ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১৪ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

আলমডাঙ্গায় ভোগান্তির শিকার কৃষক

ইউনিয়ন ডিলাররা সার বিক্রি করছেন পৌর এলাকায়

নিজস্ব সংবাদদাতা, চুয়াডাঙ্গা

প্রকাশিত: ২২:০৭, ১৩ জুন ২০২৫

ইউনিয়ন ডিলাররা সার বিক্রি করছেন পৌর এলাকায়

.

চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গায় বিসিআইসি ও বিএডিসির ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয় কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে হলেও সার বিক্রি করছেন পৌর এলাকায়। বেশিরভাগ ডিলার নিয়ম না মেনে তাদের ইচ্ছামতো সার বিক্রি করছেন। চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা পৌর এলাকা থেকে এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ক্ষেত্র বিশেষে বেশি দাম দিয়ে সার কিনতে হচ্ছে তাদের। অনেক সময় সার না পেয়ে ফিরে যেতে হয় কৃষকদের। আলমডাঙ্গা উপজেলার সকল ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় বিএডিসি এবং বিসিআইসির ৪৮ জন সার ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে ২৯ জন ডিলার নিয়ম না মেনে পৌর এলাকায় বছরের পর বছর সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। গোডাউনে থাকলেও কৃষকদের বলা হয় সার সংকট। নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে বেশি দাম দিলেই সার পাওয়া যায়। অভিযোগ রয়েছে, ডিলাররা অনেক সময় সার উত্তোলন না করেই ডিপোতে বিক্রি করে দেন। কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে ডিলাররা বছরের পর বছর অনিয়ম করেও পার পাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ১৯৯৫ সালে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার ১৫টি ইউনিয়ন ও পৌর এলাকায় ১টি প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির সার বিক্রির জন্য ডিলারশিপ পান। পর্যায়ক্রমে উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নে ৩০টি ও পৌর এলাকায় ২টি প্রতিষ্ঠান বিএডিসির সার ডিলার পায়। অবাক হলেও সত্য যে, সার বিক্রির ডিলারশিপ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো শুরু থেকেই ইউনিয়নের পরিবর্তে আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম পরিচালনা করছে। নিয়ম না মেনেই বছরের পর বছর বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান মালিকরা পৌর এলাকায় সার বিক্রি করে যাচ্ছেন। ডিলাররা এতটাই চতুর যে, ইউনিয়নে সাইনবোর্ড টানিয়ে ঘরের সামনে কয়েক বস্তা সার রেখে বৈধতা তৈরির চেষ্টা করেন। বিসিআইসি ও বিএডিসির সার ডিলারদের গুদাম এবং বিক্রয় কেন্দ্র নির্দিষ্ট ইউনিয়নে হলেও কার্যক্রম চালান পৌর এলাকায়। বেশিরভাগ সার ডিলাররা নিয়ম না মেনে তাদের ইচ্ছামতো সার বিক্রি করেন। পৌর এলাকা থেকে এক ইউনিয়নের সার অন্য ইউনিয়নে বিক্রি হওয়ায় কৃষকরা ভোগান্তির শিকার হন।
আলমডাঙ্গা উপজেলায় আবাদযোগ্য জমির পরিমাণ বেশি। ধান, গম, পাট, ভূট্টা, তামাক, সবজি, ফলসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল আবাদ হয় নিয়মিতভাবে মৌসুমে। ফসল চাষের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ হলো সার। কৃষকরা ইউরিয়া, টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সার ব্যবহার করেন। প্রতি বস্তা ইউরিয়া ১ হাজার ৩৫০ টাকা, ডিএপি ১ হাজার ১৫ টাকা, টিএসপি ১ হাজার ৩৫০ টাকা ও এমওপি ১ হাজার টাকা দরে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রির কথা থাকলেও কৃত্রিম সংকট দেখিয়ে বেশি দামে বিক্রি করেন ডিলাররা। ডিলাররা নির্ধারিত ইউনিয়নে সার বিক্রি না করায় কৃষকরা দূর-দূরন্ত থেকে পৌর এলাকায় সার কিনতে আসেন। অনেক সময় চাহিদার তুলনায় কম, কখনো সার না পেয়ে খালি হাতে ফিরে যান তারা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা যায়, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৯৬ হাজার ১২৭ জন তালিকাভুক্ত কৃষক রয়েছেন। ৪৬টি ব্লকের আওতায়  ২৯ হাজার ৯০৫ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়। প্রতি বছর চাহিদার তুলনায় বেশি ফসল উৎপাদন হয়। উপজেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ পৌর এলাকায় থাকা সার ডিলারদের স্ব স্ব ইউনিয়নে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেও তা এখনো বাস্তবায়ন হয়নি। ইউনিয়নের ১৫ জন বিসিআইসি সার ডিলারের মধ্যে ৯ জন ও বিএডিসির ৩০ জন সার ডিলারের মধ্যে ২০ জন আলমডাঙ্গা পৌর এলাকার বিভিন্ন পাড়া-মহল্লায় ব্যবসা পরিচালনা করছেন এখনো। তারা ইউনিয়নে সার বিক্রি করতে নারাজ। চলতি বছরের জুন মাসে আলমডাঙ্গা উপজেলায় বিএডিসি ও বিসিআইসির ৪৮ জন ডিলারের মাঝে চার রকমের রাসায়নিক সার বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৭০০ মেট্রিক টন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কৃষকরা জানান, ফসল চাষ করা বর্তমানে বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। সার কিনতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। হারদি ইউনিয়ন থেকে সার কিনতে আসতে হয় আলমডাঙ্গা পৌর এলাকায়। প্রতি বস্তা সার পরিবহনের জন্য ভাড়া দিতে হয় ৫০ টাকা করে। ১০ বস্তা সার নিলে ৫০০ টাকা ভাড়া গুনতে হয়। অনেক সময় সার পাওয়া যায় না। ফসলে নির্দিষ্ট সময়ে সার দিতে না পারলে উৎপাদন হ্রাস পায়। ডিলাররা সার বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দেন। আবার কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বেশি দামে বিক্রির অভিযোগও রয়েছে। আমরা সাধারণ কৃষকরা চাই ডিলাররা স্ব স্ব ইউনিয়নে ফিরে আসুক। তাহলে সকল সংকট দূর হবে। কৃষিতে প্রাণ ফিরে আসবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযুক্ত কয়েকজন সার ডিলার বলেন, আমরা ইউনিয়ানে ফিরে যাওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করছি। গোডাউন পেলেই সম্ভব হবে। কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে সার বিক্রি করছি। কেউ বেশি দামে বিক্রি করলে তার দায় তাকে বহন করতে হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রেহানা পারভীন বলেন, কৃষকরা সহজে সার পান সেই ব্যবস্থা গ্রহণ করছি কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে। ডিলাররা আস্তে আস্তে ফিরে যাচ্ছেন নিজেদের ইউনিয়নে। বরাদ্দ অনুযায়ী কৃষকরা সার পাচ্ছেন। বেশি দামে সার বিক্রির বিষয়টি আপনার কাছ থেকে শুনলাম। কেউ যদি বেশি দামে সার বিক্রি করেন তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
আলমডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মেহেদী ইসলাম বলেন, ডিলাররা সময় চেয়েছেন, সময় দেওয়া হয়েছে। দ্রুত তাদের ফিরতে হবে। যারা নিজ এলাকায় গিয়ে সার বিক্রি করবেন না তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। কৃষকদের সারের বিষয়ে কোনো অনিয়ম করার সুযোগ নেই।

প্যানেল

×