
ছবি: সংগৃহীত
দিনটি আমাদের মনে করিয়ে দেয়, হৃদয়ের মতোই মস্তিষ্কের যত্নও অত্যন্ত জরুরি। হার্ভার্ড হেলথ পাবলিশিং সম্প্রতি ১২টি অভ্যাসের তালিকা প্রকাশ করেছে, যা মস্তিষ্কের বার্ধক্য ধীর করতে সাহায্য করে। এসব পরামর্শ বাস্তবসম্মত এবং প্রমাণ-ভিত্তিক, কোনো দামী সাপ্লিমেন্ট নয়, বরং সহজ কিছু জীবনযাপনের পরিবর্তন।
এই অভ্যাসগুলো মেনে চললে স্মৃতিশক্তি, মনোযোগ ও মানসিক স্বচ্ছতা দীর্ঘদিন বজায় রাখা সম্ভব। নিচে হার্ভার্ড-প্রস্তাবিত ১২টি উপায় তুলে ধরা হলো:
হার্ভার্ডের পরামর্শ অনুযায়ী মস্তিষ্ক তরুণ রাখতে যে অভ্যাসগুলো প্রয়োজন:
মস্তিষ্ককে প্রতিদিন চ্যালেঞ্জ করুন: বই পড়া, শব্দছক, নতুন ভাষা শেখা বা হস্তশিল্প — যেকোনো মানসিক চর্চা নিউরনের নতুন সংযোগ গঠনে সহায়ক।
নিয়মিত শরীরচর্চা করুন: প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটাহাঁটি করলে মস্তিষ্কে অক্সিজেন পৌঁছায় এবং নতুন কোষ জন্মায়। এটি রক্তচাপ ও স্ট্রেসও নিয়ন্ত্রণে রাখে।
মেডিটেরেনিয়ান ধাঁচের খাবার খান: পাতে রাখুন শাকসবজি, বেরি, বাদাম, অলিভ অয়েল, মাছ ও ডাল। এতে ইনফ্লেমেশন কমে এবং মস্তিষ্ক পায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি (ওমেগা-৩, ফলেট, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট)।
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখুন: মাঝবয়সে উচ্চ রক্তচাপ থাকলে ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়। লবণ ও অ্যালকোহল কমিয়ে, ওজন ঠিক রেখে, প্রয়োজনে ওষুধ নিয়ে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
রক্তে চিনি নিয়ন্ত্রণ করুন: ডায়াবেটিস স্মৃতিশক্তি ক্ষয় করে। সুষম আহার, নিয়মিত চলাফেরা ও ওজন নিয়ন্ত্রণে থাকলে সুগারও নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কোলেস্টেরল ঠিক রাখুন: উচ্চ এলডিএল কোলেস্টেরল মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ ব্যাহত করে। ব্যায়াম, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপান পরিহার এ ক্ষেত্রে সহায়ক।
লো-ডোজ অ্যাসপিরিন নিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করুন: কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দৈনিক বেবি অ্যাসপিরিন ক্ষুদ্র স্ট্রোক রোধ করে, যা ভাসকুলার ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি কমায়। তবে এটি সবার জন্য নয়।
তামাকজাত পণ্য থেকে দূরে থাকুন: নিকোটিন রক্তনালিকে সংকুচিত করে এবং কোষের ক্ষতি করে। ধূমপান ছাড়াই মস্তিষ্ক ও হৃদয় সুস্থ রাখা সম্ভব।
অ্যালকোহল সীমিত করুন: দিনে দুই পেগের বেশি মস্তিষ্কের কিছু অংশ ছোট করে দেয়। নিয়মিত বিরতিসহ কম মাত্রায় গ্রহণ করুন।
ঘুম ও মানসিক স্বাস্থ্য রক্ষা করুন: উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা ঘুমের অভাব মনোযোগ ও স্মৃতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। থেরাপি, মেডিটেশন ও প্রতিদিন ৭–৯ ঘণ্টা ঘুম এ সমস্যা কাটাতে পারে।
মস্তিষ্ক রক্ষা করুন আঘাত থেকে: সাইকেল দুর্ঘটনা, খেলাধুলার চোট বা পড়ে যাওয়া — এসব মাঝারি আঘাতও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি করে। হেলমেট পরা, বাড়িকে নিরাপদ রাখা এবং গাড়িতে সিটবেল্ট পরা জরুরি।
সামাজিক সম্পর্ক গড়ে তুলুন: বন্ধু ও পরিবারের সংযোগ মানসিক চাপ কমায় এবং মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। সপ্তাহে অন্তত একবার দেখা-সাক্ষাৎ, স্বেচ্ছাসেবা বা দলগত কোনো শখ রাখুন।
এই বিশ্ব মস্তিষ্ক দিবসে প্রতিটি ভালো অভ্যাসকে ভাবুন একটি বিনিয়োগ হিসেবে — যা আপনাকে দিবে স্বচ্ছ চিন্তা, মানসিক প্রশান্তি ও দীর্ঘস্থায়ী মেধা।
শিহাব