
জেমস বন্ডের মতো গোয়েন্দা হওয়ার স্বপ্ন তাকে আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড় করাল। রাশিয়ার হয়ে তথ্য সরবরাহের চেষ্টা করার অভিযোগে ব্রিটিশ নাগরিক হাওয়ার্ড ফিলিপস (৬৫) দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার উইনচেস্টার ক্রাউন কোর্টের জুরি তাকে দোষী ঘোষণার পর আদালত সাজা ঘোষণার আগ পর্যন্ত তাকে হেফাজতে পাঠিয়েছে। আনুষ্ঠানিক সাজা আগামী শরতে ঘোষণা করা হবে, তবে নির্দিষ্ট তারিখ এখনো ঠিক হয়নি।
অভিযোগপত্রে বলা হয়, ফিলিপস ব্রিটেনের সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী গ্র্যান্ট শ্যাপসের যোগাযোগের তথ্য এবং তার ব্যক্তিগত বিমান কোথায় রাখা থাকে সেই অবস্থান হস্তান্তর করতে চেয়েছিলেন। প্রসিকিউশনের দাবি, এসব তথ্য রুশ পক্ষের হাতে গেলে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা সম্পর্কে গোয়েন্দা শোনাগার বা নজরদারির সুযোগ তৈরি হতে পারত।
ফিলিপস যাদের রুশ এজেন্ট বলে ভেবেছিলেন, বাস্তবে তারা ছিলেন ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থার ছদ্মবেশী কর্মকর্তা। তদন্তের অংশ হিসেবে তাদের সঙ্গেই তিনি যোগাযোগের চেষ্টা করেন এবং তথ্য দেওয়ার আগ্রহ দেখান, যা শেষ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে আদালতে প্রধান প্রমাণে পরিণত হয়।
জুরি তাকে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থাকে সহায়তার অভিযোগে (যা তিনি রুশ গোয়েন্দা সংস্থা ভেবে করেছিলেন) দোষী সাব্যস্ত করে। আদালতের সিদ্ধান্তে বলা হয়, তিনি সচেতনভাবেই এই যোগাযোগে এগিয়েছিলেন।
আদালতে ফিলিপসের সাবেক স্ত্রী বলেন, তিনি জেমস বন্ডের মতো জীবনযাপনের স্বপ্ন দেখতেন এবং ব্রিটিশ গোপন সেবাকে ঘিরে নির্মিত চলচ্চিত্র বারবার দেখতেন।
তার ভাষায়, ফিলিপস এই জগতে এমনভাবে মোহাবিষ্ট ছিলেন যে বাস্তবতা আর কল্পনার সীমারেখা তার কাছে প্রায় ঘোলাটে হয়ে গিয়েছিল।
ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের কাউন্টার টেররিজম ডিভিশনের প্রধান বেথান ডেভিড বলেন, এই রায় রাশিয়ার হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির কথা ভাবছেন এমন যে কারও জন্য স্পষ্ট সতর্কবার্তা। তার মন্তব্য, ফিলিপস আর্থিক লাভের প্রত্যাশায় নির্লজ্জভাবে এগিয়েছিলেন এবং নিজের দেশের সম্ভাব্য ক্ষতি নিয়ে তিনি বিচলিত ছিলেন না।
ঘটনাটি ব্রিটেনে জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে চলমান সতর্কতার প্রেক্ষাপটে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। ব্যক্তিগত মোহ, কল্পনা বা টাকার লোভ কখন কীভাবে সংবেদনশীল তথ্যের ঝুঁকিতে পরিণত হতে পারে, হাওয়ার্ড ফিলিপসের এই মামলা তার এক সাম্প্রতিক উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। সাজা ঘোষণার পর এ ধরনের অপরাধের শাস্তিমাত্রা নিয়ে আরও বিস্তৃত আলোচনা শুরু হতে পারে বলে পর্যবেক্ষকদের ধারণা।
বিচার প্রক্রিয়ার পরবর্তী ধাপ সামনে আসার অপেক্ষায় সংশ্লিষ্ট মহল। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষা, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সুরক্ষা এবং বিদেশি প্রভাব মোকাবিলায় আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সমন্বিত ভূমিকার ওপর এখন নতুন করে দৃষ্টি যাচ্ছে। আদালতের শরত্কালীন শুনানিতে কী সাজা দেওয়া হয়, সেটিই নির্ধারণ করবে ফিলিপসের ভাগ্য আর একই সঙ্গে অন্যদের জন্য কতটা শক্ত বার্তা যাবে, সেটিও।
সূত্র:https://tinyurl.com/y7mscrjy
আফরোজা