
ছবিঃ সংগৃহীত
লিভার মানবদেহের সবচেয়ে বড় কঠিন অঙ্গ, যা রক্ত পরিশোধন, পুষ্টি প্রক্রিয়াকরণ, শক্তি সংরক্ষণ এবং ক্ষতিকর পদার্থ দূর করার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। স্বাস্থ্যকর খাবার, মদ্যপান পরিহার এবং সচেতন জীবনযাপন সত্ত্বেও অনেক সময় লিভারের সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভাইরাসজনিত সংক্রমণ, অতিরিক্ত মদ্যপান, জেনেটিক সমস্যা এবং অন্যান্য কারণেই লিভার আক্রান্ত হতে পারে।
লিভারের সমস্যা হলে তার প্রভাব আমাদের ত্বকে স্পষ্টভাবে ফুটে ওঠে। নিচে এমন চারটি ত্বক-সংক্রান্ত পরিবর্তন তুলে ধরা হলো, যেগুলো হলে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত:
১. ত্বক ও চোখের সাদা অংশে হলদে ভাব (জন্ডিস)
লিভার ঠিকমতো কাজ না করলে রক্তে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ রঞ্জক পদার্থ জমা হয়। এটি পুরোনো লাল রক্তকণিকা ভাঙার ফলে তৈরি হয়।
লিভার ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিলিরুবিন সঠিকভাবে নিষ্কাশন হতে পারে না এবং এটি রক্তে জমে ত্বক ও চোখের সাদা অংশকে হলুদ করে তোলে। প্রথমে এটি মুখ, হাত ও পায়ে দেখা যায়।
জন্ডিস লিভারের অসুস্থতার একটি স্পষ্ট লক্ষণ এবং চিকিৎসা না করালে মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। তবে শুরুতেই ধরা পড়লে এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য এবং সাধারণত এর দীর্ঘমেয়াদি কোনো জটিলতা থাকে না।
২. স্পাইডার অ্যাঞ্জিওমা (ত্বকে জালাকৃতির লাল দাগ)
স্পাইডার অ্যাঞ্জিওমা বা স্পাইডার নেভাই হলো ত্বকে দেখা দেওয়া ছোট লাল রঙের জালাকৃতির রক্তনালির গুচ্ছ। দেখতে মাঝখানে একটি লাল বিন্দুর চারপাশে মাকড়সার জালের মতো ছড়ানো লাইন থাকে।
এসব দাগ সাধারণত মুখ, গলা, বুকের ওপরের অংশ ও বাহুতে দেখা যায়। লিভার রোগে হরমোন ভারসাম্যের বিঘ্ন ঘটে, বিশেষ করে ইস্ট্রোজেনের পরিমাণ বেড়ে যায়, যার ফলে ত্বকের নিকটবর্তী ছোট রক্তনালিগুলো প্রসারিত হয়ে এ ধরনের দাগ তৈরি করে। যদিও এটি নিজে ক্ষতিকর নয়, তবে সংখ্যা বেশি হলে লিভার সিরোসিসের ইঙ্গিত দিতে পারে।
৩. হাতের তালুতে লালভাব (পালমার এরাইথেমা)
পালমার এরাইথেমা হলো এক ধরনের অবস্থা, যেখানে দুই হাতের তালু লাল হয়ে যায়। কখনও কখনও এটি গরম অনুভব করায় কিংবা হালকা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি করতে পারে।
এটি ঘটে কারণ লিভার রোগে রক্তপ্রবাহ ও হরমোন ভারসাম্যে পরিবর্তন আসে, যার ফলে হাতের তালুতে রক্ত চলাচল বেড়ে যায়। যদি রোদপোড়া বা চুলকানির মতো কোনো স্পষ্ট কারণ ছাড়াই হাতের তালুতে লালভাব দেখা যায়, তবে তা লিভার সমস্যার লক্ষণ হতে পারে, বিশেষ করে সিরোসিসের।
৪. ত্বকে অতিরিক্ত চুলকানি (প্রুরাইটাস), যা রাতে বাড়ে
দেখা না যাওয়া র্যাশ ছাড়াও লিভার রোগে ত্বকে অতিরিক্ত চুলকানি হতে পারে, যাকে প্রুরাইটাস বলা হয়। এটি সাধারণত রাতে বেশি হয় এবং অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে।
এই চুলকানির মূল কারণ হলো রক্তে বাইল সল্ট জমা হওয়া। লিভার যখন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তখন তা সঠিকভাবে বাইল অপসারণ করতে পারে না। ফলে বাইল ত্বকে জমে গিয়ে প্রদাহ তৈরি করে এবং চুলকানির সৃষ্টি করে। সাধারণ ত্বকের ক্রিম বা অ্যালার্জির ওষুধেও এই চুলকানি উপশম হয় না। যদি এর সঙ্গে অন্যান্য লক্ষণও দেখা যায়, তাহলে দ্রুত লিভার পরীক্ষা করানো উচিত।
লিভার রোগের পেছনের সাধারণ কারণসমূহ:
লিভারের কার্যকারিতা নষ্ট করে এমন রোগগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:
-
ভাইরাল হেপাটাইটিস (A, B, C, D, E): সংক্রমণজনিত প্রদাহ তৈরি করে, যা দীর্ঘমেয়াদি লিভার ক্ষতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।
-
ফ্যাটি লিভার ডিজিজ: এটি আবার দুই প্রকার—অ্যালকোহলিক (অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে) এবং নন-অ্যালকোহলিক (স্থূলতা ও মেটাবলিক সিনড্রোমের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত)।
-
সিরোসিস: দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগের কারণে লিভারে শক্ত টিস্যু বা দাগ তৈরি হওয়া।
পরিশেষে, ত্বকে এই চারটি পরিবর্তন অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করলে লিভারের ক্ষতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। আপনার শরীরের ত্বকই হতে পারে লিভারের সতর্ক সংকেত!
ইমরান