ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৬ জুলাই ২০২৫, ২২ আষাঢ় ১৪৩২

হামাসের ইতিবাচক সাড়ার পর সাংবাদিকদের ট্রাম্প

গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে আগামী সপ্তাহে

জনকণ্ঠ ডেস্ক

প্রকাশিত: ২৩:২৬, ৫ জুলাই ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি হতে পারে আগামী সপ্তাহে

গাজায় ইসরাইলি হামলায় আহত এক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে

যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত গাজায় যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব নিয়ে হামাস যে ইতিবাচক মনোভাব দেখিয়েছে তাকে ভালো বলে স্বাগত জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এয়ার ফোর্স ওয়ানে শনিবার সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধবিরতি আগামী সপ্তাহেই হয়ে যেতে পারে, তবে তিনি এখন আলোচনা কী অবস্থায় আছে সে সম্বন্ধে বিস্তারিত জানেন না। এদিকে ইসরাইলি বাহিনীর হামলায় গাজায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ১৩৮ জন নিহত এবং আহত হয়েছেন আরও ৬২৫ জন।

শনিবার এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি অনুসারে, ইসরাইলি বাহিনীর হামলার জেরে গাজায় গত ২১ মাসে মোট নিহতের সংখ্যা ৫৭ হাজার ২৬৮ জন এবং আহতের সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ১৭৩ জনে পৌঁছেছে। খবর বিবিসি ও আনাদোলু এজেন্সির।
রবিবার সাপ্তাহিক ছুটি হওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রে সোমবারকে সপ্তাহের শুরু ধরে নেওয়া হয়। ট্রাম্পের এ মন্তব্যের আগে হামাস জানিয়েছিল, তারা গাজায় যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি মুক্তি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া সর্বশেষ প্রস্তাবের ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারীদের কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাঠিয়েছে। বিবৃতিতে তারা বলেছে, যত দ্রুত সম্ভব আলোচনার নতুন পর্বে অংশ নিতে আমরা আন্তরিকভাবে প্রস্তুত। পরে ঊর্ধ্বতন এক ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা জানান, হামাস প্রস্তাবের রূপরেখার সঙ্গে একমত হলেও তারা সেখানে কিছু সংশোধনী আনার অনুরোধ করেছে।

২০ মাস ধরে চলা যুদ্ধ স্থায়ীভাবে বন্ধের আলোচনা যদি ব্যর্থও হয় তাও ইসরাইলি হামলা পুনরায় শুরু হবে না যুক্তরাষ্ট্রের কাছে এমন নিশ্চয়তা চেয়েছে তারা। এ প্রসঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে ইসরাইল বা যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে আগে এ ধরনের দাবি মানতে তেলআবিব ও ওয়াশিংটন অনীহা দেখিয়েছিল। প্রস্তাবে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ যে সংশোধনী চেয়েছে হামাস, সেটি হচ্ছে গাজা থেকে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহার।

মার্কিন প্রস্তাবে গাজার উত্তর ও দক্ষিণ অংশ থেকে ধাপে ধাপে ইসরাইলি সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে বলে আন্দাজ করা হচ্ছে। কিন্তু হামাস চাইছে, মার্চে আগের যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর আগে ইসরাইলি বাহিনী যেখানে ছিল, সেনারা এখনই যেন সেখানে ফিরে যায়। মার্চে যুদ্ধবিরতি ভেঙে পড়ার পর ইসরাইল হামাসের বিরুদ্ধে ফের অভিযানে নামে। স্থায়ী যুদ্ধবিরতির আলোচনা ব্যর্থ হলে আকাশ ও স্থলপথে ইসরাইলি অভিযান যেন ফের শুরু না হয় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে তার নিশ্চয়তাও চাইছে হামাস। 
মার্কিন প্রস্তাবে যুদ্ধবিরতির প্রথমদিন থেকে যুদ্ধ বন্ধে আলোচনা শুরুর কথা বলা হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। গত মঙ্গলবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছিলেন, ইসরাইল ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য প্রয়োজনীয় শর্তাবলি মেনে নিয়েছে। ওই যুদ্ধবিরতির মধ্যেই বিবদমান পক্ষগুলো যুদ্ধের ইতি টানতে কাজ করবে। তিনি হামাসকে তার ভাষায় ফাইনাল বা চূড়ান্ত প্রস্তাব মেনে নেওয়ার আহ্বান জানান এবং ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠীটিকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, তারা এর চেয়ে ভালো কিছু পাবে না। দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে।

