ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ: পাঁচটি ভয়ঙ্কর সম্ভাব্য পরিস্থিতি

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:৫২, ১৪ জুন ২০২৫

ইসরায়েল-ইরান সংঘর্ষ: পাঁচটি ভয়ঙ্কর সম্ভাব্য পরিস্থিতি

ছবি: সংগৃহীত

ইসরায়েল এবং ইরানের মধ্যে সাম্প্রতিক বিমান হামলা পাল্টা-হামলা মধ্যপ্রাচ্যে তীব্র উত্তেজনা তৈরি করেছে। এখন পর্যন্ত সংঘাত সীমিত থাকলেও ভবিষ্যতে এর ব্যাপক বিস্তারের আশঙ্কা রয়েছে। জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে উভয়পক্ষকে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানানো হলেও, সেই আহ্বান কতটা কার্যকর হবে তা অনিশ্চিত।

এই প্রতিবেদনে তুলে ধরা হলো ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধের সম্ভাব্য পাঁচটি ভয়ঙ্কর পরিণতি—

১. যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়া
ইরান মনে করছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ইসরায়েলের সাম্প্রতিক হামলায় অনুমোদন কিংবা পরোক্ষ সহযোগিতা দিয়েছে। এর ফল হিসেবে ইরান মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলা চালাতে পারে—বিশেষ করে ইরাকের বিশেষ বাহিনীর ক্যাম্প, উপসাগরীয় অঞ্চলের ঘাঁটি ও কূটনৈতিক মিশনগুলো।

ইরাকভিত্তিক ইরান-সমর্থিত মিলিশিয়াগুলো এখনও সক্রিয় ও সশস্ত্র। যদি কোনো মার্কিন নাগরিক তেলআবিব বা অন্য কোথাও নিহত হন, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র বাধ্য হয়ে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে নামতে পারে। এতে যুদ্ধ নতুন মাত্রায় পৌঁছাবে।

২. উপসাগরীয় দেশগুলোর টেনে পড়া
ইসরায়েলের ওপর সফল হামলা না করতে পারলে ইরান উপসাগরীয় অঞ্চলের "নরম লক্ষ্যবস্তু"—যেমন বিদ্যুৎকেন্দ্র, তেল শোধনাগার ইত্যাদি—লক্ষ্যবস্তু করতে পারে। অতীতেও ইরান বা তাদের হুতি মিত্র সৌদি আরব ও ইউএইতে হামলা চালিয়েছে।

এই দেশগুলোতে মার্কিন ঘাঁটি রয়েছে এবং তারা ইসরায়েলকেও পরোক্ষ সহায়তা করেছে। ইরান যদি তাদের ওপর হামলা চালায়, তাহলে এসব দেশও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন চেয়ে যুদ্ধের অংশ হয়ে উঠতে পারে।

৩. ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতা ধ্বংসে ব্যর্থতা
ইসরায়েল যদি ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করতে ব্যর্থ হয়—বিশেষ করে ফোর্দোর মতো গভীর ভূগর্ভস্থ ঘাঁটি—তাহলে বিপদ দ্বিগুণ হতে পারে।

ইরানের কাছে ইতোমধ্যে ৬০% সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের বড় মজুত রয়েছে, যা মাত্র এক ধাপ দূরে অস্ত্র-উপযোগী হয়ে উঠতে। ইসরায়েলের আঘাত হয়তো বিজ্ঞানীদের হত্যা করতে পারবে, কিন্তু প্রযুক্তিগত জ্ঞান নিশ্চিহ্ন করতে পারবে না। এই ব্যর্থতা ইরানকে আরও দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে উদ্বুদ্ধ করতে পারে।

৪. বিশ্বজুড়ে অর্থনৈতিক ধাক্কা
তেলের দাম ইতোমধ্যে বাড়ছে। যদি ইরান হরমুজ প্রণালী বন্ধ করে দেয়, তাহলে তেলের সরবরাহ বিপর্যস্ত হবে। হুতি বিদ্রোহীরা যদি আবার রেড সি-তে জাহাজে হামলা বাড়ায়, তাহলে বৈশ্বিক বাণিজ্য ও অর্থনীতি গভীর সঙ্কটে পড়বে।

বিশ্ব অর্থনীতি এমনিতেই মূল্যস্ফীতির ধাক্কায় ভুগছে। এই সংঘাত যদি দীর্ঘ হয়, তাহলে তা বিশ্বজুড়ে জীবিকার খরচ বাড়াবে এবং পুতিনের রাশিয়ার মতো দেশগুলো লাভবান হবে তেলের মূল্য বৃদ্ধিতে।

৫. ইরান সরকারের পতন এবং শূন্যতা তৈরি
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু পরোক্ষভাবে ইরানের শাসকগোষ্ঠীকে উৎখাতের ইঙ্গিত দিয়েছেন। তিনি ইরানিদের "গর্বিত জাতি" হিসেবে সম্বোধন করে বলেছেন, এই হামলা তাদের "মুক্তির পথ পরিষ্কার" করছে।
কিন্তু প্রশ্ন হলো—এই সরকারের পতনের পর কী হবে? ইরাকে, লিবিয়ায় সরকার পতনের পর কী ধরনের রক্তাক্ত বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল, তা আজও মনে আছে বিশ্ববাসীর।

এই যুদ্ধ কোথায় গিয়ে থামবে, তা নির্ভর করছে মূলত দুটি প্রশ্নের ওপর—

১. ইরান কতটা এবং কীভাবে পাল্টা আঘাত হানবে?
২. যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সংযত করতে কতটা সক্ষম হবে?

মুমু ২

×