
আকাশে ওড়ার মাত্র দুই মিনিটের মাথায় মর্মান্তিকভাবে ভেঙে পড়ে এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার বিমান। গন্তব্য ছিল লন্ডনের গ্যাটউইক, কিন্তু পৌঁছানোর আগেই ছিন্নভিন্ন হয়ে যায় যাত্রীদের স্বপ্ন। ভয়াবহ এই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন ২৪১ জন। আহমেদাবাদে এই প্রথম বোয়িং ৭৮৭ বিধ্বস্ত হলো এমন মর্মান্তিকভাবে।
বৃহস্পতিবার (১২ জুন) দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে আহমেদাবাদ বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের মাত্র দুই মিনিট পর বিমানটি আছড়ে পড়ে শহরের মেঘানিনগর এলাকার একটি মেডিকেল কলেজ ছাত্রাবাসের ওপর। ছাত্রাবাসের ক্যান্টিনে তখন চলছিল দুপুরের খাবার পরিবেশন। আচমকা বজ্রের মতো শব্দে কেঁপে ওঠে পুরো এলাকা, আর মুহূর্তেই ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় ছাত্রাবাস ও বিমানটি।
দুর্ঘটনায় শুধু যাত্রীরাই নন, প্রাণ হারিয়েছেন ক্যান্টিনে থাকা একাধিক শিক্ষার্থীও। বিমানের ভেতরে থাকা যাত্রীদের মধ্যে ১৬৯ জন ছিলেন ভারতীয় নাগরিক, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডীয়।
বিমান বিধ্বস্তের প্রকৃত কারণ জানার জন্য ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু করেছে ভারতের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ। বিশেষজ্ঞরা প্রাথমিকভাবে মনে করছেন, উড্ডয়নের পরপরই একাধিক পাখির সঙ্গে সংঘর্ষের ফলে বিমানের ইঞ্জিন ব্যর্থ হয়ে যায়। এতে প্রয়োজনীয় উড্ডয়ন শক্তি হারিয়ে ফেলে বিমানটি, আর সেটিই ডেকে আনে এই ভয়াবহ বিপর্যয়।
বিমানটির ব্ল্যাক বক্স উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
দুর্ঘটনার শিকার বিমানটি ছিল বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার মডেলের, যা গত ১৪ বছর ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিরাপদে ফ্লাইট পরিচালনা করে আসছে। এই মডেলের বিমানে ইতোমধ্যে ১ বিলিয়ন যাত্রী পরিবহন হয়েছে এবং ফ্লাইট সংখ্যা ছাড়িয়েছে ৫০ লাখ। উড়েছে প্রায় ৩ কোটি ঘণ্টারও বেশি সময়। তবে ভারতের ইতিহাসে এবারই প্রথম এই মডেলের কোনো বিমান বিধ্বস্ত হলো।
আহমেদাবাদের দুর্ঘটনাটি ভারতের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনার ভয়াবহ স্মৃতিগুলোর একটিকে সামনে এনে দাঁড় করিয়েছে।
-
১৯৯৬ সালে, হরিয়ানার চরখি দাদরিতে সংঘর্ষ হয় দু’টি বিমানের। এতে প্রাণ যায় ৩৪৯ জনের, যা এখনো বিশ্বের অন্যতম ভয়াবহ বিমান সংঘর্ষ।
-
২০১০ সালের ২২ মে, দুবাই থেকে আসা এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ৮১২ অবতরণের সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে খাদে, নিহত হন ১৫৮ জন।
-
২০২০ সালের আগস্টে, কেরালার কোঝিকোড়ে বৃষ্টিভেজা রানওয়েতে অবতরণের সময় বিমান বিধ্বস্ত হয়ে প্রাণ হারান ১৭ জন।
দুর্ঘটনার পর শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এক্স (সাবেক টুইটার)-এ দেওয়া বার্তায় তিনি বলেন, "এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা বাকরুদ্ধ করে দিয়েছে আমাকে। ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে রয়েছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ উদ্ধার ও তদন্তে কাজ করছে।"
মিমিয়া