
প্রতীকী ছবি
হৃদ্রোগ নিয়ে ভাবলে আমরা সাধারণত হৃদ্রোগে আক্রান্ত হওয়ার দৃশ্য কল্পনা করি—বুকে ব্যথা, হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স, হাহাকার। কিন্তু জানেন কি, আমাদের দৈনন্দিন কিছু সাধারণ অভ্যাস নিঃশব্দে আমাদের হৃদয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে? ভয়ংকর ব্যাপার হচ্ছে—আমরা অনেক সময় সেটা বুঝতেই পারি না! তবে সুখবর হলো, এই ছোট ছোট অভ্যাসগুলো পরিবর্তন করা খুব একটা কঠিন না। চলুন জেনে নিই এমন ৭টি অভ্যাস, যেগুলো গোপনে আপনার হৃদয়কে ক্ষতিগ্রস্ত করছে, এবং কীভাবে সেগুলোকে সহজেই বদলানো যায়।
১. সকালে নাশতা না করা
অনেকেই মনে করেন সকালের নাশতা বাদ দিলে সময় ও ক্যালোরি বাঁচে। কিন্তু এটি হৃদ্যন্ত্রের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত নাশতা বাদ দেন, তাদের কোলেস্টেরল লেভেল ও হৃদ্রোগের ঝুঁকি বেশি থাকে। সকালবেলা না খেলে শরীর একধরনের 'স্টারভেশন মোড'-এ চলে যায়, যা রক্তে চিনির ভারসাম্য নষ্ট করে, প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ভবিষ্যতে হৃদ্রোগের আশঙ্কা বাড়ায়।
করণীয়: প্রতিদিন একটি হালকা নাশতা করুন। যেমন স্মুদি, বাদাম, কিংবা ওটমিল—যেকোনো কিছু যা সহজ ও পুষ্টিকর।
২. অতিরিক্ত মানসিক চাপ
চাপ আমাদের জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে—কর্মস্থলের ডেডলাইন, পারিবারিক সমস্যা, আর্থিক টানাপোড়েন। কিন্তু জানেন কি, দীর্ঘমেয়াদে এই চাপ আপনার হৃদয়কে ক্ষয়ে দিতে পারে? স্ট্রেসের সময় শরীর 'কর্টিসল' নামক একটি হরমোন নিঃসরণ করে, যা রক্তচাপ বাড়ায়, হার্টরেট বাড়ায় এবং প্রদাহ সৃষ্টি করে।
করণীয়: প্রতিদিন কিছু চাপ কমানোর কার্যকলাপ যুক্ত করুন—গভীর শ্বাস, ধ্যান, অথবা স্রেফ ১০ মিনিট হাঁটাও অনেক সাহায্য করতে পারে।
৩. অতিরিক্ত লবণ খাওয়া
প্রসেসড খাবার, ক্যানজাত স্যুপ ও রেস্টুরেন্টের খাবারে প্রচুর লবণ থাকে। অতিরিক্ত লবণ রক্তচাপ বাড়ায়, রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
করণীয়: খাবারের প্যাকেট দেখে সোডিয়ামের পরিমাণ পরীক্ষা করুন। রান্নায় লবণের পরিবর্তে মসলা ব্যবহার করুন।
৪. দীর্ঘ সময় বসে থাকা
ডেস্কে, সোফায়, অথবা গাড়িতে—আমরা সবাই দীর্ঘক্ষণ বসে থাকি। কিন্তু এটি শুধু পিঠের ক্ষতি করে না, হৃদ্র জন্যও ক্ষতিকর। এটি রক্ত সঞ্চালন কমায়, খারাপ কোলেস্টেরল বাড়ায় এবং হৃদ্রোগের সম্ভাবনা তৈরি করে।
করণীয়: প্রতি ৩০ মিনিটে একবার উঠে হাঁটুন বা স্ট্রেচ করুন। অফিসে বসে কাজ করলে স্ট্যান্ডিং ডেস্ক ব্যবহার করতে পারেন।
৫. কম ঘুম
রাতে ঠিকমতো না ঘুমালে উচ্চ রক্তচাপ, কোলেস্টেরল বৃদ্ধি এবং প্রদাহ হতে পারে—সবই হৃদ্রোগের পূর্বাভাস। ঘুমের অভাবে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে, যা ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়।
করণীয়: প্রতিরাতে ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানোর চেষ্টা করুন। ঘুমানোর আগে স্ক্রিন ব্যবহার কমান ও একটি নির্দিষ্ট রুটিন গড়ে তুলুন।
৬. অতিরিক্ত মদ্যপান
মাঝেমধ্যে এক গ্লাস ওয়াইন সমস্যা না করলেও অতিরিক্ত অ্যালকোহল রক্তচাপ বাড়ায়, অনিয়মিত হার্টবিট সৃষ্টি করে ও হৃদ্যন্ত্র দুর্বল করে।
করণীয়: পুরুষদের জন্য দিনে ২ গ্লাস ও নারীদের জন্য দিনে ১ গ্লাসের বেশি নয়। যদি কমাতে সমস্যা হয়, হার্বাল টি বা লেবু পানি পান করার চেষ্টা করুন।
৭. মানসিক স্বাস্থ্য উপেক্ষা করা
দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা উদ্বেগ বা বিষণ্ণতা হৃদ্যন্ত্রের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। স্ট্রেস, ঘুমের সমস্যা ও অলস জীবনযাত্রা—সবকিছুই হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
করণীয়: মাইন্ডফুলনেস, জার্নালিং, বা হাঁটাচলার মাধ্যমে মানসিক চাপ কমান। প্রয়োজনে মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিন।
মুমু