ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কৃষকের সার ছিনিয়ে নিচ্ছে শহরের ডিলাররা! ৯৬ হাজার কৃষকের দুর্ভোগ চরমে

রাজীব হাসান কচি, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ০১:২৯, ১৩ জুন ২০২৫

কৃষকের সার ছিনিয়ে নিচ্ছে শহরের ডিলাররা! ৯৬ হাজার কৃষকের দুর্ভোগ চরমে

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বিসিআইসি ও বিএডিসির ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয় কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে থাকলেও তারা নিয়ম না মেনে সার বিক্রি করছেন পৌর এলাকায়। এক ইউনিয়নের জন্য নির্ধারিত সার অন্য ইউনিয়নে বিক্রি করায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ক্ষেত্রবিশেষে তাদেরকে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে, আবার অনেক সময় সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে।

আলমডাঙ্গা উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিএডিসি ও বিসিআইসির মোট ৪৮ জন সার ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ জন ডিলার নিয়মবহির্ভূতভাবে পৌর এলাকায় বছরের পর বছর সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। গুদামে সার মজুত থাকলেও ডিলাররা সংকট দেখিয়ে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আবার অনেক সময় উত্তোলন না করেই ডিপোতে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিসিআইসির সার বিক্রির জন্য ১টি প্রতিষ্ঠান ডিলারশিপ পায়। পরবর্তীতে ইউনিয়নভিত্তিক ৩০টি ও পৌর এলাকায় ২টি বিএডিসি ডিলার অনুমোদন পায়। কিন্তু শুরু থেকেই অধিকাংশ ডিলার ইউনিয়নের বদলে পৌর এলাকায় কার্যক্রম পরিচালনা করছেন। নিয়ম অমান্য করে বছরের পর বছর পৌর এলাকায় অবাধে সার বিক্রি চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। কিছু ডিলার ইউনিয়নে সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে বৈধতা দেখানোর চেষ্টা করলেও কার্যত ব্যবসা পরিচালনা করছেন পৌর এলাকায়।

আলমডাঙ্গা উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ তুলনামূলকভাবে বেশি। ধান, গম, পাট, ভূট্টা, তামাক, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ফসল মৌসুমভিত্তিক আবাদ হয়। এসব ফসলে সার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া ১,৩৫০ টাকা, ডিএপি ১,০১৫ টাকা, টিএসপি ১,৩৫০ টাকা এবং এমওপি ১,০০০ টাকা হলেও, ডিলাররা কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে বেশি দামে বিক্রি করছেন বলে কৃষকদের অভিযোগ।

ফলে, ইউনিয়নের কৃষকদেরকে দূর-দূরান্ত থেকে পৌর এলাকায় এসে সার কিনতে হচ্ছে। পরিবহন খরচসহ প্রতিটি বস্তার পেছনে অতিরিক্ত ৫০ টাকা পর্যন্ত গুনতে হচ্ছে। ১০ বস্তা সার নিতে গেলে প্রায় ৫০০ টাকা পরিবহন খরচ হয়। অনেক সময় চাহিদামতো সার পাওয়া না যাওয়ায় ফসল উৎপাদনে বিঘ্ন ঘটে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৬,১২৭ জন তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। ৪৬টি ব্লকের আওতায় ২৯,৯০৫ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ হয়। কৃষি উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী জুন মাসে বিসিআইসি ও বিএডিসির ৪৮ জন ডিলারের মাঝে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কিছু কৃষক জানান, “ফসল চাষ করা বর্তমানে কঠিন হয়ে পড়েছে। হারদি ইউনিয়ন থেকে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায় গিয়ে সার কিনতে হয়। এতে বাড়তি খরচ হয়। অনেক সময় নির্দিষ্ট সময়ে সার না পেলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। আমরা চাই ডিলাররা যেন নিজ নিজ ইউনিয়নে ফিরে যান।”

অভিযুক্ত কয়েকজন ডিলার নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “আমরা ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার চেষ্টা করছি। গোডাউন পেলে সেটা সম্ভব হবে। আমরা সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করছি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে তার দায় তাকেই নিতে হবে।”

আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, “কৃষকরা যেন সহজে সার পান সে ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। ডিলাররা আস্তে আস্তে নিজ নিজ ইউনিয়নে ফিরে যাচ্ছেন। বেশি দামে সার বিক্রির অভিযোগ শুনলাম, কেউ যদি করেন তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, “ডিলাররা সময় চেয়েছেন, সময় দেওয়া হয়েছে। দ্রুতই তাদের নিজ এলাকায় ফিরে যেতে হবে। কেউ নিয়ম অমান্য করলে তাদের ডিলারশিপ বাতিলসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কৃষকের স্বার্থে কোনো অনিয়ম বরদাশত করা হবে না।”

মিমিয়া

×