ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২

মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদল ছোট শিশু, শেষ দেখা হল না

প্রকাশিত: ২২:২০, ২২ জুলাই ২০২৫

মা মা বলে চিৎকার করে কাঁদল ছোট শিশু, শেষ দেখা হল না

"কালকে এগুলা নিজ চোখে দেখছি,"—কাঁপা গলায় বললেন এক স্বেচ্ছাসেবক। “একটা ছোট ভাই, নাম মনে নাই। বারবার ‘মা মা’ বলে চিৎকার করতেছিল, হয়তো ভেবেছিল তার মা এসে ওকে নিয়ে যাবে। কিন্তু মা আর আসেনি। আটটা বাজে মারা গেছে সে।”

এভাবেই একের পর এক ছোট ছোট শিশু চোখের সামনে আগুনে পুড়ে যাচ্ছে বা নিখোঁজ হচ্ছে—এমনই বেদনাদায়ক চিত্র উঠে এসেছে ঢাকার সাম্প্রতিক বিমান বিধ্বস্ত ঘটনায়, যেখানে আশপাশের মাঠে খেলা করছিল অসংখ্য শিশু। ঘটনাস্থলে উপস্থিত অনেকেই এখনও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত।

একের পর এক মর্মান্তিক মুহূর্তে কেউ খুঁজছে তাদের সন্তানকে, কেউ হারিয়ে ফেলেছে একমাত্র ভাই বা বোনকে। এক স্বজন কাঁদতে কাঁদতে বলছিলেন, “ভাইয়াটা আসিয়াকে খুঁজতেছে, এখনো পাওয়া যায়নি। আছিয়ার ভাই আর বোন ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছে। আমরা জানি না কতোজন ভাইবোনকে আর খুঁজে পাবো না।”

উদ্ধার ও চিকিৎসা কাজ এখনো চলছে। অনেকে এখনও নিখোঁজ, এবং হাসপাতালগুলোতে আহতদের ভিড়। ঘটনাস্থলে উপস্থিতরা বলছেন, “অনেকে স্টুডেন্ট মারা গেছে, তখন নাম ঠিকানা কিছুই জানা যাচ্ছিল না। গাড়ির উপর গাড়ি, এম্বুলেন্সের উপর এম্বুলেন্স আসছিল।”

অনেক অভিভাবক সন্তানদের মৃত্যুসংবাদ শুনেই স্ট্রোক করেছেন। তাদের সেনাবাহিনীর গাড়িতে করে ঢাকা মেডিকেলসহ বিভিন্ন হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। কেউ জানত না তাদের সন্তান বেঁচে আছে কি না। মৃত্যুর খবর জানার পর অনেকে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

স্বেচ্ছাসেবকরা বলছেন, “আমরা আসছি সাহায্য করতে। ছোট ছোট বাচ্চাগুলা, ওরা এসব সহ্য করার মত না। কারো গায়ে ব্যান্ডেজ, কেউ ৬০%–৭০% পর্যন্ত পুড়ে গেছে। ২০% পোড়াদের কান্নাও থামছে না, কারণ ওরা বুঝতেও পারছে না কী হয়েছে।”

একজন বলছিলেন, “আমি বাংলাদেশি। আমার ভাইবোনদের দেখতে আসছি। ওরা আমাদের ছেড়ে চলে যাচ্ছে। আমরা জানি না কতটুকু সাহায্য করতে পারব, কিন্তু যদি রক্ত লাগে, ব্লাড দিতে পারব। ১০ ভাগ ব্লাড লাগলে ১০ ভাগ আমরা জোগাড় করব।”

তিনি আরও বলেন, “মানবিক দৃষ্টিতে মানুষের পাশে দাঁড়ানো আমাদের দায়িত্ব। এটা একজন মানুষের কাজ।”

এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য প্রয়োজন সর্বোচ্চ সহানুভূতি ও সহায়তা। আহত শিশুদের সুচিকিৎসা ও নিখোঁজদের সন্ধানে যেন আর সময় না হারায়—এমনটাই প্রত্যাশা করছে সমগ্র জাতি।

Jahan

×