
ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংশোধন সংক্রান্ত ভুল এখন যেন নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারো নামের বানানে সমস্যা, কারো বয়সে গড়মিল, কোথাও পিতামাতার নাম ভুল, আবার কোথাও তালাক হওয়ার পরও ‘স্বামীর নাম’ সার্ভারে থেকে গেছে—এমন অসংখ্য অভিযোগ প্রতিনিয়ত আসছে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে। এ সমস্যাকে ‘মহামারি’র সঙ্গে তুলনা করেছেন আইনজীবী অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন।
একটি ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন, ‘এনআইডি সমস্যাগুলো এখন এত বেশি যে এটা একটা মহামারি ব্যাধির মতো ছড়িয়ে পড়েছে। এনআইডি সংশোধনের জন্য যে প্রতিনিধিরা দায়িত্বে থাকেন, তাদের অনেকেই অর্ধশিক্ষিত বা দায়িত্বজ্ঞানহীন। ভুল তো হচ্ছেই, অনেকে এখন মনে করছেন ইচ্ছাকৃতভাবেও এসব ভুল করানো হচ্ছে।’
তিনি জানান, নিজেও ব্যক্তিগতভাবে এমন ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। কয়েক মাস আগে মেয়ের এনআইডি করতে গিয়ে তাকে ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সংশ্লিষ্ট কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিলেও, প্রতিনিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী যথাযথভাবে কাজ করেননি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘টাকা নেওয়ার পরও ফর্ম পূরণের সঠিক তথ্য তারা সংরক্ষণ করেনি। বরং এমন ভুল করেছে, যেটা আমাদের ঠিকানার ক্ষেত্রেই স্পষ্টভাবে দেখা গেছে।’
বেলায়েত হোসেন বলেন, মিরপুরের একটি স্কুলে ছবি তোলার দিনেও তার স্ত্রী ও কন্যাকে দীর্ঘ সময় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভুল সিরিয়ালে দাঁড়িয়ে থাকা, সঠিক নির্দেশনা না পাওয়া, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মীর নাম ফর্মে না থাকা—এসব মিলিয়ে অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়। ‘আমার স্ত্রী বলছিলেন, মেয়েদের নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হয়ে গিয়েছিল। সঠিক তথ্য না থাকলে সাধারণ মানুষের তো ভোগান্তি হবেই’, বলেন তিনি।
তবে এখানেই শেষ নয়। সংশোধনের পর মেয়ে যখন এনআইডি কার্ড ডাউনলোড করে নিয়ে আসে, তখন দেখা যায়, বাড়ির ঠিকানায় ভয়াবহ ভুল। ‘আমরা যেই বাড়িতে থাকি তার নম্বর এক, অথচ ওরা সেখানে তিন-চার ডিজিটের ভুয়া নাম্বার বসিয়েছে। এ ভুল কিভাবে সম্ভব হয়?’
তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, ‘আমার মতো সচেতন নাগরিকের সাথেই যদি এমনটা হয়, তাহলে দেশের সাধারণ মানুষের সাথেই বা কতটা হয়, সেটা সহজেই বোঝা যায়।’
আইডি সংশোধনের এই জটিলতায় ভোগান্তি শুধু সীমাবদ্ধ নয়। এর প্রভাব পড়ছে পাসপোর্ট নবায়ন, জমিজমার রেজিস্ট্রেশন, বিদেশে চিকিৎসা নিতে যাওয়ার মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজেও। ‘ভুল নাম থাকলে পাসপোর্ট মেলে না, চিকিৎসা বিলম্ব হয়, জমি রেজিস্ট্রি আটকে থাকে’, উল্লেখ করেন বেলায়েত হোসেন।
এই পরিস্থিতিতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সরকার ও নির্বাচন কমিশনের উচিত এসব দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিনিধিদের কাজের মান তদারকি করা এবং ভুক্তভোগীদের জন্য একটি স্বচ্ছ, দ্রুত ও সহজলভ্য সংশোধন ব্যবস্থা গড়ে তোলা। কারণ এনআইডি এখন শুধু পরিচয়পত্র নয়—এটি মানুষের মৌলিক নাগরিক অধিকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র মাধ্যম।’
কীভাবে সংশোধন করবেন?
এনআইডিতে ভুল থাকলে তা সংশোধনের জন্য স্থানীয় নির্বাচন অফিস, নির্ধারিত কাউন্সিলর অফিস বা অনলাইন পোর্টালের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। আবেদনপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সঠিক কাগজপত্র (যেমন: জন্মসনদ, এসএসসি সার্টিফিকেট, বিবাহবিচ্ছেদের ডিক্রির কপি ইত্যাদি) যুক্ত করতে হয়। অনলাইনে https://services.nidw.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে সংশোধনের আবেদন দেওয়া যায়।
সতর্কতা হিসেবে ফর্ম পূরণ করার সময় নিজে পড়ে দেখা, জমাদানকারীর নাম সংরক্ষণ এবং সিরিয়াল নম্বর সংক্রান্ত তথ্য যাচাই করা জরুরি। প্রয়োজনে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সচিব বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করাও সহায়ক হতে পারে।
জাতীয় পরিচয়পত্রে ভুল যেন নাগরিকদের জীবনে অভিশাপ না হয়ে দাঁড়ায়, সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন অ্যাডভোকেট বেলায়েত হোসেন। তার কথায়, ‘সাধারণ মানুষ যাতে আর হয়রানির শিকার না হয়, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।’
সূত্র: http://youtube.com/watch?v=dMGmQ8y2o9E
রাকিব