
শক্তিশালী বোমা রয়েছে চীনের
চীন এখন শুধু আর অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের অন্যকম শীর্ষ দেশই নয়, সেই সঙ্গে অন্যতম সামরিক শক্তিধর দেশও বটে। গ্লোবাল পাওয়ার হাউসের হিসেবে বিশ্বে সামরিক শক্তিতে প্রথম স্থানে যুক্তরাষ্ট্র, দ্বিতীয় স্থানে রাশিয়া, তিন ও চারে রয়েছে যথাক্রমে চীন এবং ভারত। খবর সাউথ চায়না মর্নিং পোস্টের।
তবে পৃথিবীর সব থেকে উন্নত এবং অত্যাধুনিক বেশ কিছু যুদ্ধাস্ত্র বানিয়ে ফেলেছে চীন। সামরিক শক্তির বিচারে সমুদ্র, আকাশ, মহাকাশ এবং আন্তর্জাল, সবক্ষেত্রেই নিজেদের অন্যতম শক্তিশালী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করে ফেলেছে তারা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইতোমধ্যেই পৃথিবীতে শ্রেষ্ঠ বেজিং। মার্কিন সরকারের ডিফেন্স ইন্টেলিজেন্স অ্যাজেন্সির প্রতিবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন ধরনের যুদ্ধাস্ত্র তৈরিতে চীন অবিশ্বাস্য গতিতে এগিয়ে চলছে।
শেষ কয়েক দশকে প্রযুক্তির ক্ষেত্রে অভাবনীয় উন্নতি করেছে চীন। অস্ত্র উৎপাদন শিল্পে চীন সারা পৃথিবীর ভরকেন্দ্র হয়ে ওঠা থেকেই এই এগিয়ে যাওয়ার শুরু। এরই ধারাবাহিকতায় চীন এমন একটি হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করেছে, যেটি পারমাণবিক বোমার চেয়েও কম শক্তিশালী নয়। সে দেশের গবেষকরা এটির সফল পরীক্ষাও করেছেন। এটি পারমাণবিক বোমা থেকে আলাদা, কিন্তু অনেক বেশি শক্তিশালী। এর ধ্বংস ক্ষমতা অবিশ্বাস্য বলেও বর্ণনা করা হচ্ছে।
চীনের হাইড্রোজেন বোমা অস্ত্রের জন্য ব্যবহৃত টিএনটি বিস্ফোরকের চেয়ে ১৫ গুণ বেশি তাপ উৎপন্ন করে। এটি চীনের সামরিক শক্তিতে একটি উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে। এই সফল পরীক্ষার পর, চীনের কাছে এখন পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়াও একটি অত্যন্ত শক্তিশালী অস্ত্র রয়েছে। বোমাটি চায়না স্টেট শিপবিল্ডিং কর্পোরেশন দ্বারা তৈরি করা হয়েছে।
বোমাটিতে ম্যাগনেসিয়াম থেকে তৈরি হাইড্রোজেন উপাদান ব্যবহার করা হয়েছে। এই উপাদানটি আগুনের গোলা তৈরি করে। এটি সাধারণ বিস্ফোরকের চেয়ে বেশি সময় ধরে জ্বলে, যা এটিকে অনেক বেশি বিপজ্জনক করে তোলে। হাইড্রোজেন বোমায় পারমাণবিক উপাদান ব্যবহার করা হয় না। চীন ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রাইড দিয়ে তৈরি দুই কিলোগ্রাম ওজনের একটি বোমা পরীক্ষা করেছে। রুপালি রঙের এই পাউডারটি প্রচুর পরিমাণে হাইড্রোজেন ধারণ করতে পারে।
একটি ছোট বিস্ফোরণের মাধ্যমে জ্বলে ওঠে, যার ফলে দ্রুত উত্তপ্ত হয়। নতুন ধরনের বোমাটি হাইড্রোজেন গ্যাস নির্গত করে যা বাতাসের সঙ্গে মিশে গেলে পুড়ে যায়। বোমাটি এক হাজার ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি তাপমাত্রার একটি আগুনের গোলা তৈরি করে। এই আগুন দুই সেকেন্ডেরও বেশি সময় ধরে জ্বলতে পারে, যা টিএনটির মতো অন্যান্য বোমার তুলনায় বেশি ক্ষতি করতে পারে। গবেষক ওয়াং জুয়েফেং এবং তার দল জানিয়েছে, হাইড্রোজেন গ্যাস বিস্ফোরণের জন্য খুব কম শক্তি লাগে।
এর শিখা খুব দ্রুত এবং একটি বিশাল এলাকাজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। এই সংমিশ্রণ বিস্ফোরণের তীব্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। উৎপন্ন ভয়াবহ তাপ সহজেই বিশাল এলাকার লক্ষ্যবস্তু ধ্বংস করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যখন একটি হাইড্রোজেন বোমা প্রচলিত বিস্ফোরক দ্বারা চালিত হয়, তখন ম্যাগনেসিয়াম হাইড্রাইড তাপ উৎপন্ন করে। এটি হাইড্রোজেন নির্গত করে, যা বাতাসের সঙ্গে মিশে যায়। যখন এই গ্যাস একটি নির্দিষ্ট স্তরে পৌঁছায়, তখন এটি জ্বলে ওঠে।
এই প্রক্রিয়াটি জ্বালানি শেষ না পর্যন্ত জ্বলতে পারে। গবেষকরা দেখেছেন যে চীনের এই নতুন অস্ত্রের বিস্ফোরণ টিএনটির তুলনায় ৪০ শতাংশ কম। পরীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বিস্ফোরণের শক্তি ছিল ৪২৮.৪৩ কিলোপাস্কেল। এই অস্ত্রের শক্তি হলো এটি যে তাপ উৎপন্ন করে যা ১,০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি। এই তীব্র তাপ একটি বিশাল এলাকাজুড়ে ক্ষতি করতে পারে।