঠন বা ধর্মঘট করার মতো সাংবিধানিক অধিকারকেও সংকুচিত করবে।
হরতালের পেছনে আরেকটি বড় কারণ হচ্ছে বেকারত্ব। ট্রেড ইউনিয়নগুলো অভিযোগ করেছে, সরকার অবসরপ্রাপ্ত কর্মীদের পুনঃনিয়োগে বেশি জোর দিচ্ছে, অথচ তরুণ প্রজন্মের জন্য চাকরির সুযোগ ক্রমেই সংকুচিত হচ্ছে। রেলওয়ে, খনি, শিক্ষা ও স্টিল খাতে এর বেশ কিছু উদাহরণ রয়েছে। যেখানে দেশের ৬৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী ৩৫ বছরের নিচে এবং ২০ থেকে ২৫ বছর বয়সীদের মধ্যেই সবচেয়ে বেশি বেকারত্ব, সেখানে অভিজ্ঞ অবসরপ্রাপ্তদের দিয়ে কাজ চালানো বর্তমান প্রজন্মের জন্য এক অশনিসঙ্কেত বলেই মনে করছেন আন্দোলনকারীরা।
এদিকে ধর্মঘটের ফলে দেশের বিভিন্ন জায়গায় জনপরিবহন ব্যবস্থা বিঘ্নিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদিও ব্যাংক ও সরকারি দপ্তর খোলা থাকার কথা, তবে কর্মীদের অংশগ্রহণের কারণে কোথাও কোথাও পরিষেবা ব্যাহত হতে পারে। রিজার্ভ ব্যাংকের তালিকাভুক্ত ছুটি না থাকায় শেয়ার বাজারে লেনদেন স্বাভাবিকভাবেই চলবে বলে জানানো হয়েছে। তবে কিছু এলাকায় স্কুল-কলেজেও উপস্থিতি কমতে পারে বা হঠাৎ করে ছুটি ঘোষণা হতে পারে, এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
শ্রমিক সংগঠনগুলো দাবি করছে, সরকারকে ১৭ দফা দাবি সম্বলিত একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সেখানে বেকারদের জন্য নতুন কর্মসংস্থান তৈরি, শহরাঞ্চলেও গ্রামীণ কর্মসংস্থানের আদলে কর্মসূচি চালু, এবং MGNREGA-র মজুরি ও কর্মদিবস বাড়ানোর দাবি রাখা হয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনো গঠনমূলক সাড়া মেলেনি।
এই ধরনের ধর্মঘট অবশ্য এবারই প্রথম নয়। ২০২০ সালের নভেম্বর, ২০২২ সালের মার্চ ও ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতেও দেশজুড়ে বিশাল ধর্মঘট হয়েছিল। প্রতিবারই সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিক ও কৃষকদের ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। এবারও হরতালের ব্যাপকতা ও অংশগ্রহণ দেখে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, মোদী সরকারের ওপর এক প্রবল চাপ তৈরি হয়েছে। এখন দেখার বিষয়, এই গণচাপ সরকার কতটা আমলে নেয়।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
এম.কে.