
ছবি: সংগৃহীত
ফুটবল বিশ্বের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফার ওপর চাপ বাড়াচ্ছে বিশ্বজুড়ে ক্রীড়াপ্রেমীরা। ২০২৫ সালের অনূর্ধ্ব-২০ বিশ্বকাপ থেকে ইসরায়েলকে বাদ দেওয়ার দাবিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে #RedCardIsrael প্রচারণা তুঙ্গে উঠেছে। গাজায় চলমান যুদ্ধ ও ফিলিস্তিনি নাগরিকদের বিরুদ্ধে ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে "মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ" আখ্যা দিয়ে এই পদক্ষেপ চাইছেন আন্দোলনকারীরা।
গত সপ্তাহে ফিফার জুরিখ সদর দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ করেছে শতাধিক কর্মী, যেখানে তারা দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় ফিফা কীভাবে দক্ষিণ আফ্রিকাকে নিষিদ্ধ করেছিল তার ঐতিহাসিক উদাহরণ টেনে আনেন। "১৯৭৬ সালে ফিফা বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আজ আমরা চাই ফিলিস্তিনি জনগণের পক্ষে একই নৈতিক অবস্থান নিতে," বলেন সুইডিশ কর্মী লিনা হামিদ, যিনি গাজায় রেড ক্রিসেন্টের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করেছেন।
এই আন্দোলন শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতেই সীমাবদ্ধ নেই। ব্রাজিল, ব্রিটেন ও মালয়েশিয়ার ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন ইতিমধ্যেই ফিফার কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দিয়েছে ইসরায়েলি ফুটবল ফেডারেশন (IFA) নিষিদ্ধ করার জন্য। ব্রিটিশ ফুটবলার মরিস রোশ বলেছেন, "ক্রীড়াঙ্গন কখনোই রাজনীতিনিরপেক্ষ নয়। যখন ফিফা রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করেছিল, তখন তারা একটি নৈতিক অবস্থান নিয়েছিল। ফিলিস্তিনি শিশুদের রক্ত কেন কম মূল্যবান?"
ইসরায়েলি ফুটবল ফেডারেশন এই অভিযোগগুলোকে "ক্রীড়াকে রাজনীতিকরণের অপচেষ্টা" বলে উড়িয়ে দিলেও, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের তথ্য বলছে অন্য কথা। তাদের প্রতিবেদনে দেখা গেছে, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় ১২০০+ ফুটবলারসহ ১৫,০০০-এর বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ফিলিস্তিনি ফুটবল ক্লাবগুলোর ৭০% স্টেডিয়ামই ধ্বংস হয়েছে বলে দাবি ফিফার সাবেক প্রেসিডেন্ট সেপ ব্ল্যাটারের, যিনি এখন ইসরায়েল নিষেধাজ্ঞার পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন।
ফিফার বর্তমান প্রেসিডেন্ট জিয়ান্নি ইনফ্যান্টিনো এখন চাপের মুখে। অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটি গোপনে একটি নৈতিকতা কমিটি গঠন করেছে এই ইস্যু পর্যালোচনা করতে। তবে ইসরায়েলের পশ্চিমা মিত্রদের কূটনৈতিক চাপও ফিফার ওপর কাজ করছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা।
ক্রীড়া আইন বিশেষজ্ঞ ড. অমিত গাঙ্গুলী সতর্ক করেছেন, "ফিফা যদি ইসরায়েলকে নিষিদ্ধ করে, তাহলে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মতো শক্তিশালী দেশগুলোর রোষানলে পড়তে পারে। কিন্তু যদি না করে, তাহলে বিশ্বজুড়ে কোটি ফুটবল ভক্তের কাছে তাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।"
এই বিতর্কের মধ্যেই ফিলিস্তিনি ফুটবলার মাহমুদ দারের করুণ গল্প ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। গাজায় ইসরায়েলি বোমা হামলায় তাঁর দুই পা হারানো ছোট ভাই এখনও বলছে, "যখন আমি কৃত্রিম পা পাব, তখন আবার ফুটবল খেলব।" এই ধরনের গল্পই #RedCardIsrael আন্দোলনকে নতুন শক্তি যুগিয়ে চলেছে।
শেষ কথা: ফিফার ইতিহাসে নৈতিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা আছে। কিন্তু ২০২৫ বিশ্বকাপের আগে তারা কি ইসরায়েলকে 'রেড কার্ড' দেখাবে, নাকি রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করবে? উত্তর হয়তো শুধু ফুটবল মাঠেই নয়, বিশ্ব বিবেকের কোর্টেই নিহিত।
তথ্যসূত্র: https://www.mintpressnews.com/fans-pressure-fifa-red-card-israel-2025/289998/
সাব্বির