ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে ডার্ক চকলেট! হৃদযন্ত্রের জন্য সুখবর দিল নতুন গবেষণা

প্রকাশিত: ০৮:১১, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০৮:১১, ২৫ মে ২০২৫

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে পারে ডার্ক চকলেট! হৃদযন্ত্রের জন্য সুখবর দিল নতুন গবেষণা

চকলেট খেতে ভালোবাসেন? এবার হয়তো আরও একবার হাতে তুলে নেবেন সেই ডার্ক চকলেটের টুকরোটি। কারণ, সাম্প্রতিক এক বৈজ্ঞানিক গবেষণায় উঠে এসেছে, ডার্ক চকলেট খেলে কমতে পারে উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশনের ঝুঁকি।

ব্রিটেনভিত্তিক জার্নাল Scientific Reports-এ প্রকাশিত এই গবেষণায় বলা হয়েছে, ডার্ক চকলেটের মধ্যে থাকা কিছু বিশেষ উপাদান আমাদের হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষ করে ‘এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন’, অর্থাৎ যেসব উচ্চ রক্তচাপের পেছনে নির্দিষ্ট কোনো কারণ থাকে না, সেগুলোর ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করতে পারে ডার্ক চকলেট।

হৃদরোগ নিয়ে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ
বর্তমানে হৃদরোগ বিশ্বজুড়ে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ। শুধু ২০১৯ সালেই প্রায় ৫২৩ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের কার্ডিওভাসকুলার রোগে আক্রান্ত হন। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি, আর মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি ছিল সেন্ট্রাল এশিয়া ও ইস্টার্ন ইউরোপে।

এই বিশাল রোগভার কমাতে চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা বহুদিন ধরেই হৃদরোগের ঝুঁকি কমানোর উপায় নিয়ে গবেষণা করছেন। এরই ধারাবাহিকতায় একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, ডার্ক চকলেটের মধ্যে থাকা প্রাকৃতিক ফ্ল্যাভানল যেমন ক্যাটেচিন, ইপিক্যাটেচিন ও প্রোসায়ানিডিন হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারী হতে পারে।

কীভাবে গবেষণাটি পরিচালিত হয়
গবেষকরা এই গবেষণায় ব্যবহার করেছেন ‘মেন্ডেলিয়ান র‍্যান্ডমাইজেশন’ নামক একটি পদ্ধতি, যেখানে জিনগত উপাত্ত বিশ্লেষণ করে কোনো খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে রোগের সম্পর্ক বোঝার চেষ্টা করা হয়।

ব্রিস্টলের এমআরসি ইন্টিগ্রেটিভ এপিডেমিওলজি ইউনিট থেকে পাওয়া প্রায় ৬৫ হাজার ইউরোপীয় অংশগ্রহণকারীর তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা ২১টি জেনেটিক ভ্যারিয়েন্ট খুঁজে পান, যেগুলো মানুষের ডার্ক চকলেট খাওয়ার প্রবণতার সঙ্গে জড়িত।

এরপর সেই তথ্য মিলিয়ে দেখা হয়, এসব ভ্যারিয়েন্টযুক্ত মানুষেরা কী পরিমাণে হৃদরোগের বিভিন্ন ধরনের ঝুঁকিতে রয়েছেন,যেমন হার্ট ফেলিউর, স্ট্রোক, করোনারি হার্ট ডিজিজ, অ্যাট্রিয়াল ফিব্রিলেশন, এমনকি হাইপারটেনশনও।

কী বলছে ফলাফল?
গবেষণায় সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে তথ্যটি উঠে এসেছে, তা হলো ডার্ক চকলেট খাওয়ার প্রবণতা যাদের বেশি, তাদের মধ্যে ‘এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন’-এর ঝুঁকি অনেকটাই কম। পাশাপাশি ভেনাস থ্রম্বোএম্বোলিজম (রক্ত জমাট বাঁধা)-এর ক্ষেত্রেও সামান্য নেতিবাচক সম্পর্ক পাওয়া গেছে, যদিও তা খুব শক্ত প্রমাণ নয়।

অন্য কোনো কার্ডিওভাসকুলার রোগের সঙ্গে ডার্ক চকলেট খাওয়ার উল্লেখযোগ্য কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি।

কেন কাজ করে ডার্ক চকলেট?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, ডার্ক চকলেটে থাকা ফ্ল্যাভানল জাতীয় উপাদান রক্তনালির প্রাচীরকে মসৃণ করে, রক্ত চলাচল সহজ করে এবং রক্তজমাট বাঁধা প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। এছাড়া এগুলোর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি গুণও রয়েছে। ফলে এসব উপাদান দীর্ঘমেয়াদে হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করতে পারে।

তবে বিজ্ঞানীরা সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, কেবল ডার্ক চকলেট খেয়েই উচ্চ রক্তচাপ রোধ করা সম্ভব নয়। বরং এটি হতে পারে একটি স্বাস্থ্যকর বিকল্প, বিশেষ করে যাঁরা উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাঁদের জন্য এটা চিপস বা কেকের মতো অস্বাস্থ্যকর স্ন্যাকসের জায়গা নিতে পারে।

সীমাবদ্ধতা
এই গবেষণার কিছু সীমাবদ্ধতাও রয়েছে। যেমন, এতে যে জিনগত তথ্য ব্যবহার করা হয়েছে তা ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত মানুষের ওপর ভিত্তি করে, ফলে এটি অন্য জাতিগোষ্ঠীর ওপর কতটা প্রযোজ্য তা নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না। এছাড়া, গবেষণায় ব্যবহৃত কিছু জিনগত ভ্যারিয়েন্ট সাধারণ মানদণ্ড অনুযায়ী শক্তিশালী না হলেও, তাদের পরিসংখ্যানগত গুরুত্ব ছিল যথেষ্ট।


ডার্ক চকলেট হৃদযন্ত্রের জন্য উপকারীএমন বার্তা নতুন নয়। তবে এই গবেষণা আরও একবার দেখিয়ে দিল, পরিমিত ডার্ক চকলেট খাওয়ার অভ্যাস হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে সহায়ক হতে পারে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী জীবনযাপন ও খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার পাশাপাশি ডার্ক চকলেটকে স্বাস্থ্যকর সঙ্গী হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে।

 

 

সূত্র:https://tinyurl.com/2vcjx4nb

আফরোজা

×