
২০০৭ সালে উদ্বোধন করা বোয়িংয়ের ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলটি বিশ্ব বিমানচালনার ইতিহাসে নিরাপদ বিমানের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল। তবে একের পর এক প্রযুক্তিগত ত্রুটির অভিযোগ আর ছোট-বড় দুর্ঘটনা এই মডেলটির উপর শঙ্কার ছায়া ফেলেছে। গুজরাটের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ২৪২ জন আরোহীর মধ্যে অধিকাংশের মৃত্যুর ঘটনাটি ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
ড্রিমলাইনার বিমানটি তৈরির সময় বোয়িং দাবি করেছিল, এটি বিশ্বের সবচেয়ে নিরাপদ বিমান, যার দু’টি রোলস রয়েস ইঞ্জিন যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনাকে প্রায় শূন্যে নামিয়ে আনে। কিন্তু ২০০৯ সালেই মাঝ আকাশে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে প্রথমবারের মতো এই মডেলটির একটি বিমান আপৎকালীন অবতরণে বাধ্য হয়। এরপর নানা সময় বিভিন্ন যান্ত্রিক সমস্যায় পড়ে এই বিমান। আহমেদাবাদের দুর্ঘটনাজনিত বিমানটিও প্রায় ১২ বছর পুরনো।
বিমান সংস্থাটি গর্ব করে বলেছিল, ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার মডেলটি বিশ্বব্যাপী ১০০ কোটিরও বেশি যাত্রী নিরাপদে বহন করেছে, ১,১৭৫টির বেশি বিমান প্রায় ৫০ লক্ষ ফ্লাইট নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করেছে। তবুও এর ত্রুটিগুলো একাধিকবার হালকা নেয়া হয়নি। বিশেষ করে লিথিয়াম-আয়ন ব্যাটারির ব্যর্থতা ও হাইড্রলিক ব্যবস্থার সমস্যা নিয়ে এক যুগ আগে থেকেই সতর্কতা ছিল।
বিমান নির্মাণের গোপনীয়তা ফাঁস করা বোয়িংয়ের প্রাক্তন ইঞ্জিনিয়ার স্যাম সালেফোর অভিযোগ, দ্রুত বাণিজ্যিক উৎপাদনের চাপে বোয়িং প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা ও মান বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ৭৭৭ ও ৭৮৭ মডেল বিমানের নির্মাণে কেবল বাণিজ্যিক লাভের দিকেই বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে বলে তিনি জানান।
অতীতে বোয়িংয়ের ‘উত্তরসূরি’ ৭৩৭ ম্যাক্স-৮ বিমানের মতো ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনারেও এই ধরনের ত্রুটি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে আসেনি বলেই মনে করা হচ্ছে। আহমেদাবাদের ভয়াবহ দুর্ঘটনাটি এই তত্ত্বকে আরও প্রমাণ করে দিল। এখনো দুর্ঘটনার সঠিক কারণ নির্ণয়ে তদন্ত চলছে।
মিমিয়া