
কমলাপুরে ২০২৪ অনূর্ধ্ব-১৯ নারী সাফে বাংলাদেশ-ভারত ফাইনালের কথা হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ১-০ ব্যবধানে হারতে বসা ম্যাচে অন্তিমি মুহূর্তে (৯০+৩ মিনিট) অসাধারণ এক গোলে সমতা ফিরিয়েছিলেন মোসাম্মৎ সাগরিকা। একের পর এক টাইব্রেক ‘টাই’ হলে যুগ্ম চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ ও ভারত। সাগরিকা জিতে নেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় ও সর্বোচ্চ গোলদাতার পুরস্কার।
বয়স ভিত্তিক সাফল্যের ধারাবাহিকতায় গত বছরের মাঝামাঝি জাতীয় দলে ডাক পান। ২৪ জুলাই ভুটানের বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচে অভিষেকেই হ্যাটট্রিকে নিজের জাত চেনান। ঠাকুরগাঁওয়ের দরিদ্র পরিবার থেকে সংগ্রাম করে উঠে আসা ১৭ বছরের কিশোরী যে আগামীর তারকা হতে এসেছেন ঢাকায় অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ যেন তারই পূর্বাভাস দিলেন। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই হ্যাটট্রিক। নেপাল ম্যাচে অনাকাক্সিক্ষত বিবাদে জড়িয়ে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞার পর সেই নেপালের বিপক্ষেই ‘অঘোষিত ফাইনালে’ রূপ নেওয়া ম্যাচে ফিরে ৪ গোলের ম্যাজিকে বাংলাদেশকে উপহার দিলেন ৪-০ গোলের স্মরণীয় এক জয়। টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার হাতে হয়ে উঠলেন উৎসবের মধ্যমণি।
নেপালকে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিতের পর বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার গ্যালারিতে সাগরিকা-সাগরিকা বলে আওয়াজ ওঠে। সাগরিকা তখন মাঠের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন। গ্যালারি থেকে তাকে অনুরোধ করা হচ্ছিল যেন দর্শকদের কাছে যান এবং তাদের সঙ্গে উদযাপনে যোগ দেন।
দর্শক-ভক্তদের অনুরোধে গ্যালারির পাশে গিয়ে তিনি তাদের সঙ্গে উদযাপন ভাগাভাগি করেছেন। দর্শকদের বেশ কয়েকজনের সেলফির আবদারও মিটিয়েছেন সাগরিকা,‘বলার অপেক্ষা রাখে না যে অনেক ভালো লাগছে। আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। তিন ম্যাচ খেলতে পারিনি। অনেক কষ্ট লাগছিল। মনে মধ্যে জেদ কাজ করেছিল। নেপালের বিপক্ষে ভালো কিছু করব, ভালো কিছু করতেই হবে-এমন জেদ ছিল আমার। পেরেছিও। আমি সেরা খেলোয়াড় হয়েছি। এটা আরও ভালো লাগার। তবে অবশ্যই বেশি ভালো লাগছে চ্যাম্পিয়ন হতে পেরে।’ বলছিলেন তুখোড় এ ফরোয়ার্ড। এদিনই উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনা হতাহতদের জন্য মন কাঁদছিল কিশোরী সাগরিকার,‘আমি প্রথমে যে গোলটা করেছি তাদের (বিমান দুর্ঘটনায় নিহত) নামে উৎসর্গ করেছি।
প্লেন দুর্ঘটনায় অনেক জন মারা গেছে অনেক জন আহত হয়েছে খুবই দুঃখজনক। খুব কষ্ট লাগছে যে বাংলাদেশে এমন একটা ঘটনা ঘটেছে, আমরা সবাই খুব ব্যথিত।’ মাত্র তিন ম্যাচেই করেছেন ৮ গোল। হয়েছেন মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ার অব দ্য টুর্নামেন্ট। তবে আফসোস নিষেধাজ্ঞার কারণে সব ম্যাচে খেলতে পারেননি। ১০ গোলে তার ওপরে নেপালের পূর্ণিমা রায়। লাল কার্ড দেখে শাস্তি পাওয়ায় কিছুটা বোধদয় হওয়ার কথাও বলেছেন সাগরিকা, ‘ভবিষ্যতে আমাকে মাথা ঠান্ডা রেখে খেলতে হবে। লালকার্ড মাঠের বাইরে আসার পর মনে হয়েছে এভাবে মাথা গরম করা যাবে না। যেটা আমার জন্য একটা শিক্ষাও।’
সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে না পারার আফসোস সাগরিকার কণ্ঠে,‘আমি যদি তিনটি ম্যাচ খেলতে পারতাম তবে সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে পারতাম। তবে তিনটা ম্যাচ না খেলেও বেস্ট প্লেয়ার হয়েছে এতে খুশি।’ ফুটবল নিয়ে দিন দিন দেশের মানুষের উন্মাদনা আরও বাড়ছে। জাতীয় নারী ফুটবল দল এরই মধ্যে নিশ্চিত করেছে এশিয়ান কাপে খেলা।
এ নিয়ে সাগরিকা বলেন,‘ভালো লাগছে ফুটবলে সবাই মনোযোগ দিচ্ছে সবাই দেখতেছে। ফুটবলে সবাই ফোকাস করছে। সবাই যদি এভাবে সাপোর্ট দেয় আমরা ফুটবল আরও আগায় নিতে পারবো।’ এতটা ভালো পারফরম্যান্সের পরও সাগরিকার জাতীয় দলে খেলা হচ্ছে না। তার পজিশনে যারা খেলছেন তারাও অনবদ্য। ঋতুপর্ণা, তহুরা, শামসুন্নাহারের মতো ফরোয়ার্ডদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করেই তাকে দলে জায়গা পেতে হবে। তবে কোচ পিটার বাটলার সাগরিকার ভবিষ্যৎ নিয়ে আশাবাদী। ২০২৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে নারী এশিয়ান কাপ। এছাড়াও জাতীয় দলের আরো ম্যাচ রয়েছে,‘সাগরিকার পারফরমেন্স অসাধারণ।
অস্বীকার করব না, সে জাতীয় দলে জায়গা পাওয়ার মতো। তবে, জাতীয় দলে ঋতুপর্ণা, তহুরা, শামসুন্নাহারের মতো স্ট্রাইকার আছে। এটা সত্যি, তার ভালো ভবিষ্যৎ আছে। তাকে সৎ থাকতে হবে।’ সাগরিকা নিজেও জানিয়েছেন, তিনি অস্থির হতে চান না,‘আমি আসলে জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক আসরে খেলার জন্য অস্থির নই। ওই লেভেলের জন্য আমাকে আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হতে হবে। শারীরিক ও মানসিকভাবেও শন্ত হতে হবে।’
প্যানেল মজি