ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

অধিক তাপমাত্রায় হিটস্ট্রোকে খামারে মারা যাচ্ছে মুরগি, ঝুঁকিতে পোল্ট্রি খামারিরা

মনোয়ার হোসেন লিটন, কুড়িগ্রাম

প্রকাশিত: ১৩:১৮, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:২০, ১৪ জুন ২০২৫

অধিক তাপমাত্রায় হিটস্ট্রোকে খামারে মারা যাচ্ছে মুরগি, ঝুঁকিতে পোল্ট্রি খামারিরা

ছবি: কুড়িগ্রামে অধিক তাপমাত্রায় ব্রয়লার খামারে মরছে মুরগি; হরিশ্বর কালোয়া গ্রামে তোলা।

গত কয়েক বছরে পোল্ট্রি মুরগি উৎপাদনে ঝুঁকি বেড়েছে বহুগুণে। ফিড, বাচ্চা, ওষুধের দাম যেমন বেড়েছে, তেমনি বাজারজাতকরণেও বেড়েছে ভোগান্তি ও আর্থিক চাপ। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ—অতিরিক্ত তাপমাত্রা। বিশেষ করে গত বছর দেশে সর্বোচ্চ ৪৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়, যা পোল্ট্রি শিল্পের জন্য ভয়াবহ সংকেত হিসেবে দেখা দিয়েছে।

এই অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে উৎপাদন কমছে এবং হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে। পোল্ট্রি মুরগি পালনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ। নির্দিষ্ট মাত্রায় তাপমাত্রা না থাকলে মুরগির স্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। তাপমাত্রা বেড়ে গেলে মুরগি কম খায়, ওজন বাড়ে না এবং একপর্যায়ে হিটস্ট্রোকে মারা যায়।

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার হরিশ্বর কালোয়া গ্রামের পোল্ট্রি খামারি মেহেদী হাসান মিলন দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে এই খাতের সঙ্গে যুক্ত। তিনি বলেন, “ব্রয়লার মুরগি পালনে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখতে হয়। তার বেশি হলে সমস্যা শুরু হয়। মুরগির বয়স অনুযায়ী বিভিন্ন ধাপে তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়—বাচ্চার বয়স ১-৭ দিন হলে ৩২-৩৫ ডিগ্রি, ১৫-২১ দিন হলে ২৮-৩০ ডিগ্রি এবং ২২-২৮ দিন হলে ২৫-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস প্রয়োজন হয়।”

মেহেদী জানান, “প্রথম দিকে কিছুটা বেশি তাপমাত্রা প্রয়োজন হলেও ১৮ দিন পার হলে তাপমাত্রা বাড়লে ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। দিনে তাপমাত্রা অনেক বেশি হয়ে যায়। এতে হিটস্ট্রোকে মুরগি মারা যাচ্ছে। গত ১১ জুন আমার খামারে ২৫টি মুরগি মারা গেছে।”

তিনি আরও জানান, “বছরে নভেম্বর, ডিসেম্বর ও মার্চ মাসে কিছুটা স্বাভাবিক তাপমাত্রা পাওয়া যায়। জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে ঠান্ডা আর বাকি আট মাস তাপমাত্রা এত বেশি থাকে যে উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। গেল বছর আমার খামারে প্রায় ২০ লাখ টাকা লোকসান হয়েছে।”

এখন তিনি কনট্রাক্ট ফার্মিংয়ের মাধ্যমে খামার চালাচ্ছেন। তবে এই ব্যবস্থাতেও নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ওজন না হলে ক্ষতির মুখে পড়তে হয়।

পাশের এলাকার আরেক খামারি সাইফুল ইসলাম জানান, “৩০ ডিগ্রির নিচে তাপমাত্রা থাকলে মুরগির উৎপাদন ভালো হয়। এখনকার ৩৬-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় আমরা কোনোভাবেই মুরগিকে বাঁচাতে পারছি না। লেবুর পানি, স্যালাইন ও স্প্রে দিয়েও কোনো লাভ হচ্ছে না।”

কুড়িগ্রাম রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার বলেন, “বর্তমানে তাপমাত্রা ৩৫-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে উঠানামা করছে। আজ এবং কাল বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।”

এ বিষয়ে কুড়িগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, “বাংলাদেশ একটি উচ্চ তাপমাত্রার দেশ। অনেক সময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিরও বেশি হয়। আমরা খামারিদের পরামর্শ দিচ্ছি যেন খামার ছায়াযুক্ত জায়গায় তৈরি করে, ভালো ভেন্টিলেশন ও ফ্যানের ব্যবস্থা রাখে এবং নিয়মিত পানি ছিটিয়ে ঠান্ডা রাখে। আমরা নিয়মিত খামারিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছি।”

 

 

সানজানা

×