ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ইরানে আগুন, ট্রাম্পের দ্বিধা: কে টানছে যুদ্ধের ঘন্টা?

প্রকাশিত: ১৬:৫৮, ১৩ জুন ২০২৫

ইরানে আগুন, ট্রাম্পের দ্বিধা: কে টানছে যুদ্ধের ঘন্টা?

মধ্যপ্রাচ্যে সর্বাত্মক যুদ্ধের আশঙ্কা আবার ঘনীভূত হলো। শুক্রবার সকালে ইসরায়েল যখন ইরানের ওপর বিমান হামলা চালায়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তখনো তা ঠেকাতে মরিয়া ছিলেন। “আমি চাই না তারা হামলায় যাক। কারণ সেটা পুরোটা নষ্ট করে দেবে,” বৃহস্পতিবার ট্রাম্প হোয়াইট হাউসে এক বক্তব্যে বলেন।

কিন্তু তাঁর প্রকাশ্য অনিচ্ছা সত্ত্বেও ইসরায়েল হামলা চালায়—যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা ছাড়াই। ফলে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কূটনৈতিক চেষ্টাগুলো এখন মারাত্মক এক সংকটে। বিশেষ করে এমন এক সময়, যখন তাঁর প্রধান দূত ওমান সফরের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ইরানের সঙ্গে পরবর্তী আলোচনা পর্বের জন্য।

এই হামলা শুধুই ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং ট্রাম্পের প্রশাসনের ভেতরও তৈরি করেছে বিভক্তি। রিপাবলিকান পার্টির অনেক সদস্য ইতোমধ্যেই ইসরায়েলের সমর্থনে সরব, যেমন সিনেটর লিন্ডসে গ্রাহাম “গেম অন” লিখে প্রকাশ্যে যুদ্ধের সুর চড়িয়েছেন। তবে ট্রাম্প নিজে তার দ্বিতীয় মেয়াদে বিদেশে সামরিক জড়িততায় বরাবরই সংযত অবস্থান নিয়েছেন।

হামলার পরপরই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প মার্কিন বাহিনীকে রক্ষায় পদক্ষেপ নিলেও, ইসরায়েলকে সরাসরি সামরিক সহায়তা দেবেন কি না—সে বিষয়ে কোনো ইঙ্গিত দেননি। বরং হোয়াইট হাউজ থেকে দেওয়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর এক বিবৃতিতে স্পষ্ট জানানো হয়, “এই হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ভূমিকা নেই। আমরা শুধু আমাদের বাহিনী রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রস্তুত।”

তিনি আরও বলেন, “ইসরায়েল আমাদের জানিয়েছে, এটি তাদের আত্মরক্ষামূলক পদক্ষেপ ছিল। কিন্তু আমি স্পষ্ট করে বলছি—ইরান যেন যুক্তরাষ্ট্র বা আমাদের কোনো স্বার্থকে লক্ষ্য না করে।”

এই বিবৃতিতে ইসরায়েলের প্রতি সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র যে সমর্থন জানায়, সেই ধরনের কোনো বক্তব্য ছিল না। বরং এতে বোঝানো হয়েছে—এটি ইসরায়েলের একতরফা সিদ্ধান্ত, এবং মার্কিন প্রশাসন এই সংঘাতে সরাসরি জড়াতে চায় না।

এর আগে হোয়াইট হাউজের ইস্ট রুমে ভাষণ দেওয়ার সময়ও ট্রাম্প ও তার কর্মকর্তারা জানতেন, ইসরায়েল যে কোনো মুহূর্তে হামলা চালাতে পারে। সেদিন রাতেই কংগ্রেসনাল পিকনিকে উপস্থিত থাকাকালে তিনি ওয়েস্ট উইংয়ে ফিরে যান এবং শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন।

যুদ্ধের ছায়ায় দাঁড়িয়ে ট্রাম্প এখন একদিকে তার দলীয় রক্ষণশীলদের যুদ্ধোন্মুখ চাপ এবং অন্যদিকে নিজের শান্তিপূর্ণ কূটনৈতিক প্রচেষ্টার ভারসাম্য রক্ষা করতে হিমশিম খাচ্ছেন।

এখন প্রশ্ন—এই সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র শেষ পর্যন্ত আসলে কতটা নিরপেক্ষ থাকতে পারবে?

Jahan

×