
মনিপুরের ছোট্ট গ্রাম থৌবালের আওয়াং লাইকেই। এই গ্রাম থেকেই শুরু হয়েছিল ২২ বছর বয়সী এনগানথোই শর্মা কংব্রাইলাতপাম-এর স্বপ্নপথ। স্বপ্ন ছিল আকাশে উড়ার, গোটা বিশ্ব ঘুরে দেখার। সেই স্বপ্ন বাস্তব রূপ পেয়েছিল যখন তিনি ২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে এয়ার ইন্ডিয়ায় যোগ দেন এয়ার হোস্টেস হিসেবে।
কিন্তু মাত্র এক বছরের মাথায় সেই স্বপ্ন হারিয়ে গেল আগুনের ধ্বংসস্তূপে। আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের গ্যাটউইকের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া এয়ার ইন্ডিয়া AI171 ফ্লাইটটি উড্ডয়নের ৫৯ সেকেন্ডের মাথায়ই ভেঙে পড়ে, আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আর সেই বিমানে ছিলেন এনগানথোই।
বৃহস্পতিবার দুপুরে যখন পরিবারের কাছে দুর্ঘটনার খবর পৌঁছায়, তখন পুরো বাড়ি স্তব্ধ। পরিবারের সদস্যরা লাল টাইলের মেঝেতে হাঁটু গেড়ে বসে—কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েছেন, কেউবা পারিবারিক অ্যালবাম উল্টে এনগানথোইর ছবি খুঁজে ফিরছেন।
এক ভিডিওতে দেখা যায়, এনগানথোইর মা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, "আমার মেয়ে, আমার হাতে বড় করা বাচ্চা, কোথায় গেলি? আমি তোকে দেখতে চাই, প্লিজ কেউ আমার ফোনটা দাও। আমি ওর ছবি দেখতে চাই, আমি পাগল হয়ে যাচ্ছি।"
এনগানথোইর ছোট বোন গীতাঞ্জলি বলেন, "ও বলেছিল আজ লন্ডনে যাবে, ১৫ জুন ফিরবে। কিন্তু ইন্টারনেট না থাকায় ভিডিও কল হয়নি। ও মেসেজ করেছিল স্কুলে থাকতে—বলেছিল ফ্লাইটে থাকবে, যোগাযোগ করা যাবে না। পরে শুনি, আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ভেঙে পড়েছে। তখনই বুক কাঁপে—এটাই কি ওর ফ্লাইট?"
এখনো পর্যন্ত কোনো নিশ্চিত তথ্য না পেলেও এনগানথোইর ফোন রিং করছে, সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টও চালু। পরিবার এখনো অপেক্ষায়, হয়তো কোনো মিরাকল ঘটবে।
বিমানে মোট ২৪২ জন ছিলেন—তাদের মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ ও ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক। দুর্ঘটনার পর তীব্র আগুনে দগ্ধ হয়ে মরদেহ শনাক্তে ডিএনএ পরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “আহমেদাবাদের এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা আমাদের স্তব্ধ করে দিয়েছে। শব্দে প্রকাশের বাইরে বেদনা।”
এদিকে বিমানটির ব্ল্যাকবক্স উদ্ধার করা হয়েছে। তদন্তে সহায়তা করছে কেন্দ্র ও রাজ্য ফরেনসিক টিম।
মিমিয়া