ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শিশু-কিশোরদের ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে জরুরি পুষ্টিগত সচেতনতা

প্রকাশিত: ১০:৩২, ২১ মে ২০২৫; আপডেট: ১০:৩৭, ২১ মে ২০২৫

শিশু-কিশোরদের ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে জরুরি পুষ্টিগত সচেতনতা

ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ ফ্যাটি লিভার রোগে আক্রান্ত, যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ। এই রোগটি শিশু ও কিশোরদের মধ্যেও আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছে। সাম্প্রতিক গবেষণাগুলো ফ্যাটি লিভার ও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতির মধ্যে সম্ভাব্য সংযোগ নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেছে।

ফ্যাটি লিভার হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে যকৃতে অতিরিক্ত চর্বি জমে। এর বিপজ্জনক দিক হলো- বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই রোগীর শরীরে কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। এটি প্রধানত দুই ধরনের হয়:

অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এএফএলডি) – যারা অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ করেন, তাদের মধ্যে দেখা যায়।

নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (এনএফএএলডি)- অ্যালকোহল গ্রহণ না করেও যারা আক্রান্ত হন।

ফ্যাটি লিভারের উপসর্গ হলো: দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি বা দুর্বলতা, পেটের উপরের ডান পাশে ব্যথা বা অস্বস্তি, অকারণে ওজন হ্রাস, ত্বক বা চোখে হলদে ভাব (জন্ডিস), পেট বা পায়ে পানি জমা, চুলকানি, বিভ্রান্তি বা মনোযোগের ঘাটতি (গুরুতর ক্ষেত্রে)।

ভিটামিন বি১২ (কোবালামিন) রক্তকণিকা তৈরি, ডিএনএ সংশ্লেষণ ও স্নায়ুর কার্যক্রমের জন্য অপরিহার্য। এটি মাংস, ডিম, ও দুগ্ধজাত পণ্যে পাওয়া যায়। এর ঘাটতি রক্তাল্পতা, স্নায়বিক সমস্যা এবং দীর্ঘমেয়াদে মস্তিষ্কের ক্ষতির কারণ হতে পারে।

২০২২ সালের একটি আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিডের ঘাটতি নন-অ্যালকোহলিক স্টিয়াটোহেপাটাইটিস (এনএএসএইচ) নামক উন্নত ফ্যাটি লিভার রোগের সঙ্গে যুক্ত। গবেষকরা আবিষ্কার করেন যে, শরীরে হোমোসিস্টেইন নামক অ্যামিনো অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে গেলে লিভারের গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন সিনট্যাক্সিন ১৭-এর কার্যক্রম ব্যাহত হয়, যা চর্বি বিপাককে বাধাগ্রস্ত করে এবং লিভার ক্ষতিগ্রস্ত করে।

তবে গবেষণায় আরও জানা গেছে, ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্ট দিলে সিনট্যাক্সিন ১৭-এর কার্যক্রম পুনরুদ্ধার হয় এবং অটোফ্যাগি (কোষ পরিচ্ছন্ন করার প্রক্রিয়া) সক্রিয় হয়। এর ফলে ন্যাশ-এর গতি কমে এবং যকৃতের প্রদাহ ও ফাইব্রোসিস হ্রাস পায়।

গবেষক ড. ব্রিজেশ সিং বলেন, "আমাদের এই গবেষণার ফলাফল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ও উৎসাহব্যঞ্জক, কারণ এতে বোঝা যায় যে স্বল্পমূল্যের ভিটামিন বি১২ ও ফলিক অ্যাসিড ব্যবহার করে ন্যাশ প্রতিরোধ বা বিলম্বিত করা সম্ভব।"

ডিউক-এনইউএস এর অধ্যাপক পল এম. ইয়েন বলেন, "ভিটামিন বি১২ ও ফলেটের মতো নিরাপদ ও সহজলভ্য সাপ্লিমেন্টকে প্রথম সারির চিকিৎসা হিসেবে বিবেচনা করা গেলে তা এনএএফএলডি রোগে বিশাল অর্থনৈতিক সাশ্রয় এবং স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস করতে পারবে।"

অধ্যাপক প্যাট্রিক কেইসি বলেন, "বর্তমানে লিভারের চূড়ান্ত পর্যায়ের ক্ষতির একমাত্র চিকিৎসা হলো প্রতিস্থাপন। এই গবেষণা প্রমাণ করেছে যে, একটি সাধারণ এবং সাশ্রয়ী হস্তক্ষেপ ফ্যাটি লিভারের ক্ষতি থামাতে বা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম।"

ফ্যাটি লিভার ও ভিটামিন বি১২-এর মধ্যে সরাসরি সংযোগের বিষয়টি এখন বৈজ্ঞানিকভাবে গবেষণাধীনে থাকলেও, প্রাথমিক ফলাফলগুলো ইতিবাচক। ভিটামিন বি১২ এবং ফলিক অ্যাসিড গ্রহণের মাধ্যমে এনএএফএলডি ও ন্যাস প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের নতুন পথ খুলছে, যা বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ রোগীর জন্য আশার আলো হয়ে উঠতে পারে।

মিরাজ খান

×