
ছবি: সংগৃহীত
একটি দেশের হৃদয় যদি হয় তার জনগণ, তবে সেই হৃদয়কে রক্তসঞ্চালন করায় যে ব্যবস্থা, তার নাম রাষ্ট্র। কিন্তু যখন সেই রাষ্ট্রের শিরায় শিরায় জমে ওঠে দুর্নীতি, বৈষম্য, দলবাজি আর অবিচার—তখন তাকে চিকিৎসা দরকার হয়। সময় এসেছে, আমরা বলি—রাষ্ট্রকে বাঁচাতে হবে। রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে আনতে হবে তার জনমুখী রূপে।
এই রাষ্ট্র তো আমরা গড়েছিলাম রক্ত দিয়ে—স্বপ্ন ছিল একটা মানবিক, সমানাধিকারের বাংলাদেশ। কিন্তু আজ সেই স্বপ্ন কি আমাদের চোখে আছে? না, আমরা ক্লান্ত, আমরা বিষন্ন। কারণ, আমরা দেখেছি দুর্নীতিবাজরা পায় পুরস্কার, আর সত্যবাদীরা হয় অপমানিত। আমরা দেখেছি—ভোট দিতে গিয়ে হারিয়েছি অধিকার, আর চোরের দল হেসেছে বিজয়ের হাসি।
এটা কি সেই রাষ্ট্র, যেটা আমরা মুক্তিযুদ্ধে চেয়েছিলাম? রাষ্ট্র সংস্কার কেন জরুরি?
আজকে মানুষ ভোটের দিন ঘর থেকে বের হয় না, কারণ সে জানে ফল আগেই লেখা। গরিব কৃষক ত্রাণের চাল পায় না, অথচ বিত্তবান নেতার গুদাম বোঝাই থাকে। পুলিশ, প্রশাসন মানুষের বন্ধু হওয়ার কথা ছিল—আজ তারা হয়ে গেছে ভয়ের নাম।
আদালত যেখানে শেষ আশ্রয়, আজ সেখানে বিচার হয় পয়সা আর পরিচয়ের ভিত্তিতে। এইভাবে একটা রাষ্ট্র টিকে থাকতে পারে না। এভাবে একটা জাতি বাঁচতে পারে না।
রাষ্ট্র সংস্কার মানে কী?
রাষ্ট্র সংস্কার মানে হচ্ছে— একটা এমন বাংলাদেশ,
যেখানে একজন রিকশাওয়ালার ভোট আর একজন মন্ত্রীর ভোটের মূল্য সমান।
যেখানে সরকারি চাকরি পেতে লাগে মেধা, অগ্রাহ্য থাকবে চিঠি বা চেনা লোক। যেখানে পুলিশ জনগণের নিরাপত্তার প্রতীক, ভয় নয়।
যেখানে আদালতের রায় দেখে গরীব মানুষও বলে—"আল্লাহর পরে ওখানেই ভরসা।"
রাষ্ট্র সংস্কার মানে—বাঁচার পথ খোঁজা
আমরা কি আরেকটা প্রজন্মকেও এই ভাঙা, দুর্বল, অসুস্থ রাষ্ট্র দিয়ে যাব?
না, আমরা বলব—এটাই সময়। এখন না বদলালে আর কখনো নয়।
রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে হবে। ক্ষমতার ভারসাম্য ফেরাতে হবে।
বিচার বিভাগকে স্বাধীন, নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করতে হবে।
প্রশাসনকে ফিরিয়ে দিতে হবে নিরপেক্ষতা।
দুর্নীতি করলে শাস্তি—তা সে যে-ই হোক না কেন!
আমরা কি পারি না একসাথে পরিবর্তন আনতে?
রাষ্ট্র সংস্কার কোনো রাজনৈতিক দলের একক কর্মসূচি নয়,এটা একটি জাতির আত্মসংঘাত।
এটা একটি বাবা-মায়ের স্বপ্ন, যারা চায় তাদের সন্তান থাকুক নিরাপদ রাষ্ট্রে। এটা একটি তরুণের আকাঙ্ক্ষা, যে চায় নিজের দেশে থেকেও উন্নত জীবনের নিশ্চয়তা। এটা সেই শহীদদের রক্তের প্রতি দায়, যারা গেয়েছিল—"এ দেশ আমার, এ দেশ তোমার।"
শেষ কথা
রাষ্ট্রকে আমরা ভালোবাসি।
তবে আজ রাষ্ট্র আমাদের ভালোবাসছে না।
চলুন, সেই ভালোবাসা ফিরিয়ে আনি।
চলুন, রাষ্ট্রকে গড়ি নতুন করে—মানবিকতা, ন্যায়বিচার ও গণতন্ত্রের ভিতর দিয়ে।
এটাই সময়। এটাই ইতিহাস গড়ার মুহূর্ত।
লেখকঃ
আল আমিন মিলু
আহ্বায়ক
গনঅধিকার পরিষদ
সরিষাবাড়ি উপজেলা শাখা
জামালপুর।
ফারুক