ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ১৫ জুন ২০২৫, ৩১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘এখনকার এআই অনিরাপদ’, ‘নিরাপদ এআই’ প্রকল্পের ঘোষণা দিলেন এআইয়ের ‘গডফাদার’

প্রকাশিত: ১৪:০৬, ১৪ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:০৮, ১৪ জুন ২০২৫

‘এখনকার এআই অনিরাপদ’, ‘নিরাপদ এআই’ প্রকল্পের ঘোষণা দিলেন এআইয়ের ‘গডফাদার’

ছবি: সংগৃহীত

বর্তমানে আমরা এআই বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক ‘বন্য পশ্চিমা’ যুগে বাস করছি—যেখানে প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো একে অপরকে টপকে দ্রুত ও আকর্ষণীয় এআই তৈরি করতে মরিয়া। এই প্রতিযোগিতায় নিরাপত্তার বিষয়টি প্রায়শই উপেক্ষিত হচ্ছে। ফলে তৈরি হচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ পরিস্থিতি।

এই প্রেক্ষাপটে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই জানায়, সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার একটি ফার্টিলিটি ক্লিনিকে বোমা হামলার অভিযোগে অভিযুক্ত দুই ব্যক্তি এআই ব্যবহারের মাধ্যমে বিস্ফোরক তৈরির নির্দেশনা সংগ্রহ করেছিল। যদিও তারা কোন এআই সিস্টেম ব্যবহার করেছিল তা প্রকাশ করা হয়নি।

এই ঘটনার মধ্যেই, এআই গবেষণার অন্যতম পথিকৃৎ কানাডার কম্পিউটার বিজ্ঞানী এবং টিউরিং পুরস্কারজয়ী প্রফেসর ইয়োশুয়া বেঙ্গিও ঘোষণা দিয়েছেন নতুন একটি ‘নিরাপদ এআই’ প্রকল্প—LawZero। এই অলাভজনক সংস্থা এমন একটি মডেল তৈরি করছে যাকে বলা হচ্ছে ‘Scientist AI’—যার লক্ষ্য হবে ‘সততা, স্বচ্ছতা ও নিরাপত্তা’।

‘সৎ’ এআইয়ের ধারণা

২০১৮ সালে বেঙ্গিও, ইয়ান লেকান ও জিওফরি হিনটন যৌথভাবে ডিপ লার্নিংয়ের গবেষণার জন্য টিউরিং পুরস্কার পান। এবার তিনি এমন এক মডেল তৈরি করতে চান, যেটি ‘সততা বজায় রাখবে, প্রতারণাপূর্ণ হবে না এবং নিজেই নিজেকে ব্যাখ্যা করতে পারবে’।

Scientist AI-এর বৈশিষ্ট্য:

  • এটি তার দেওয়া উত্তরগুলোর নির্ভরযোগ্যতা বা আত্মবিশ্বাসের মাত্রা জানাতে পারবে, ফলে ভুল তথ্য দেওয়ার ঝুঁকি কমবে।
  • এটি মানুষকে তার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করতে পারবে, যা বর্তমান অনেক এআই সিস্টেমে অনুপস্থিত।

আগের এআই মডেলগুলোতে এমন ব্যাখ্যামূলক ক্ষমতা থাকলেও, বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে ‘গতি’র পেছনে ছুটতে গিয়ে ডেভেলপাররা এই বৈশিষ্ট্য বাদ দিয়েছেন।

এআই বনাম এআই: নিজেদের নজরদারিতে নিজেরাই

বেঙ্গিওর মতে, Scientist AI শুধু নিজে সতর্ক থাকবে না, বরং অন্যান্য অনিরাপদ এআই মডেলের উপর নজরদারিও চালাতে পারবে—অর্থাৎ এআই দিয়ে এআই নিয়ন্ত্রণ। কারণ, কোটি কোটি ব্যবহারকারীর প্রতিদিনের অনুরোধ পর্যবেক্ষণ করা মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব, কিন্তু আরেকটি এআই মডেল এই কাজটি করতে পারে।

এআইকে বাস্তব বোঝাতে ‘বিশ্ব মডেল’ সংযুক্তি

এই প্রকল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন হলো ‘ওয়ার্ল্ড মডেল’। যেমন—মানুষ তার আশপাশের জগত সম্পর্কে বোঝাপড়ার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়, তেমনি এআইকেও বাস্তবতার কাঠামো বুঝতে হবে।

বর্তমান অনেক বড় ভাষাভিত্তিক মডেল যেমন ChatGPT, বাস্তব জগৎ বা পদার্থবিজ্ঞানের ধারণা না থাকায় ‘দাবার ভুল চাল’ বা ‘অবাস্তব তথ্য’ দেয়। অথচ সহজ ‘চেস বট’ও শুধু দাবা বোঝেই না, বিশ্বসেরা খেলোয়াড়দেরও হারায়—কারণ তার ‘বিশ্ব’ সীমিত হলেও বাস্তব।

পথটা সহজ নয়, তবু আশা আছে

LawZero ইতিমধ্যে ৩০ মিলিয়ন ডলার তহবিল পেয়েছে। তবে তুলনায়, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ঘোষিত ৫০০ বিলিয়ন ডলারের এআই প্রকল্পের পাশে এটা অতি ক্ষুদ্র।

আরেকটি বড় বাধা হচ্ছে তথ্য বা ডেটা সংগ্রহ। শক্তিশালী এআই তৈরির জন্য বিপুল ডেটার প্রয়োজন, যা আজ মূলত বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর দখলে।

এছাড়াও প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে—যদি Scientist AI নিজের নিরাপত্তা ও সততা বজায় রাখতে সক্ষম হয়ও, তাহলে এটি অন্য ক্ষতিকর এআই সিস্টেমকে কতটা ও কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে?

তবুও এই প্রকল্প একটি নতুন দিগন্তের পথ দেখাতে পারে, যেখানে এআই হবে মানবিক, স্বচ্ছ এবং নিরাপদ। যদি সোশ্যাল মিডিয়ার শুরুতেই এ ধরনের সতর্কতা নেওয়া যেত, তাহলে হয়তো তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আজ এতটা উদ্বেগ থাকত না।

ভবিষ্যতে যদি Scientist AI সফল হয়, তাহলে এআই ব্যবহারে একটি নতুন নৈতিক ও নিরাপত্তা মানদণ্ড গড়ে তুলতে পারে—যা প্রযুক্তি, গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।

 

(লেখক: আরমিন চিতিজাদেহ, লেকচারার, ইউনিভার্সিটি অব সিডনি; লেখাটি দ্য কনভারসেশন-এ প্রথম প্রকাশিত হয়)

 

সূত্র: এনডিটিভি।

রাকিব

×