ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

হার্ট ব্লক? বাইপাস নয়, এখন ১টি প্রাকৃতিক উপায়েই সমাধান! 

প্রকাশিত: ১৯:৩৪, ২২ জুলাই ২০২৫

হার্ট ব্লক? বাইপাস নয়, এখন ১টি প্রাকৃতিক উপায়েই সমাধান! 

ছবি: সংগৃহীত

হৃদরোগ, বিশেষ করে হার্ট ব্লকেজ বা করোনারি আর্টারি ডিজিজ, বিশ্বজুড়ে একটি প্রধান স্বাস্থ্য সমস্যা। এর প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিগুলোর মধ্যে বাইপাস সার্জারি বা এনজিওপ্লাস্টি অন্যতম। তবে সাম্প্রতিক সময়ে একটি নির্দিষ্ট প্রাকৃতিক উপায়ের কার্যকারিতা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে, যা হার্ট ব্লকের সমাধানে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে বলে কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করছেন। এটি হলো জীবনযাত্রার পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন (Comprehensive Lifestyle Modification)। যদিও এটি কোনো একক 'উপায়' নয়, বরং একাধিক প্রাকৃতিক পদ্ধতির সমন্বয়, যা হার্ট ব্লক নিরাময়ে অস্ত্রোপচারের বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

এই পদ্ধতিটি মূলত ড. ডিন অরনিশের (Dr. Dean Ornish) গবেষণার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছে, যেখানে দেখা গেছে যে সঠিক জীবনযাপন পদ্ধতি অনুসরণ করলে হার্ট ব্লকেজ কেবল ধীরগতিই হয় না, বরং এটি পিছিয়েও যেতে পারে (Regression)। অর্থাৎ, ব্লকেজগুলো প্রাকৃতিক উপায়ে কমতে শুরু করে।

প্রাকৃতিক উপায়ে হার্ট ব্লকের সমাধান: কী অন্তর্ভুক্ত?

এই 'একটি প্রাকৃতিক উপায়' বলতে আসলে একটি সমন্বিত জীবনযাপন কর্মসূচিকে বোঝায়, যার মূল উপাদানগুলো হলো:

১. সম্পূর্ণ উদ্ভিদ-ভিত্তিক খাদ্য (Whole Food, Plant-Based Diet):
এটি এই পদ্ধতির মূল ভিত্তি। এর অর্থ হলো সব ধরনের মাংস, পোল্ট্রি, মাছ, ডিম এবং দুগ্ধজাত পণ্য সম্পূর্ণভাবে বর্জন করা। পরিবর্তে, ফল, শাক-সবজি, গোটা শস্য, ডাল, বাদাম ও বীজ জাতীয় খাবার গ্রহণ করতে হয়। এই খাদ্যাভ্যাসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং কোলেস্টেরলের পরিমাণ প্রায় শূন্য, যা ধমনীতে প্লাক জমা কমাতে অত্যন্ত কার্যকর। ফাইবার সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি কোলেস্টেরল কমাতেও সাহায্য করে।

২. নিয়মিত মাঝারি ব্যায়াম:
প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট মাঝারি গতির ব্যায়াম, যেমন – দ্রুত হাঁটা, জগিং, সাইক্লিং বা সাঁতার। নিয়মিত ব্যায়াম রক্তচাপ কমায়, ভালো কোলেস্টেরল (HDL) বাড়ায়, খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) কমায় এবং হৃদপিণ্ডের পেশি শক্তিশালী করে। এটি রক্তনালীগুলোকে নমনীয় রাখতেও সাহায্য করে।

৩. মানসিক চাপ ব্যবস্থাপনা:
মানসিক চাপ হৃদরোগের একটি বড় কারণ। এই পদ্ধতিতে মানসিক চাপ কমানোর ওপর জোর দেওয়া হয়। যোগব্যায়াম, ধ্যান, গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, মাইন্ডফুলনেস এবং পর্যাপ্ত ঘুম মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে। এটি কর্টিসোল হরমোনের মাত্রা কমিয়ে হার্টের ওপর চাপ কমায়।

৪. সামাজিক সমর্থন:
পরিবার ও বন্ধুদের কাছ থেকে মানসিক সমর্থন এই প্রক্রিয়ায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একাকীত্ব এবং বিচ্ছিন্নতা হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। সামাজিক সংযোগ স্থাপন সুস্থ জীবনযাপনে উৎসাহিত করে।

৫. ধূমপান ও অ্যালকোহল বর্জন:
ধূমপান এবং অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবন হৃদরোগের ঝুঁকি বহু গুণ বাড়িয়ে দেয়। এই প্রাকৃতিক পদ্ধতির সাফল্যের জন্য এই দুটি অভ্যাস সম্পূর্ণভাবে ত্যাগ করা অপরিহার্য।

যদিও এটি প্রচলিত বাইপাস সার্জারির বিকল্প হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, তবে বিশেষজ্ঞরা জোর দিচ্ছেন যে, এই পদ্ধতিটি চিকিৎসকের নিবিড় তত্ত্বাবধানে এবং নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে সম্পন্ন করা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে, জীবনযাত্রার পরিবর্তন রোগের অগ্রগতি থামাতে বা রিভার্স করতে পারলেও, গুরুতর ব্লকেজের জন্য তাৎক্ষণিক অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হতে পারে।

এই প্রাকৃতিক উপায়টি মূলত রোগের মূল কারণকে (Root Cause) মোকাবেলা করে। এটি শুধু লক্ষণগুলো দমন করে না, বরং শরীরকে ভেতরের দিক থেকে সুস্থ করে তোলে। যারা হার্ট ব্লকেজ নিয়ে চিন্তিত বা বাইপাস সার্জারি এড়াতে চান, তাদের জন্য এই জীবনযাত্রার পূর্ণাঙ্গ পরিবর্তন একটি আশার আলো দেখাতে পারে, যা হৃদপিণ্ডকে আবার সুস্থ ও কার্যক্ষম করে তুলতে সহায়ক।

ফারুক

আরো পড়ুন  

×