
.
অবশেষে ঈদুল আজহার ১০ দিনের ছুটির সমাপ্তি ঘটেছে। দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে কর্মজীবী মানুষ। যদিও কলেজ বাদে স্কুলসহ অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলতে আরও সময়ে লাগবে। কিন্তু সরকারি ও বেসরকারি অফিসগুলো আগামীকাল রবিবার থেকে খুলবে। সবাই পরিবার নিয়ে স্বস্তিতে কর্মস্থলে ফিরছে। তবে কিছুটা চাপ ছিল যমুনা সেতুর পশ্চিমে। এ ছাড়া সড়ক ও রেলপথে যাত্রীদের ভিড় থাকলেও নদীপথ ছিল ব্যতিক্রম।
শুক্রবার গাবতলী বাস টার্মিনাল ও আমিনবাজার এলাকায় ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানী ছাড়া ও রাজধানীতে প্রবেশ করা যাত্রীর সংখ্যা প্রায় সমান। বৃহস্পতিবার ভোরে ও রাতে কিছুটা চাপ থাকলেও দিনভর পরিস্থিতি ছিল স্বাভাবিক। দেশের বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে গিয়ে দেখা যায়, যাত্রীদের তেমন ভিড় নেই। বেশির ভাগ বাসেই যাত্রী অর্ধেকের মতো। কাউন্টার মাস্টাররা বলছেন, অনেকে এখনও ঢাকার বাইরে যাচ্ছেন, আবার ফিরেও আসছেন অনেকে।
গাবতলী বাস টার্মিনালে প্রবেশের শুরুতেই থাকা গ্রামীণ ট্রাভেলসের কর্মকর্তারা জানান, এখনো প্রচুর পরিমাণে লোকজন ঢাকার বাইরে যাচ্ছে। ভোরের দিকের বাসগুলোতে যাত্রীসংখ্যা একটু বেশি থাকে। এরপর সকাল দশটা থেকে মোটামুটি বিকাল পর্যন্ত যাত্রীর চাপ একটু কম থাকে। তবে বিকেল ও সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত গাড়িগুলোতে ঈদ ছাড়াও স্বাভাবিক দিনগুলোর মতোই যাত্রী আছে। এ ছাড়া দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে গাবতলী বাস টার্মিনালের সামনে সড়ক থেকে নির্দিষ্ট সময় পর পর বাসগুলো ছেড়ে যাচ্ছে। ৪০/৪৫ সিটের বাসগুলোতে ১৫-২০ জন করে যাত্রী রয়েছেন।
বাসের যাত্রী খবির আহমেদ বলেন, আমি একটি বাসায় কেয়ারটেকারের কাজ করি। ঈদে তো প্রায় সব ভাড়াটিয়ারা চলে গিয়েছিল বাড়িতে। ফলে বাড়ি পাহারা দিতে তখন আর মালিক ছুটি দেয়নি। এখন ভাড়াটিয়ারা আসতে শুরু করেছেন। তাই ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে।
এ দিকে আমিনবাজার সেতু পার হয়ে কিছু সময় পরপরই ঢাকায় প্রবেশ করছে বিভিন্ন কোম্পানির বাসগুলো। বাসগুলো আসার পথে বিভিন্ন গন্তব্যে যাত্রী নামালেও বেশি সংখ্যক যাত্রীদেরই আমিনবাজার সেতু পার হয়ে কাউন্টারগুলোর সামনে নামতে দেখা গেছে।
সকাল সাড়ে দশটার দিকে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা হানিফ এন্টারপ্রাইজের একটি বাস গাবতলী বাসস্ট্যান্ডের বিপরীত পাশে কাউন্টারের সামনে আসে। গাড়ির চালক দৈনিক জনকণ্ঠকে জানান, বৃহস্পতিবার রাতে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে মাত্র ঢাকায় আসলাম। বাস যাত্রী বোঝাই ছিল। আশুলিয়া, সাভারসহ বিভিন্ন গন্তব্যে তারা নেমেছে। তিনি আরও জানান, গত ২/১ দিন যাবৎ দিনাজপুর যাওয়ার সময়ও মোটামুটি ভালোই যাত্রী হচ্ছে।
বাসের যাত্রী নীরব হাসান বলেন, আসার সময় কোনো যানজটে পড়তে হয়নি। স্বাভাবিকভাবেই রাস্তা ফাঁকা ছিল, দূরের পথ হলেও দ্রুত আসা গেছে। আমাদের বাস ভর্তি যাত্রী ছিল।
প্রসঙ্গত, ঈদ উপলক্ষে সরকারি ছুটি আজ শনিবার পর্যন্ত হওয়ায় এখনও পর্যন্ত রাজধানীমুখী যাত্রা রয়েছে স্বস্তিকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ। মানুষজন আরও দুই তিন দিন আগে থেকেই রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছেন। আগামী ১৫ জুন থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মদিবস শুরু হবে।
