চলতি বছরের জুলাই থেকে বাংলাদেশি পর্যটকদের অভাবে বড় ধরনের লোকসান গুনছে কলকাতার বিভিন্ন হোটেল ও খুচরা দোকানের ব্যবসায়ীরা। অনেকে বলছেন, করোনা মহামারির পর এমন দশায় আর কখনো পড়তে হয়নি তাদের। ভারতীয় সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতে, বাংলাদেশি পর্যটকের অভাবে কলকাতার মিনি বাংলাদেশ এলাকার বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ড প্রায় ৭০ শতাংশ কমে গেছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কার্যক্রমের ছন্দপতন ঘটে। পরে সীমিত পরিসরে এই কার্যক্রম শুরু হয়। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, চিকিৎসার জন্য ও জরুরি প্রয়োজন ছাড়া অন্যান্য ভিসা তারা ইস্যু করবে না।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশিদের কলকাতা ভ্রমণ ব্যাপক হারে কমে যায়। তাতেই ধস নামে মিনি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ক্রেতার অভাবে বর্তমানে মারকুইস স্ট্রিট, সাডার স্ট্রিট, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট, রফি আহমেদ কিদওয়াই রোড, রয়ড স্ট্রিট ও এলিয়ট রোডের ১২০টি হোটেলের মাত্র ১০-১৫ শতাংশ কক্ষে অতিথি আছে। অথচ গত বছর এই সময়ে হোটেলগুলোর ৮০ শতাংশ কক্ষ ভরা ছিল।
কলকাতা হোটেল ও রেস্তোরাঁ মালিক সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য মনতোষ সরকার জানান, জুলাই থেকে মারকুইস স্ট্রিটে আমার হোটেলের ৩০টি কক্ষের মধ্যে মাত্র চার বা পাঁচটি কক্ষ বাংলাদেশি অতিথিদের দখলে আছে। অথচ বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন ও শেখ হাসিনার পতনের আগে সেখানে আমার হোটেলের ২৬-২৮টি কক্ষেই বাংলাদেশি অতিথিরা ছিলেন।
প্রায় নির্জন একটি হোটেলে অবস্থান করা চট্টগ্রামের রেজেন বিশ্বাস জানান, গণ-অভ্যুত্থানের পর ভারত সরকারের নতুন ভিসা নিষেধাজ্ঞার কারণে কলকাতায় বাংলাদেশিদের আগমন ব্যাপক হারে কমে গেছে। আগে এই হোটেলের কক্ষগুলোও বাংলাদেশিদের আনাগোনা ও আড্ডায় সরগরম থাকত।
নিউমার্কেটের দোকানদাররা, যারা সাধারণত কলকাতার বিভিন্ন অংশের তুলনায় বাংলাদেশ থেকে বেশি ক্রেতা পান, তারাও হতাশ। আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশে অস্থিতিশীলতা চলতে থাকলে ও ভারত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করতে থাকলে কলকাতার এই অঞ্চলের অর্থনীতি ভেঙে পড়বে।
নিউ মার্কেটের চকো নাট নামের একটি দোকান কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের বিক্রি দিনে সাড়ে ৩ লাখ রুপি কমে ৩৫ হাজারে নেমেছে। তারা চকলেট, বাদাম, মসলা ও প্রসাধনী বিক্রি করে ও একচেটিয়াভাবে বাংলাদেশি গ্রাহকদের জন্য সরবরাহ করতেন।
১২৪ বছরের পুরোনো প্রসাধনীর দোকান রয়্যাল স্টোরের পঞ্চম প্রজন্মের মালিক অজয় শ বলেন, পরিস্থিতি শুধু আমাদের দোকানের জন্য নয়, পুরো বাজারের জন্যই ভয়াবহ। বাংলাদেশে রাজনৈতিক সংকট এবং ভিসা ইস্যুতে গ্রাহকের সংখ্যা কমে গেছে।
কলকাতার নিউ মার্কেটের দোকান মালিকরা জানিয়েছেন,বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সাধারণত বাংলাদেশি ক্রেতাদের থেকে বেশি বিক্রি করতেন।কিন্ত তাদের জন্য এখন খুবই কঠিন সময় যাচ্ছে শুধুমাত্র বাংলাদেশি ক্রেতার অভাবে।বেশিরভাগ দোকানই ক্রেতা শূন্য।
এসআর