ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

জরায়ু মুখের ক্যান্সার

ডাঃ মোঃ ইয়াকুব আলী

প্রকাশিত: ০১:৪৫, ৩০ আগস্ট ২০২২

জরায়ু মুখের ক্যান্সার

জরায়ু মুখের ক্যান্সার

সাধারণত সব কোষ সুবিন্যস্ত পদ্ধতিতে বিভাজিত এবং কোষকলার স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করেঅবিন্যস্ত ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনে অস্বাভাবিক বৃদ্ধিপ্রাপ্ত কোষকলার প্লিহলো টিউমারএটি দুধরনের- বিনাইন ও ম্যালিগন্যান্টম্যালিগন্যান্ট টিউমারই হলো ক্যান্সারজরায়ু মুখের ম্যালিগন্যান্ট টিউমারটিকে বলে জরায়ু মুখের ক্যান্সার

 ক্যান্সারের সম্ভাব্য কারণ : ১৮ বছর বয়সের নিচে বিয়ে বা যৌন মিলন, বিভিন্ন জনের সঙ্গে যৌন মিলন বা গণিকাবৃত্তি, অপরিচ্ছন্ন জননেন্দ্রীয়, জননেন্দ্রীয়ের সংক্রামক রোগ, যেমন- হারপিস সিমপ্লেক্স ভাইরাস-টাইপ২ ও হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস, ২০ বছর বয়সের নিচে গর্ভধারণ ও মা হওয়া, ধূমপান ও নি¤œ আর্থ-সামাজিক অবস্থা

 রোগের লক্ষণ :  অনিয়মিত রক্তস্রাব, ঋতু বন্ধের এক বছর পরও রক্তস্রাব, যৌন সঙ্গমের পর রক্তস্রাব, যোনিপথে অধিক পরিমাণ বাদামি বা রক্তমাখা স্রাবের আধিক্য ও দুর্গন্ধযুক্ত সাদাস্রাবমনে রাখতে হবে, এসব লক্ষণের কোনটাই ক্যান্সার নিশ্চিতকরণের চিহ্ন নয়, তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ চিহ্ন দেখে চিকিসকরা পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায়, রোগটা কোন ধরনের এবং কোন অবস্থায় রয়েছে

 চিকিসা : ক্যান্সারের আগের স্তরের শুরুতেই যথাযথ চিকিসার মাধ্যমে রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ করে তোলা যায়ক্যান্সারের আগের স্তরে জরায়ু মুখের অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত কোষ বিভাজনের চিকিসা করা হয় ক্রাইওথেরাপির মাধ্যমেএ সময় প্রচ- প্রয়োগ করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করে দেয়া হয়ইলেকট্রোকোওয়াগুলেশন বা বৈদ্যুতিক প্রবাহের মাধ্যমেও প্রচ- উত্তাপ সৃষ্টি করে আক্রান্ত কোষকলা ধ্বংস করা যায়চিকিসার এ প্রক্রিয়ায় রোগীর সন্তান ধারণক্ষমতা অটুট থাকে

সার্জারি : ক্যান্সার যখন উপত্তিস্থলে সীমাবদ্ধ থাকে, তখন সার্জারি চিকিসা বেছে নেন অনেক বিশেষজ্ঞ চিকিসকএ চিকিসায় রোগীর সম্পূর্ণ জরায়ু অপসারণ করা হয়এ পদ্ধতিকে হিস্টারেক্টমি বলা হয়কখনও কখনও যোনিপথের উপরের অংশ এবং কাছের কোষকলা এবং লসিকাগ্রন্থি অপসারণ করা হয়, যাতে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষ দূরবর্তী স্থানে ছড়িয়ে না পড়েরেডিয়েশন থেরাপি : এ চিকিসার মূলভিত্তি হলো, বিকিরণের মাধ্যমে ক্যান্সারে আক্রান্ত কোষের ধ্বংস বা ক্ষতিসাধন করাঅনেক সময় এ চিকিসা পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয় টিউমারের প্রবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণ করতে বা ব্যথা কমানোর জন্যযখন ক্যান্সার আক্রান্ত সব কোষ সার্জারির মাধ্যমে অপসারণ করা যায় না, তখন সার্জারির পরে আবার রেডিয়েশন দেয়া হয়চিকিসা-পরবর্তীকালে করণীয় : সার্জারি বা রেডিয়েশন থেরাপির পর রোগীকে নির্দিষ্ট সময় পরপর পরীক্ষা করাতে হয়যৌনমিলন থেকে কিছুদিন অবশ্যই বিরত থাকতে হয়সব নিয়ম-কানুন যথাযথভাবে মেনে চললে চিকিসার দু-তিন মাসের মধ্যে রোগী স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারেন

প্রতিরোধ : বিবাহিত জীবন বা যৌন জীবনে প্রবেশ করা প্রত্যেক নারীকে অবশ্যই প্রতি তিন বছরে একবার শারীরিক কিছু পরীক্ষা করাতে হয়এ রোগের উপসর্গগুলো, যেমন- মাসিক অবস্থায় বা ঋতু বন্ধের পর অস্বাভাবিক রক্তস্রাব, স্রাব ইত্যাদি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে চিকিসকের পরামর্শ নিতে হবেএভাবে প্রত্যেক নারী যদি নিজের শরীর ও স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হন, তবে জরায়ু মুখের ক্যান্সারের জন্য কোন নারীকেই এর চরম মূল্য দিতে হবে নাক্যান্সারের সার্বিক প্রতিরোধ, সঠিক রোগ নির্ণয় ও উপযুক্ত চিকিসা পদ্ধতি গ্রহণ করে কালব্যাধি ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ করা যায়

 

লেখক : টিউমার ও ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ

রেডিয়েশন ও মেডিক্যাল অনকোলজিস্ট, অধ্যাপক ও প্রধান, অনকোলজি বিভাগ, এনাম মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল সাভার, ঢাকাচেম্বার : আল-রাজী হাসপাতাল, ঢাকা

 ০১৯১৫-৭২৮-২৬৬ ০১৭৪৫-৩৪৯-৪১৫

×