ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৮ শ্রাবণ ১৪৩২

তৃতীয়বারের মতো আবারও যে কারণে ইউনেস্কো ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

প্রকাশিত: ০৩:০১, ২৩ জুলাই ২০২৫

তৃতীয়বারের মতো আবারও যে কারণে ইউনেস্কো ছাড়ছে যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত

ইউনেস্কো থেকে তৃতীয়বারের মতো নিজেদের প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। প্যারিসভিত্তিক জাতিসংঘের এই শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থায় ফিলিস্তিনের সদস্যপদ গ্রহণ এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ পররাষ্ট্রনীতির সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ কর্মকাণ্ডকে কেন্দ্র করেই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানায় হোয়াইট হাউস।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে জানান, ‘আজ যুক্তরাষ্ট্র ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলেকে জানিয়ে দিয়েছে যে ৩১ ডিসেম্বর ২০২৬ থেকে তারা ইউনেস্কো থেকে সম্পূর্ণরূপে সরে দাঁড়াবে।’

তিনি বলেন, ইউনেস্কোর কর্মকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের অংশগ্রহণ বর্তমানে ওয়াশিংটনের ‘জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী’।

‘গ্লোবাল এজেন্ডা’ নিয়ে সমালোচনা

ব্রুস ইউনেস্কোকে অভিযুক্ত করে বলেন, এই সংস্থা বিভিন্ন ‘বিভাজনমূলক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মসূচি’ চালিয়ে যাচ্ছে এবং জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাকে (SDGs) এগিয়ে নিচ্ছে, যা মূলত একটি ‘গ্লোবালিস্ট মতাদর্শভিত্তিক উন্নয়ন ধারণা’ এবং ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক।

তিনি আরও বলেন, ২০১১ সালে ফিলিস্তিনকে ইউনেস্কোর পূর্ণ সদস্যপদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত ছিল ‘মার্কিন নীতির পরিপন্থী’ এবং সেটি ‘ইসরায়েলবিরোধী মনোভাবকে’ উসকে দিয়েছে।

এটি অবশ্য নতুন কিছু নয়। ট্রাম্প প্রশাসন ২০১৮ সালেও ইউনেস্কো থেকে বেরিয়ে গিয়েছিল একই অভিযোগে—সংস্থার ‘ইসরায়েলবিরোধী পক্ষপাত’ এবং ‘অদক্ষ ব্যবস্থাপনা’।

এর আগেও ১৯৮৪ সালে রোনাল্ড রিগ্যানের সময় ইউনেস্কো থেকে বেরিয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র, তখন ‘রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ ও অতিরিক্ত রাজনৈতিকীকরণ’-এর অভিযোগ আনা হয়েছিল।

২০২৩ সালে সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের আমলে আবারও যুক্তরাষ্ট্র ইউনেস্কোর ১৯৪তম সদস্য হিসেবে পুনরায় যোগ দিয়েছিল।

ব্রুস বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সংগঠনে যুক্ত থাকার মাধ্যমে স্পষ্টভাবে ও দৃঢ়তার সঙ্গে কেবলমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থকেই অগ্রাধিকার দেব।’

ইউনেস্কোর মহাপরিচালক অড্রে আজুলে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্ত আমি গভীর দুঃখের সঙ্গে গ্রহণ করছি।’ তিনি জানান, ‘এই সিদ্ধান্ত বহুপাক্ষিকতাবাদের মৌলিক নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।’

আজুলে আরও বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগগুলো এখনও সাত বছর আগের মতোই, যদিও এই সময়ে রাজনৈতিক টানাপোড়েন অনেকটাই বদলেছে এবং ইউনেস্কো বর্তমানে একটি বিরল ঐকমত্যের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করছে।’

তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইউনেস্কো বিশ্বজুড়ে হোলোকাস্ট শিক্ষা ছড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি জানান, ‘এই সিদ্ধান্ত অবশ্যই দুঃখজনক, তবে আমরা এটি আগেই অনুমান করেছিলাম এবং প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।’

বাজেটেও ইতিবাচক পরিবর্তন

আজুলে জানান, ২০১৮ সালের পর থেকে সংস্থার কাঠামোগত সংস্কার ও তহবিল উৎসের বৈচিত্র্য আনা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে ইউনেস্কোর বাজেটের মাত্র ৮ শতাংশ যোগান দেয়, যেখানে অনেক জাতিসংঘ সংস্থার ক্ষেত্রে এটি ৪০ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে।

তিনি জানান, ইউনেস্কোর মোট বাজেট এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি এবং ২০১৮ সালের পর থেকে স্বেচ্ছা অনুদান দ্বিগুণ হয়েছে। এ কারণে কোনো কর্মী ছাঁটাইয়ের প্রয়োজন পড়ছে না।

আজুলে আরও বলেন, ইউনেস্কো সব দেশের অংশগ্রহণকে স্বাগত জানায় এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসন ও কংগ্রেসের সঙ্গে রাজনৈতিক সংলাপ চালিয়ে যাবে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের বেসরকারি খাত, একাডেমিয়া ও এনজিওদের সঙ্গে সহযোগিতাও বজায় থাকবে।

 

সূত্র: আনাদোলু।

রাকিব

×