
হঠাৎ মাথা ঝিমঝিম করছে, চোখ অন্ধকার হয়ে আসছে—এরপরই অজ্ঞান! আধমিনিটের মধ্যেই সব স্বাভাবিক। একবার নয়, বারবার এমন ঘটছে? তাহলে এটি হতে পারে আপনার হৃদযন্ত্র থেকে আসা বিপদসংকেত।
চিকিৎসকরা বলছেন, অতিরিক্ত ঘাম, বুকের ব্যথা বা শরীরের বিভিন্ন অংশে অস্বস্তি অনেক সময়েই গ্যাসের ব্যথা ভেবে উপেক্ষা করেন অনেকেই। পরে ইসিজি, ইকো বা রক্ত পরীক্ষায় ধরা পড়ে হার্টের ধমনীতে ব্লকেজ। অনেক ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারই একমাত্র সমাধান হয়ে দাঁড়ায়।
তবে আগেভাগে কিছু লক্ষণ চিনে ফেলা গেলে এই বিপদের ঝুঁকি অনেকটাই কমানো সম্ভব। হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. দিলীপ কুমারের মতে, সম্পূর্ণ নির্ভুলভাবে নয়, তবে ঘরোয়া পর্যবেক্ষণেই কিছু উপসর্গ দেখে বোঝা যেতে পারে হার্টে ব্লকেজের ইঙ্গিত মিলছে কি না।
চলুন জেনে নেওয়া যাক হার্ট ব্লকেজ বোঝার তিনটি ঘরোয়া উপায়—
১. অ্যানজাইনা (বুকে চাপভাব বা ব্যথা)
ধমনী সরু হয়ে গেলে অক্সিজেনসমৃদ্ধ রক্ত যথাযথভাবে চলাচল করতে পারে না। এর ফলে বুকের মাঝ বরাবর চাপ লাগা, ভারী পাথরের মতো কিছু বসে আছে এমন অনুভূতি হয়। হাঁটা, দৌড়ানো, সিঁড়ি ভাঙা এমনকি বিশ্রামের সময়ও বুকের মধ্যে অস্বস্তি বা চিনচিনে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। এই লক্ষণকে বলে ‘অ্যানজাইনা’, যা হার্ট ব্লকেজের অন্যতম প্রধান ইঙ্গিত।
২. চোয়াল, হাত ও ঘাড়ে ব্যথা
শুধু বুকে নয়, হার্টের সমস্যার ব্যথা ছড়িয়ে যেতে পারে বাঁ হাত, চোয়াল, ঘাড় ও কাঁধে। দাঁতের ব্যথার মতো ব্যথা চোয়ালে দেখা দিতে পারে। অনেকে এই ব্যথাকে ভুল করে স্পন্ডিলাইটিস ভেবে উপেক্ষা করেন। তবে যখন-তখন পেশিতে টান, ব্যথা বা শ্বাস নিতে কষ্ট হলে সেটিকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখা প্রয়োজন।
৩. শ্বাসকষ্ট ও অস্বাভাবিক ক্লান্তি
কোনো শারীরিক পরিশ্রম ছাড়াই যদি হঠাৎ শ্বাসকষ্ট হয়, মনে হয় নিঃশ্বাস ঠিকমতো নেওয়া যাচ্ছে না—তবে তা হতে পারে হার্ট ব্লকেজের লক্ষণ। বিশ্রামরত অবস্থায়ও যদি হাঁপ ধরে আসে, শরীর ঝিমিয়ে পড়ে, অকারণে ক্লান্তি বোধ হয়, তবে তা হালকাভাবে নেওয়ার কিছু নেই।
ব্লকেজের ধরনও নানা রকম
কেউ জন্মসূত্রে ‘কনজেনিটাল হার্ট ব্লক’-এর শিকার হন, আবার কারো হয় বয়স, জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে। কারো ‘করোনারি থ্রম্বোসিস’ হয়, অর্থাৎ ধমনীতে রক্ত জমাট বেঁধে রক্ত চলাচলে বাধা পড়ে। আবার অনিয়মিত হৃদস্পন্দন বা ‘অ্যারিদমিয়া’ও হতে পারে ব্লকেজের কারণ।
ব্লকেজ যদি প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়ে, চিকিৎসা অনেকটাই সহজ হয়। তবে দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডিগ্রির ক্ষেত্রে পেসমেকার বসানো পর্যন্তও গড়াতে পারে।
তাই, উপসর্গ দেখলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ, একটু সচেতনতাই রক্ষা করতে পারে প্রাণ।
মিমিয়া