নতুন এ প্রস্তাবে জীবিত ১০ জিম্মি ও মৃত ১৮ জিম্মির মরদেহের বিনিময়ে ইসরাইলি কারাগারে থাকা ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তির প্রতিশ্রুতি আছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জীবিত-মৃত মিলিয়ে গাজায় এখন ৫০ জিম্মি আছে বলে ধারণা। তার মধ্যে অন্তত ২০ জন জীবিত বলে জানিয়েছে তেলআবিব। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবে জাতিসংঘ এবং আন্তর্জাতিক রেড ক্রস কমিটির তত্ত্বাবধানে গাজায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণ সরবরাহে অনুমতি দেওয়ার কথাও আছে বলে জানা গেছে।

এই ত্রাণ কেবল জাতিসংঘ ও তার অংশীদাররাই সরবরাহ করতে পারবে এবং ইসরাইল পরিচালিত ও যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) বিতর্কিত ত্রাণ বিতরণ পদ্ধতি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে বলে হামাস দাবি জানিয়েছে। 
এদিকে গাজায় গত ২২ মাস ধরে চলা সামরিক আগ্রাসনকালে ভুল করে নিজেদের ছোড়া গুলিতে অন্তত ৩১ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায় ইসরাইলি আর্মি রেডিও। ইসরাইলি আর্মি রেডিওর প্রতিবেদন মতে, ২০২৩ সালের অক্টোবর মাসে গাজায় স্থল অভিযান শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪৪০ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ৭২ জন সেনা অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত দুর্ঘটনায় নিহত হন, যা গাজায় নিহত মোট সেনার প্রায় ১৬ শতাংশ। এছাড়া ফ্রেন্ডলি ফায়ার সেনাদের নিজেদের মধ্যে ভুলবশত ছোড়া গুলিতে নিহত হয়েছে ৩১ জন।

গোলাবারুদ সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় ২৩ জন, সাঁজোয়া যানের চাকায় পিষ্ট হয়ে ৭ জন এবং অজ্ঞাত গুলিবর্ষণের ঘটনায় নিহত হয়েছে আরও ৬ জন। ইসরাইলি আর্মি রেডিওর তথ্য মতে, গত ১৮ মার্চ যুদ্ধবিরতি চুক্তি ভঙ্গ করে গাজায় ফের সামরিক আগ্রাসন শুরু হওয়ার পর এখন পর্যন্ত ৩২ ইসরাইলি সেনা নিহত হয়েছে। এর মধ্যে ২ জন অভিযান পরিচালনা সংশ্লিষ্ট দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় তথা পড়ে গিয়ে বা সামরিক সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে নিহত হয়েছে আরও ৫ সেনা। 
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ভূখ-ে ঢুকে অতর্কিত হামলা চালায় গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী সশস্ত্র রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের যোদ্ধারা। এলোপাতাড়ি গুলি চালিয়ে ১ হাজার ২০০ জনকে হত্যার পাশাপাশি ২৫১ জনকে জিম্মি হিসেবে ধরে নিয়ে যায় তারা। হামাসের হামলার জবাব দিতে এবং জিম্মিদের মুক্ত করতে ওইদিন থেকেই গাজায় অভিযান শুরু করে ইসরাইলি বাহিনী।

১৫ মাসেরও বেশি সময় ধরে টানা অভিযান চালানোর পর যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যস্থতাকারী অন্যান্য দেশগুলোর চাপে বাধ্য হয়ে গত ১৯ জানুয়ারি গাজায় যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে ইসরাইল। কিন্তু বিরতির দুই মাস শেষ হওয়ার আগেই গত ১৮ মার্চ থেকে ফের গাজায় অভিযান শুরু করে আইডিএফ।

×