
একটি ছোট্ট দানা, গায়ের রঙ হালকা বাদামি। প্রথম দেখায় তাকে তেমন কিছু মনে হবে না। কিন্তু জানেন কি? এই ছোট্ট দানাটির নাম মেথি, আর এই মেথি হচ্ছে আপনার রান্নাঘরে লুকিয়ে থাকা নিঃশব্দ চিকিৎসক।
মেথি শুধু মসলা নয়, একে বলা যেতে পারে “গ্রামীণ পুষ্টিবিদ।” শহরের চকচকে সুপারফুডের ভিড়ে এ দানাটি হয়তো হারিয়ে যেতে বসেছে, কিন্তু শতাব্দী প্রাচীন আয়ুর্বেদের পাতায় পাতায় মেথির নাম লেখা আছে স্বর্ণাক্ষরে।
রোগ প্রতিরোধে মেথির চমকপ্রদ কার্যকারিতা
রোগ প্রতিরোধের কথা বললেই আমরা এখন ভিটামিন, ক্যালসিয়াম বা প্রোটিনের দিকে ছুটি। অথচ মেথিতে রয়েছে:
-
ডায়োসজেনিন নামের একটি যৌগ, যা হরমোন নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
-
ফাইবার ও স্যাপোনিন, যা রক্তে চর্বি নিয়ন্ত্রণে রাখে।
ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এটি এক অনবদ্য বন্ধু। নিয়মিত সকালে খালি পেটে এক চামচ ভিজানো মেথি খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা স্বাভাবিক থাকে এটি এখন বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত।
হৃদরোগ থেকে ত্বকচর্চা, সবখানে মেথির ছোঁয়া
মেথি খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। কোলেস্টেরল কমে যায়, ফলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি কমে আসে। শহরের ব্যস্ত জীবনে যখন হৃদয় আক্রান্ত হয় দুশ্চিন্তায়, মেথি তখন নীরবে প্রাণ রক্ষা করে যায়।
মেথি গুঁড়ো করে নারকেল তেলের সঙ্গে মিশিয়ে মাথায় ব্যবহার করলে চুল পড়ে না, বরং নতুন চুল গজায়। মুখে মেথির পেস্ট লাগালে ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়, ব্রণ কমে আসে।
এ যেন মনের সঙ্গে রূপেরও সঙ্গী।
নারী স্বাস্থ্যেও মেথির জাদু
হরমোন ভারসাম্য থেকে শুরু করে বুকের দুধ বাড়াতে মেথির দারুণ ভূমিকা রয়েছে। বহু গ্রামীণ মায়েরা এখনও সন্তান প্রসবের পর মেথির পানিতে ভেজানো ভাত খান যা তাদের দেহে শক্তি ফেরায় এবং শিশুর জন্যও উপকারী।
কীভাবে খাবেন মেথি? সহজ উপায়ে উপকার
-
ভিজিয়ে রাখা মেথি খালি পেটে খান।
-
মেথি চা তৈরি করুন (গরম পানিতে ফুটিয়ে খান)।
-
তরকারিতে মসলা হিসেবে ব্যবহার করুন।
-
মেথির লাড্ডু বা ভর্তা করে খান, স্বাদ আর উপকার দুইই পাবেন।
আমরা অনেক সময় “দামী” জিনিসের পেছনে ছুটি, অথচ সত্যিকারের গুপ্তধন আমাদের হাতের মুঠোতেই থাকে ঠিক যেমন মেথি। আধুনিক চিকিৎসা যেখানে থেমে যায়, মেথির মতো প্রাকৃতিক উপাদান সেখানেই জাদু দেখায়।
আপনার রান্নাঘরের মেথি আসলে শুধু খাবার নয়, এটি এক জীবন্ত পথ্য। আজ থেকেই মেথিকে দিন আপনার পাতে একটু সম্মান, কারণ সে আপনার জন্য নিঃশব্দে লড়ে যাচ্ছে।
মিমিয়া