ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চেকের মামলা থেকে মুক্তির আইনি পথ

প্রকাশিত: ১৯:১৭, ১২ জুন ২০২৫

চেকের মামলা থেকে মুক্তির আইনি পথ

ছবি: সংগৃহীত।

চেক প্রদান করে প্রতারিত হওয়া বা অনিচ্ছাকৃতভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়া বর্তমানে অনেকের বাস্তব সমস্যা। এ ধরনের ঘটনায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশে ‘চেক ডিজঅনার’ মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু আসামি হওয়া মানেই অপরাধী—তা নয়। কিছু সতর্কতা ও আইনি কৌশল অবলম্বন করে আপনি নিজেকে রক্ষা করতে পারেন।

আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, চেক ডিজঅনার মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থন এবং প্রতিরক্ষা গঠনের আগে প্রথমেই বুঝতে হবে আপনি কীভাবে আসামি হলেন। সাধারণত, আপনি কাউকে একটি চেক দিলেন, কিন্তু আপনার একাউন্টে পর্যাপ্ত অর্থ না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হলো। ফলস্বরূপ, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আইনি নোটিশ পাঠিয়ে আদালতে মামলা করলেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চেক বই ব্যবহার করলে কখনোই আগে থেকে স্বাক্ষর করা চেক ফেলে রাখা উচিত নয়। কারণ, চেক বই চুরি হলে অথবা অজান্তে অন্যের হাতে গেলে, তাতে নিজের নাম বা টাকার অঙ্ক বসিয়ে যেকেউ আপনার বিরুদ্ধে মামলা করতে পারে।

এছাড়া তৃতীয় পক্ষের জন্য চেক দেওয়াও বিপজ্জনক। যেমন, কারও ঋণের জিম্মাদার হয়ে আপনি যদি চেক দেন, তখন মূল ঋণগ্রহীতা না হয়ে আপনাকেই চেকের দায় বহন করতে হতে পারে।

চেক বই হারিয়ে গেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকে অবহিত করতে হবে। সম্ভব হলে চেক নম্বর উল্লেখ করে একটি আবেদন করতে হবে। এরপর সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করে সেই কপি ব্যাংকে জমা দিতে হবে। এতে করে পরবর্তীতে কেউ সেই চেক ব্যবহার করে টাকা তোলার চেষ্টা করলে তা রোধ করা সম্ভব হবে।

আপনার বিরুদ্ধে যদি মামলা দায়ের করা হয়, তাহলে কয়েকটি আইনি দিক আপনার পক্ষে প্রতিরক্ষা গড়ে তুলতে পারে:—
চেকের মেয়াদ: চেক ইস্যুর তারিখ থেকে ছয় মাসের মধ্যে তা ব্যাংকে জমা না দিলে, সেটি বৈধতা হারায়। মামলার ক্ষেত্রে এটি আপনার পক্ষে যুক্তি হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।

নোটিশের সময়সীমা: চেক ডিজঅনারের পর এক মাসের মধ্যে আইনি নোটিশ পাঠাতে হয়। যদি এর পরে পাঠানো হয়, সেটিও একটি আইনি ত্রুটি।

সমঝোতার সুযোগ: নোটিশ প্রাপ্তির পর ৩০ দিনের মধ্যে আপনার সুযোগ থাকে সমঝোতার। সমঝোতা হলে মামলা রোধ করা সম্ভব।

মামলা দায়েরের সময়সীমা: নোটিশ পাঠানোর পর ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষকে মামলা দায়ের করতে হয়। নির্ধারিত সময়সীমার বাইরে মামলা হলে সেটি বাতিল হতে পারে।

আপনি যদি নিশ্চিত হন যে চেকটি চুরি হয়েছে বা জালিয়াতির মাধ্যমে ব্যবহার হয়েছে, তাহলে ব্যাংকের মাধ্যমে বিষয়টি স্পষ্ট করে প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে। জিডির কপি, ব্যাংকে আগেই করা অভিযোগ এসবই আপনাকে আইনি সহায়তা দিতে পারে।

চেক ডিজঅনার মামলায় রায় আসলে আদালত মূল টাকা ছাড়াও অতিরিক্ত জরিমানা বা তিন গুণ পর্যন্ত অর্থ দণ্ড দিতে পারেন। ফলে মামলা গড়ানোর আগেই সমঝোতা করা অনেক ক্ষেত্রে ভালো সিদ্ধান্ত।

চেক ডিজঅনার মামলায় অভিযুক্ত হলে হতাশ না হয়ে আইনি পরামর্শ গ্রহণ করুন এবং প্রতিরক্ষামূলক তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করুন। আর্থিক লেনদেনে সতর্কতা ও চেক ব্যবহারে সচেতনতা থাকলে এই ধরনের মামলার হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

সূত্র: https://tinyurl.com/5e967muy

মিরাজ খান

×