
ছবি: সংগৃহীত
আবহাওয়ার সামান্য পরিবর্তনেই ঠান্ডা লাগা, কাশি এবং ফুসফুসে শ্লেষ্মা জমার সমস্যা অনেকের মধ্যেই দেখা যায়। সাধারণ ফ্লু বা সর্দি-কাশি ভেবে আমরা প্রায়শই এই লক্ষণগুলোকে উপেক্ষা করি। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন, এই আপাত নিরীহ লক্ষণগুলো যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় বা বারবার ফিরে আসে, তবে তা ফুসফুসের গুরুতর সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে। সময়মতো পদক্ষেপ না নিলে এই 'সামান্য ঠান্ডা'ই বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
ফুসফুস আমাদের শ্বাসতন্ত্রের মূল অঙ্গ, যা প্রতিনিয়ত বাইরের পরিবেশ থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করে এবং বিষাক্ত কার্বন ডাই অক্সাইড বের করে দেয়। শ্লেষ্মা বা কফ হলো ফুসফুস ও শ্বাসনালীর একটি প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা ধুলো, ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া এবং অন্যান্য উত্তেজক পদার্থকে আটকে রাখে। কিন্তু যখন শ্লেষ্মার উৎপাদন অতিরিক্ত বেড়ে যায় এবং এটি ঘন হয়ে ফুসফুসে জমে, তখন তা শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধা সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন সমস্যার জন্ম দেয়।
কেন ঠান্ডা লাগা ও কফ জমে থাকা বিপজ্জনক?
১. ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস (Chronic Bronchitis): যদি কাশি এবং শ্লেষ্মার সমস্যা তিন মাসের বেশি সময় ধরে বছরে অন্তত দুই বছর ধরে থাকে, তবে তা ক্রনিক ব্রঙ্কাইটিস হতে পারে। এটি ফুসফুসের শ্বাসনালীর দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ, যা ফুসফুসের কার্যকারিতা মারাত্মকভাবে হ্রাস করে।
২. নিউমোনিয়া (Pneumonia): সাধারণ সর্দি-কাশি থেকে নিউমোনিয়া হতে পারে, বিশেষ করে যদি ফুসফুসে অতিরিক্ত শ্লেষ্মা জমে ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাস সংক্রমণের কারণে। নিউমোনিয়া ফুসফুসের বায়ুথলিগুলোকে (alveoli) আক্রান্ত করে, যা শ্বাসকষ্ট, জ্বর এবং বুকে ব্যথার কারণ হয়। সময়মতো চিকিৎসা না পেলে এটি মারাত্মক হতে পারে।
৩. সিওপিডি (COPD) বা ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ: ধূমপান বা দীর্ঘমেয়াদী বায়ু দূষণের সংস্পর্শে আসার কারণে ফুসফুসে শ্লেষ্মা জমা এবং কাশি দীর্ঘস্থায়ী হলে তা সিওপিডি-তে পরিণত হতে পারে। এটি ফুসফুসের একটি প্রগতিশীল রোগ যা শ্বাস নেওয়াকে ক্রমশ কঠিন করে তোলে।
৪. অ্যাজমা (Asthma): যারা অ্যাজমায় ভুগছেন, তাদের ফুসফুসে শ্লেষ্মা জমে যাওয়া এবং কাশি বেড়ে যাওয়া অ্যাজমা অ্যাটাকের কারণ হতে পারে। নিয়মিত শ্লেষ্মা জমা হওয়া অ্যাজমার লক্ষণগুলোকে আরও খারাপ করে।
৫. ফুসফুসের সংক্রমণ ও টিবি (Tuberculosis): দীর্ঘস্থায়ী কাশি এবং শ্লেষ্মা জমা থাকা ফুসফুসের অন্যান্য গুরুতর সংক্রমণ, যেমন যক্ষ্মা (টিবি) বা ফাঙ্গাল ইনফেকশনের লক্ষণও হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দেরি করলে রোগের তীব্রতা বেড়ে যায় এবং চিকিৎসা জটিল হয়।
কখন সতর্ক হবেন এবং কী করবেন?
যদি আপনার ঠান্ডা লাগা, কাশি বা শ্লেষ্মার সমস্যাগুলো নিম্নলিখিত লক্ষণগুলো দেখায়, তবে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন:
দীর্ঘস্থায়ী কাশি: দুই সপ্তাহের বেশি সময় ধরে কাশি থাকলে।
ঘন বা রঙিন শ্লেষ্মা: কফ যদি হলুদ, সবুজ, বাদামী বা রক্তযুক্ত হয়।
শ্বাসকষ্ট বা বুকে ব্যথা: শ্বাস নিতে অসুবিধা বা বুকে ব্যথা অনুভব করলে।
জ্বর বা ক্লান্তি: কাশির সাথে যদি উচ্চ জ্বর বা অস্বাভাবিক ক্লান্তি থাকে।
কাশি বাড়তে থাকলে: সময়ের সাথে সাথে কাশির তীব্রতা বাড়লে।
করণীয়:
চিকিৎসকের পরামর্শ: উপরে উল্লিখিত লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত একজন পালমোনোলজিস্ট (বক্ষব্যাধি বিশেষজ্ঞ)-এর সাথে যোগাযোগ করুন।
পর্যাপ্ত পানি পান: পর্যাপ্ত পরিমাণে উষ্ণ পানি পান করুন, যা শ্লেষ্মাকে পাতলা করে বের করে দিতে সাহায্য করে।
ধূমপান পরিহার: ধূমপান অবিলম্বে ত্যাগ করুন, কারণ এটি ফুসফুসের ক্ষতির প্রধান কারণ।
পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা: ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলুন এবং ফ্লু-এর সময়ে ভিড় এড়িয়ে চলুন।
ফুসফুসের স্বাস্থ্য উপেক্ষা করার মতো কোনো বিষয় নয়। সামান্য লক্ষণকেও গুরুত্বের সাথে নেওয়া উচিত, কারণ দেরি মানেই বিপদ। সময়মতো সচেতনতা এবং সঠিক চিকিৎসা আপনার ফুসফুসকে সুস্থ রাখবে এবং আপনাকে দীর্ঘ, সুস্থ জীবন দেবে।
ফারুক