অন্য অনেক ফল শেষ হয়ে গেলেও এখনো বাজার ভর্তি লটকনে।
ক’দিন আগেও বিচিত্র ফল ছিল বাজারে। আম জাম লিচু কাঁঠাল সবই পাওয়া যেত। এখন বেশি চোখে পড়ছে লটকন। ফলের দোকান অথচ সেখানে লটকন নেই, এটা যেন ভাবাই যায় না! প্রতি বছর জ্যৈষ্ঠর রসালো ফল শেষ হতে না হতেই লটকন চলে আসে। এবারও ফলন ভালো। দেশের নানা প্রান্তে গাছ আছে। বর্তমানে প্রায় সব গাছেই ফল। এক গাছে এত ফল দেখে একটু অবাকই হতে হয়।
লটকনের স্বাদ টক এবং মিষ্টি। মানে দুটো একসঙ্গে। জ্যৈষ্ঠ থেকে একটানা সুমিষ্ট ফল খাওয়ার পর এখন এই স্বাদটা বেশ লাগছে। চাহিদাও তাই খুব বেশি। ঢাকার বিভিন্ন ফুটপাতে আলাদা করে লটকন বিক্রি হচ্ছে। পাওয়া যাচ্ছে পাড়া মহল্লার প্রবেশ পথেও। কেনার আগ্রহ এবং বিক্রির পরিমাণ দেখে এটিকে আর যেন তেন ফল ভাবা যায় না।
ভিন্ন স্বাদের পাশাপাশি লটকনে আছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। দিনে মাত্র দুই থেকে তিনটি ফল মুখে দিলে ভিটামিন সি’র চাহিদা পূরণ হয়ে যায়। আছে ভিটামিন বি’র উপস্থিতি। খনিজ উপাদান আছে। এসব উপাদান শরীরের জন্য ভীষণ উপকারী।
লটকনের বৈজ্ঞানিক নাম ইধপপধঁৎবধ সড়ঃষবুধহধ. একই ফলের অন্য নামগুলোর মধ্যে রয়েছে হাড়াফাটা, ডুবি, বুবি, কানাইজু, লটকা, লটকাউ এবং কিছুয়ান। হালকা হলুদ ফলের মোটা খোসা। খোসা ছাড়ালে নরম রসালো অংশ বের হয়ে আসে। এ অংশটি ২-৪টি বীজ দ্বারা বিভক্ত। বীজগুলো মুখে পুড়ে দাঁত দিয়ে সামান্য কামড়ে দিলে জিব রসে ভিজে যায়। টক মিষ্টি স্বাদটা এমনভাবে জিহ্বায় ছড়িয়ে পড়ে যে চোখ বন্ধ হয়ে আসে।
গাছের কথায় আসি। লটকন গাছ ৯-১২ মিটার উঁচু হয়। এর আছে পুরুষ এবং স্ত্রী জাত। আলাদা আলাদা ফুলও হয়। হলুদ ফুলের সুন্দর ঘ্রাণ। বাণিজ্যিকভাবেও চাষ হচ্ছে ফলটি। দেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়। বেশি হয় নরসিংদীতে। এ ছাড়া গাজীপুর, টাঙ্গাইল, নেত্রকোনা, সিলেট, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাটে বাণিজ্যিকভাবে লটকনের চাষ হচ্ছে। সেসব এলাকা থেকে চলে আসছে ঢাকার বাজারে। পাঠানো হচ্ছে বিদেশেও। মজার ব্যাপার হলো লটকন কিন্তু বুনো ফল! বনে পাহাড়ে হতো। ক্রমে লোকালয়ে এসেছে। আর কিছুদিন পাবেন। মৌসুম শেষ হওয়ার আগে চেখে দেখুন আরেকবার।