
ছবি: সংগৃহীত
খেজুর তা ওজন কমাতে কার্যকর এবং দীর্ঘমেয়াদি রোগ এড়াতে সচেষ্ট ফিটনেস সচেতন মানুষদের কাছে দ্রুত জনপ্রিয় হয়ে উঠছে প্রাকৃতিক চিনি বিকল্প হিসেবে। খেজুরকে মানব ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন খাদ্য হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যার পুষ্টিগুণ এবং এতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন ও খনিজ উপাদান একে বিশেষভাবে মূল্যবান করে তুলেছে।
এই খেজুরের মধ্যেও আজওয়া খেজুর একটি বিশেষ জায়গা দখল করে আছে—যা শুধু প্রাচীন চিকিৎসা বিজ্ঞানেই নয়, আধুনিক স্বাস্থ্যচর্চাতেও ব্যাপকভাবে প্রশংসিত। “খেজুরের রাজা” নামে পরিচিত আজওয়া খেজুর শুধু এর সমৃদ্ধ স্বাদের জন্য নয়, বরং এর অসাধারণ ওষুধি ও পুষ্টিগুণের জন্য বিখ্যাত। রাতে ঠান্ডা দুধে ভিজিয়ে রেখে সকালে খালি পেটে এটি গ্রহণ করলে তা একটি প্রাণবন্ত ও স্বাস্থ্যকর পানীয়তে পরিণত হয়, যা শরীরকে শক্তি, আনন্দ ও উদ্দীপনা দেয়।
১. হাড় শক্ত করে
দুধ যেভাবে হাড়ের গঠন ও স্বাস্থ্য রক্ষায় কাজ করে, ঠিক তেমনি খেজুরে থাকা ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম একে আরও কার্যকর করে তোলে। দুধের সঙ্গে খেজুর খেলে শরীরে প্রয়োজনীয় খনিজ পৌঁছে, ফলে হাড় হয় আরও মজবুত ও সুস্থ।
২. হজমক্ষমতা বাড়ায়
এশিয়ান হাসপাতালের প্রধান ডায়েটিশিয়ান কোমল মালিক বলেন, “খেজুরে থাকা ফাইবার হজমে সহায়তা করে। দুধের সঙ্গে খালি পেটে এটি খেলে হজমের জন্য উপযোগী একটি কম্বিনেশন তৈরি হয়, যা পেট ভালো রাখতে সাহায্য করে।”
সকালে ভেজানো আজওয়া খেজুর খাওয়া হলে তা একটি দুর্দান্ত ফাইবারের উৎস হিসেবে কাজ করে, যা হজম প্রক্রিয়া সহজ করে ও পেট পরিষ্কার রাখে। এতে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার দীর্ঘক্ষণ পেট ভরা অনুভব করায় এবং অতিরিক্ত খাওয়া রোধ করে।
৩. প্রাকৃতিক শক্তির উৎস
আজওয়া খেজুর একটি প্রাকৃতিক শক্তির উৎস, যা শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে প্রতিদিনের কাজে সক্ষম রাখে। এতে থাকা প্রাকৃতিক চিনি, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান শরীর ও মনের কর্মক্ষমতা বাড়ায়—কোনো কৃত্রিম শক্তির উৎস ছাড়াই।
৪. ভালো ঘুম নিশ্চিত করে
আকাশ হেলথকেয়ারের জ্যেষ্ঠ পরামর্শদাতা ও পরিচালক (গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি, হেপাটোলজি ও থেরাপিউটিক এন্ডোস্কোপি) ডা. শরদ মালহোত্র বলেন, “বর্তমানে অনিদ্রা একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। খেজুর ও দুধ একসঙ্গে খেলে ঘুমের মান ভালো হতে পারে।”
ভেজানো খেজুরে থাকা ভিটামিন A ও C শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং ঘুমের সময় বিভিন্ন রোগ ও সংক্রমণ প্রতিরোধে সহায়ক হয়।
৫. মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ায়
খেজুরে থাকা ভিটামিন বি৬ ও ম্যাগনেসিয়াম মস্তিষ্কের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে এবং মানসিক দক্ষতা বাড়ায়। রাতে ঠান্ডা দুধে ভিজিয়ে সকালে খাওয়া হলে আজওয়া খেজুর মস্তিষ্কের জন্য আরও উপকারী হয়ে ওঠে।
৬. পেশি গঠনে সহায়তা করে
সকালে ঠান্ডা দুধে ভেজানো আজওয়া খেজুর খেলে তা পেশি গঠনে সাহায্য করে।
এই অসাধারণ সংমিশ্রণটি পেশির সুস্বাস্থ্য ও বৃদ্ধিতে সহায়ক।
৭. শক্তি জোগায়
ভেজানো আজওয়া খেজুরে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন A, K, E এবং B থাকে। এই ভিটামিনগুলো শরীরের সামগ্রিক বৃদ্ধি, ত্বক ও চোখের স্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও এতে থাকে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম, যা হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা ঠিক রাখে, শক্তি বাড়ায়, হজমে সহায়তা করে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
রাতে ভিজিয়ে সকালে ঠান্ডা দুধের সঙ্গে খেলে শরীর পায় প্রয়োজনীয় শক্তি। এটি শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ যেমন হৃদপিণ্ড ও যকৃত পরিষ্কার করতেও সাহায্য করে।
৮. হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখে
ঠান্ডা দুধে ভিজিয়ে খাওয়া আজওয়া খেজুরে থাকে প্রচুর পরিমাণে গুরুত্বপূর্ণ খনিজ, বিশেষ করে পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। এটি হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি হৃদরোগ প্রতিরোধেও ভূমিকা রাখে।
আবির