
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্ব রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনার জন্ম দিয়েছে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি। পশ্চিমা বিশ্বের কঠোর নজরদারি, নিষেধাজ্ঞা ও হুমকির মধ্যেও দেশটি এমন এক পরমাণু প্রকল্পের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে, যা প্রচলিত অস্ত্র বা প্রযুক্তি দিয়ে সহজে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব। আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, ইরান এমন এক শক্তির অবস্থানে পৌঁছাতে চলেছে, যা বিশ্ব শক্তির ভারসাম্যকেই পাল্টে দিতে পারে।
সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা রাইটার্সের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইরান তার প্রধান পারমাণবিক স্থাপনার নিকট নির্মাণ করছে বিশাল টানেল কমপ্লেক্স, যা পাহাড়ের নিচে অবস্থিত এবং শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় সুরক্ষিত। উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে ‘ইনস্টিটিউট ফর সাইন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল সিকিউরিটি’ জানিয়েছে, এসব টানেলের চারপাশে উঁচু দেয়াল ও নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করা হচ্ছে, যাতে বাইরের কোন হামলা সফল না হয়।
বিশেষজ্ঞদের ধারণা, মাউথ খোলাং গাজলা পর্বতের নিচে নির্মাণাধীন এই টানেলগুলো খুব শিগগিরই চালু হতে পারে। নাতাঞ্জ ও ফোরডো পারমাণবিক স্থাপনাগুলোর তুলনায় এসব কমপ্লেক্স আরও গভীর ও নিরাপদভাবে নির্মিত হচ্ছে। মার্চ মাসে তোলা স্যাটেলাইট চিত্রে দেখা গেছে টানেলের সুসংগঠিত প্রবেশপথ ও চারপাশে সুরক্ষিত প্রাচীর নির্মাণের কার্যক্রম।
এই নির্মাণ কার্যক্রমকে ঘিরে তৈরি হয়েছে একাধিক প্রশ্ন। ইরান দাবি করে, তাদের পারমাণবিক প্রকল্প সম্পূর্ণ শান্তিপূর্ণ এবং এই প্রযুক্তি তারা চিকিৎসা, কৃষি ও অন্যান্য শিল্প উন্নয়নের কাজে ব্যবহার করতে চায়। কিন্তু জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থার (IAEA) মহাপরিচালক রাফায়েল গ্রসি জানান, নতুন স্থাপনাগুলোতে পারমাণবিক কার্যক্রম চলছে কি না, সে প্রশ্ন এখনো অনিশ্চিত। তেহরান কর্তৃপক্ষ বলেছে, যদি কোনো পারমাণবিক উপকরণ স্থাপন না করা হয়, তবে নতুন স্থাপনা সম্পর্কে জানানো তাদের জন্য আইনগত বাধ্যবাধকতা নয়।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০১৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পাদিত পরমাণু চুক্তি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে ইরান তাদের কৌশলগত অবস্থান শক্তিশালী করতে শুরু করে। এখন তারা শুধু প্রতিরক্ষা নয়, বরং বৈজ্ঞানিক ও কূটনৈতিক দিক থেকেও নিজেদের অবস্থান দৃঢ় করছে। উন্নত সেন্ট্রিফিউজ তৈরি, গবেষণায় অগ্রগতি এবং আন্তর্জাতিক স্তরে নিজেদের স্বরূপ পরিবর্তনের প্রচেষ্টা— সবই মিলিয়ে ইরান এক নতুন শক্তির প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠছে।
এদিকে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু জানিয়েছেন, যেকোনো মূল্যে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি থামাতে হবে। তবে বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। ইরান যে প্রতিরক্ষা কাঠামো তৈরি করছে, তা প্রচলিত বোমা বা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ধ্বংস করা প্রায় অসম্ভব।
তেহরান বারবার বলে আসছে, তাদের উদ্দেশ্য শান্তিপূর্ণ। তবে ভূগর্ভস্থ এই গোপন টানেল প্রকল্প এবং বাড়তে থাকা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেখে পশ্চিমা বিশ্লেষকদের আশঙ্কা— ইরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির দিকেই এগোচ্ছে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=3gJiuXoYCUs
এম.কে.