
ছবি: সংগৃহীত (নাসা)
রেডিও যোগাযোগে আকস্মিক বিঘ্ন, সামরিক রাডারে ভৌতিক সিগন্যাল—এইসব অদ্ভুত সমস্যা সৃষ্টি করে থাকে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের উপরের স্তরে গঠিত রহস্যময় ‘স্পোরাডিক-ই’ নামের একধরনের আয়নমণ্ডলীয় স্তর। এই স্তর ও তার আচরণ জানতেই এবার ক্ষুদ্রাকৃতির রকেট পাঠাচ্ছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।
মিশনের নাম SEED, লক্ষ্য ‘স্পোরাডিক-ই’ স্তর শনাক্তকরণ
নাসার এই মিশনের নাম ‘Sporadic-E ElectroDynamics’ বা সংক্ষেপে SEED। জুনের ১৩ তারিখ থেকে শুরু হওয়া এই তিন সপ্তাহের মিশনে মার্কিন প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের একটি প্রত্যন্ত দ্বীপপুঞ্জ কোয়াজালেইন অ্যাটল (Kwajalein Atoll), মার্শাল আইল্যান্ডস থেকে উৎক্ষেপণ করা হবে রকেট। এই রকেটগুলো হবে মনুষ্যবিহীন সাব-অরবিটাল যান, যেগুলোর সঙ্গে থাকবে বৈজ্ঞানিক পরিমাপক যন্ত্র।
রাডারে দেখা যায় ‘মেঘের মতো’ স্তর
এই স্পোরাডিক-ই স্তরগুলো সাধারণ চোখে দেখা যায় না, বরং শুধুমাত্র রাডার চিত্রেই ধরা পড়ে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এরা মেঘের মতো ছড়ানো থাকে, যাকে বিজ্ঞানীরা বলেন ‘blanketing Sporadic-E layer’। অন্য ক্ষেত্রগুলোতে স্তরগুলো ছোট ছোট প্যাচের মতো ছড়িয়ে থাকে।
কেন সমস্যা তৈরি করে এই স্তর?
এই স্তর মূলত পৃথিবীর আয়নমণ্ডলের নিচের অংশে গঠিত হয়। ফলে উপগ্রহ বা দূরবর্তী রেডিও সিগন্যাল উপরের স্তরে পৌঁছানোর আগেই প্রতিফলিত হয়ে আবার নিচে চলে আসে। এতে করে মাঝ আকাশের এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল, নৌ-যোগাযোগ এমনকি সামরিক রাডারেও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়।
উদাহরণস্বরূপ, বিমানচালক বা নৌচালকরা দূরের অঞ্চলের রেডিও সিগন্যাল পেয়ে তা কাছাকাছি উৎস বলে ভুল করেন। সামরিক ক্ষেত্রে, রাডারে দেখা যায় ভুয়া লক্ষ্যবস্তু বা, যা প্রকৃত শনাক্তকরণকে ব্যাহত করে।
কীভাবে তৈরি হয় এই স্পোরাডিক-ই স্তর?
বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, আয়নমণ্ডলে ধাতব আয়ন জমাট বাঁধলে এই স্তর তৈরি হয়। উল্কাপিণ্ড যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে, তখন পুড়ে গিয়ে তৈরি করে আয়নিত লোহা, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের কণিকা। এসব ধাতব আয়ন সাধারণ আয়নের চেয়ে ভারী হওয়ায় নিচের দিকে নেমে আসে, এবং কোনো কোনো সময় একত্রে ঘন হয়ে তৈরি করে এই রহস্যময় স্তর।
ভবিষ্যতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা
SEED মিশনের প্রধান গবেষক ড. অরোহ বরজাতিয়া বলেন, ‘এই স্তরগুলোর গতিবিধি, গঠন ও অদৃশ্য রূপান্তর যোগাযোগ প্রযুক্তির ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। তাই ভবিষ্যতে এগুলোর পূর্বাভাস দেওয়া গেলে বড় ধরনের সমস্যা এড়ানো সম্ভব হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এটা শুধু গবেষণার বিষয় নয়, এটা নিরাপত্তা, যোগাযোগ ও প্রযুক্তির ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।’
কেন কোয়াজালেইন অ্যাটল?
নাসা জানিয়েছে, পৃথিবীর ভৌগোলিক বিষুবরেখার সবচেয়ে কাছের অঞ্চল থেকে এই রকেট উৎক্ষেপণ করতে চাইলে কোয়াজালেইন অ্যাটলই সবচেয়ে উপযুক্ত স্থান। এখান থেকে রকেট ছুড়ে এই স্তরগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত বোঝা সম্ভব হবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।
নাসার এই গবেষণাকে বিশ্লেষকেরা আখ্যা দিচ্ছেন একটি ‘যোগাযোগ নিরাপত্তার নতুন অধ্যায়ের সূচনা’ হিসেবে। এই মিশনের সফলতা ভবিষ্যতে বিমান, নৌ এবং সামরিক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সুনিশ্চিত ও নির্ভরযোগ্য করে তুলতে পারে।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব