ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২

কেন ব্রিকসকে নিশানা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ৮ জুলাই ২০২৫

কেন ব্রিকসকে নিশানা করছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প?

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্ব রাজনীতির নতুন উত্তাপের কেন্দ্রবিন্দুতে আবারো যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি তিনি ঘোষণা দিয়েছেন, ব্রিকস জোটের "অ্যান্টি-আমেরিকান নীতির" সঙ্গে যারা একমত হবে, তাদের ওপর ১০ শতাংশ অতিরিক্ত ট্যারিফ আরোপ করা হবে।

রবিবার (৬ জুলাই) রাতে ট্রুথ সোশ্যাল-এ দেওয়া এক বার্তায় ট্রাম্প জানান, “কোনো ব্যতিক্রম হবে না।” যদিও তিনি সরাসরি কোনো নীতির কথা উল্লেখ করেননি, তবে স্পষ্টতই তার লক্ষ্য ছিল ডলারকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের কেন্দ্রীয় মুদ্রা হিসেবে সরানোর ব্রিকসের প্রচেষ্টা।

ছয় মাস আগে তিনি হুমকি দিয়েছিলেন, ডলার বাদ দিয়ে বিকল্প চালু হলে ১০০ শতাংশ ট্যারিফ বসানো হবে। কিন্তু এই হুমকি উল্টো ফল দেয়। ব্রিকস সদস্যরা স্থানীয় লেনদেন ব্যবস্থায় অগ্রসর হয় এবং পারস্পরিক বিনিয়োগের জন্য নতুন পথ তৈরি করে।

এর আগে রাশিয়া বিশ্বব্যাপী ডলারের প্রভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় ট্রাম্প বলেছিলেন, “ডলারের জায়গা নিতে চাইলে ট্যারিফকে হ্যালো বলুন, আমেরিকাকে গুডবাই!”

ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভা ট্রাম্পের বক্তব্যকে “দায়িত্বজ্ঞানহীন ও ভুল সিদ্ধান্ত” হিসেবে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, “আমরা কোনো সম্রাট চাই না, আমরা সার্বভৌম দেশ।” পাশাপাশি তিনি জানান, ডলারের বিকল্প খুঁজে বের করার প্রক্রিয়া চলছে এবং এতে পিছপা হওয়ার সুযোগ নেই।

চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, বলিভিয়া এবং রাশিয়াও ট্রাম্পের এই হুমকির বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়। রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্ব বাণিজ্যে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করছে।

দুই দিনব্যাপী ব্রাসিল সম্মেলনের পরে ব্রিকস নেতারা এক বিবৃতিতে বলেন, "একতরফা ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ ব্যবস্থার ঊর্ধ্বগতি নিয়ে আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি, যা WTO নিয়মের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ।" ট্রাম্পের নাম সরাসরি না বললেও বিবৃতির ভাষায় তাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, "এই ট্যারিফ ব্যবস্থার কারণে বৈশ্বিক বাণিজ্য, সাপ্লাই চেইন এবং অর্থনৈতিক ভারসাম্য বিঘ্নিত হতে পারে।"

ব্রিকস-এর পূর্ণ সদস্য হিসেবে ইরানের অন্তর্ভুক্তি তাদের বিবৃতিতে প্রতিফলিত হয়েছে। ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারা ইরানের শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন বলে জানানো হয়। গাজার জনগণের উপর হামলারও নিন্দা জানানো হয়।

পশ্চিমা বিশ্লেষকদের অনেকেই ব্রিকসকে গুরুত্ব না দিলেও এটি এখন একটি শক্তিশালী গ্লোবাল প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে ডলারের বিকল্প তৈরি ও নীতি নির্ধারণে প্রভাব বিস্তার করছে ব্রিকস। 

২০০৯ সালে ব্রাজিল, রাশিয়া, ভারত ও চীন নিয়ে গঠিত এই সংগঠনে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা যুক্ত হয়। এরপর ২০২৪-২৫ সালে ইরান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়াসহ একাধিক দেশ এতে যোগ দেয়। আরও ১০টি দেশ পার্টনার স্ট্যাটাসে এবং ৫টি দেশ সদস্য হওয়ার জন্য অপেক্ষমাণ তালিকায় রয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, "পশ্চিমা প্রভাবশালী রাষ্ট্র বনাম উদীয়মান দক্ষিণের সংগ্রাম এখন স্পষ্ট হয়ে উঠছে, এবং ট্রাম্প এই পরিবর্তনের মূল প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাঁড়াচ্ছেন।"

মুমু ২

×