শুক্রবারও কমলাপুরে ঢাকায় ফেরা মানুষের চাপ ॥ ঈদুল আজহার ছুটি কাটিয়ে ঢাকায় ফিরছে মানুষ। রেলওয়ের তথ্য মতে, শুক্রবার ফিরতি যাত্রার চতুর্থ দিন। সকাল থেকে কমলাপুর রেলস্টেশনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনের যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় দেখা গেছে। যাত্রীদের বেশিরভাগই পরিবারের সঙ্গে ঈদ আনন্দ ভাগাভাগি করতে গ্রামে গিয়েছিলেন। ঈদ উদ্যাপন শেষে তারা কর্মস্থলে ফিরছেন।
রেলস্টেশনে সরেজমিনে দেখা গেছে, কেউ এসেছেন সপরিবারে, কেউ একা। সবার সঙ্গে ছিল ব্যাগ, স্যুটকেস ও শিশুরা। রংপুর থেকে আসা যাত্রী সালমা আক্তার বলেন, ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েছিলাম, এখন ফিরতে হচ্ছে চাকরির কারণে। ভিড় একটু বেশি, তবে নিরাপদে এসেছি। নীলফামারী থেকে আসা আরেক যাত্রী হাসান জামিল বলেন, অফিস শুরু রবিবার। কিন্তু ফিরতি টিকেট শুক্রবারেরটা পেয়েছিলাম। তাই আগেভাগেই আসতে হয়েছে। কমলাপুর রেলস্টেশন ম্যানেজার সাজেদুল ইসলাম বলেন, সকাল থেকে ১০টা আন্তঃনগর ট্রেন কমলাপুরে ঢুকেছে। সব ট্রেন সঠিক সময়ে ও নির্বিঘ্নে গন্তব্যে পৌঁছেছে।
ঢাকামুখী মানুষের চাপ নেই সদরঘাটে ॥ পদ্মা বহুমুখী সেতু চালুর পরবর্তী যুগে পাল্টে গেছে সদরঘাটের চিরচেনা চিত্র। ঈদের আগে সেভাবে দেখা মেলে না আগের মতো ঘরমুখো মানুষদের। ঈদ পরবর্তী সময়ও নেই ঢাকামুখী মানুষের চাপ। বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার যাত্রীদের স্বাভাবিক আনাগোনা লক্ষ্য করা গেছে সদরঘাটে। নেই অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ, কিছু সময় পরপর আসা-যাওয়া করছে লঞ্চগুলো।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) সূত্রে জানা যায়, ঈদের সময়ে সদরঘাটে ৬০ থেকে ৭০টি লঞ্চ প্রতিদিন যাওয়া-আসা করছে। বছরের অন্য সময়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০টি লঞ্চ নিয়মিত চলাচল করে। এসব লঞ্চ ঢাকা-বরিশাল, ঢাকা-পটুয়াখালী, ঢাকা-ভোলা, ঢাকা-চাঁদপুরসহ কয়েকটি রুটে চলাচল করে।
শুক্রবার সরেজমিনে দেখা যায়, ঈদ পরবর্তী ধারণক্ষমতার এক-তৃতীয়াংশ বা অর্ধেক আসন ফাঁকা নিয়ে ঢাকা থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে ছেড়ে যাচ্ছে লঞ্চ। ঢাকায় আসার সময় মিলছে যাত্রী। তবুও ঢাকায় ফেরার সময় কখনো কখনো সম্পূর্ণ আসনও পূরণ হচ্ছে না।
লঞ্চ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদ ও বিভিন্ন ছুটির সময়ে তাদের কিছুটা লাভ হয়। বছরের অন্য সময়ে লোকসান গুনতে হয়। তারা বলছেন, এ ঈদে আবহাওয়া ভালো না থাকার জন্য লঞ্চে যাত্রী কম। শুক্রবার রাতে ও শনিবার যাত্রীর চাপ বাড়বে প্রত্যাশা লঞ্চ ব্যবসায়ীদের।
পটুয়াখালীগামী আরেক এমভি পূবালী-১২ তে ধারণক্ষমতা ৬৩৮ জন। যাওয়ার সময় ২৫০-৩০০ জন যাত্রী হচ্ছে তাদের। তবে ঢাকায় ফেরার সময় যাত্রী সংখ্যা ৫০০-এর মতো হলেও পূর্ণ হচ্ছে না আসন।
লঞ্চটির কর্মচারী আলাউদ্দিন বলেন, আমাদের লঞ্চের যাওয়া-আসায় মোট ৫ লাখ টাকা খরচ আছে। এখন সীমিত পরিমাণ লাভ হচ্ছে। এ ঈদে এখনো তেমন লাভের মুখ দেখিনি। জানা যায়, লঞ্চটিতে সোফা ৫০০ টাকা ও ডাবল বেডের কেবিন ২৫০০ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।